দুর্গাপুর,৯ই জুন
: তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ ফুরিয়ে আসতে চললেও
, নির্বাচনের সূচী ঘোষনার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না । আসলে , ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার
গঠিত হওয়া পরে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ভয়াবহ সন্ত্রাস চালিয়েও , তৃণমূল সিপিআই(এম) এর
গণভিত্তি ধ্বংস করতে পারে নি । তৃণমূলