শ্রেনী থাকলে , শ্রেনী সংগ্রাম থাকবে , শ্রমিকশ্রেনীর
ঐক্য গড়ে তুলতে হবে – দীপক দাসগুপ্ত
দুর্গাপুর , ২৮শে মার্চ : আজ থেকে ইস্পাত নগরীর
১নং বিদ্যাসগর এভ্যিন্যুর বি.টি. রণদিভে ভবনের সংলগ্ন কমঃ দিলীপ মজুমদার নগর - কমঃ
এম.কে.পান্ধে ভবন – কমঃ বিনয় লাহিড়ী মঞ্চে শুরু হল দুর্গাপুর ইস্পাত ও মিশ্র ইস্পাত
কারখানার স্হায়ী শ্রমিক – কর্মচারীদের সংগঠন ঐতিহ্যবাহী হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ
ইউনিয়ন এর ২ –দিন ব্যাপি ৫৪ – তম বার্ষিকী সম্মেলন । সম্মেলন উপলক্ষ্যে ইস্পাতনগরী
সেজে উঠছে রক্তপতাকায় । বিগত শতাব্দীর ৬০ –এর দশকে উত্তাল দিনে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ
ইউনিয়ন ( সংক্ষেপে এইচ.এস.ই.ইউ ) এর পথ চলা শুরু । অতিক্রম করেছে রক্তাত ১৯৭২-৭৭ এর
দিনগুলি । বামফ্রন্ট সরকারের গৌরবময় ৩৪ বৎসরে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নয়া অর্থনৈতিক নীতির
বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলনের অগ্রনী এইচ.এস.ই.ইউ সারা ভারতে শ্রমিক আন্দোলনে
অন্যতম দিশারী , তথাকথিত ‘ পরিবর্তন ‘ এর জমনায় তৃণমূলীদের নগ্ন আক্রমনের শিকার হবে
, এ আর আশ্চর্যের কি ! তৃণমূলী দুষ্কৃতিদের একের পর এক হিংস্র শারীরিক আক্রমনের শিকার
হয়ছেন এইচ.এস.ই.ইউ এর নেতৃত্ব সহ সদস্যরা । ইউনিয়ন অফিস বি.টি.রণদিভে ভবনে আক্রমন করে
ভাঙ্গচুড় চালিয়েছে । তৃণমূলী দুষ্কৃতিদের গ্রেফ্তার করার বদলে তৃণমূলের দলদাসে পরিনত
পুলিশ এইচ.এস.ই.ইউ এর নেতৃত্ব সহ সদস্যদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা রুজু করেছে
। কিন্তু শত আঘাতেও টলানো যায় নি ইস্পাত শ্রমিকদের আপন সংগঠন এইচ.এস.ই.ইউ কে । বরং
এইচ.এস.ই.ইউ এর অসামান্য লড়াকু মনোভাব , দুর্গাপুর – আসানসোল শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনে
প্রেরনা জোগাচ্ছে । আজ হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সিআইটিইউ ) এর ৫৪ – তম বার্ষিকী সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে এইচ.এস.ই.ইউ
এর অসামান্য গৌরবজ্জ্বল সংগ্রামী ভূমিকা স্মরন করে দুর্গাপুরের লড়াকু ইস্পাত শ্রমিকদের
কূর্ণিশ জানালেন সি.আই.টি.ইউ এর রাজ্য সম্পাদক কমরেড দীপক দাসগুপ্ত । উদ্বোধনী ভাষনে
কমরেড দীপক দাসগুপ্ত বলেন যে জন্মলগ্ন থেকে সংকটাপন্ন পুঁজিবাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
পরে সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার বিস্তারে ভীত হয়ে কেইনসের অর্থনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতে যে
সোশ্যাল-ওয়েলফেয়ার স্টেটের নীতি গ্রহন করেছিল ১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ পূর্ব
ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির পতনের পরে , তা বাতিল করে চরম শোষন-বঞ্চনামূলক নয়া
উদার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের নীতি গ্রহন করে সরাসরি মুষ্টিমেয় ধনীদের স্বার্থে সমাজের
সম্পদ ব্যবহার করছে । ভারতে ১৯৯১ সাল নয়া উদার অর্থনীতির সূচনা করে মনমোহন থেকে মোদি
– ধনী ও কর্পোরেটদের সেবা করার নীতি নিয়েছে । ১৯৯১ সালে নয়া উদার অর্থনীতির সূচনার
সময়ের থেকে সি.আই.টি.ইউ সতর্ক করেছিল এবং লড়াই-ধর্মঘট
শুরু করে । এই সময় কালে নয়া উদার অর্থনীতির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় ১৩টি ধর্মঘট হয়ছে ।
বিগত দুটি সর্বভারতীয় ধর্মঘটে আই.এন.টি.ইউ.সি. যোগদান করেছে । সাম্প্রতিককালে কয়লা
শ্রমিকদের অভূতপুর্ব ঐক্যবদ্ধ ধর্মঘট বেতন-বৃদ্ধির জন্য ছিল না , ছিল দেশের কয়লা শিল্পকে
মোদি সরকারের দেশী-বিদেশী কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই । নয়া
উদার অর্থনীতির বিরুদ্ধে ভারতের শ্রমিকশ্রেনীর লড়াইকে ঐক্যবদ্ধ ও রাজনৈতিক লড়াইতে পরিনত
করতে হবে । এক্ষেত্রে , তিনি রাষ্ট্রায়ত্ব শ্রমিকদের ‘ শ্রমিক-আভিজাত্য ‘ সম্পর্কে
সতর্ক করে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক ও বেকার যুবদের সংগঠিত করার জন্য সংগঠিত শ্রমিক
আন্দোলনের দায়িত্বের কথা স্মরন করিয়ে দেন । তিনি বলেন যে নয়া উদার অর্থনীতির ভয়াবহ
পরিনতিতে ভারতের শ্রমিকদের ৯৩% অসংগঠিত ক্ষেত্রের । এরা নির্মম শোষনের শিকার । বর্তমানে
মোদি-সরকার আরও ব্যপকভাবে নয়া উদার অর্থনীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্র ও
সংগঠিত ক্ষেত্রকে ধ্বংস করতে চাইছে , চাইছে শ্রম-আইনের সংশোধন করে শ্রমিকদের দাসে পরিনত করতে । তাই লড়াই-ধর্মঘটের
রাস্তায় যাওয়া ছাড়া শ্রমিকশ্রেনীর আর কোন রাস্তা নেই । শ্রমিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি
সৃষ্টি করার জন্য বিশ্ব পুঁজিবাদ বস্তাপচা উত্তর-আধুনিকতা তত্বের মাধ্যমে শ্রেনীর পরিবর্তে
ব্যাক্তির ধর্ম-বর্ণ-ভাষার ভিত্তিকে বড় করে দেখিয়ে শ্রমিকশ্রেনীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি
করতে চায় । কিন্ত যতক্ষন শ্রেনী থাকবে , থাকবে শ্রেনী-বৈষম্য ও শ্রেনী-শোষন । তাই সি.আই.টি.ইউ
যথার্থভাবেই শ্রেনী দৃষ্টিভঙ্গীতে শ্রমিকশ্রেনীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর ।
অন্যদিকে , রাজ্যে মমতা ব্যানার্জী নেতৃত্বধীন তৃণমূল সরকারের তীব্র সমালোচনা
করে কমরেড দীপক দাসগুপ্ত বলেন যে ক্রমশঃ প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে যে আপদমস্তক দূর্নীতিগ্রস্হ
তৃণমূল মোদি-সরকারের জনবিরোধী নীতির পাশে আছে এবং সংসদে ভোট দিয়েছে । অন্যদিকে রাজ্যে
শ্রমিক-আন্দোলন ভাঙ্গার জন্য গুণ্ডা লেলিয়ে দিয়েছে এবং রাজনৈতিক কারনে দুর্গাপুর সহ
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার শ্রমিককে কাজের জায়গা থেকে উৎখাত করেছে । তাই সি.আই.টি.ইউ
কেন্দ্রের মোদি সরকারের জনবিরোধী ও শ্রমিক ঐক্য বিনাসকারী সাম্প্রদায়িক নীতির সাথে
সাথে রাজ্যে তৃণমূলের ফ্যাসিবাদি কায়দায় শাসন পরিচালনার বিরুদ্ধ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে
তুলছে । কমরেড দীপক দাসগুপ্ত সম্মেলনের সাফল্য
কামনা করে আগামীদিনে এইচ.এস.ই.ইউ কে রাজ্য
ও দেশ আসন্ন আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় সংগঠন গড়ে তোলার আহ্বান জানান । এছাড়াও সম্মেলনকে
অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ইস্পাত কর্মী ও প্রাক্তন সাংসদ ও অল ইন্ডিয়া
কোল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক কমঃ জীবন রায় ।
আজ সকালে , সম্মেলনের সূচনায় রক্তপতাকাদ্বয়
উত্তোলন করেন এইচ.এস.ই.ইউ এর সভাপতি কমঃ অজিত মুখার্জী এবং স্টিল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের(
এস .ডব্লু .এফ.আই ) এর সভাপতি ও সি.আই.টি.ইউ এর সর্বভারতীয় সম্পাদক কমঃ তপন সেন । শহীদবেদীতে
মাল্যদান করেন কমঃ অজিত মুখার্জী , তপন সেন , পি.কে.দাস , বিনেয়ন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী
, অরুন চৌধুরী , রাম পঙ্কজ গাঙ্গুলী , অর্ধেন্দু দাক্ষী প্রমূখ ।। উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের
ইস্পাত শাখা । সম্মেলনে আলোচনার
সম্মেলনে আলোচনার
জন্য রিপোর্ট পেশ করেন কমঃ অরুন চৌধুরী । বিভাগীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত ও ভ্রাতৃপ্রতিম
সংগঠনের ৮০০ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন । সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য
রেখেছেন আই.এন.টি.ইউ.সি এর পক্ষে রজত দীক্ষিত ও এ.আই.টি.ইউ.সি এর পক্ষে আমীর হায়দার
। সম্মেলনে এইচ.এস.ই.ইউ এর পক্ষ থেকে গত ২রা-৪ঠা ফেব্রুঃ মুচিপাড়া থেকে বার্ণপুর পর্যন্ত
পদযাত্রায় অংশগ্রহনকারীদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয় । প্রতিনিধিদের আলোচনা শুরু হয়ছে । আগামীকাল
সম্মেলন শেষ হবে ।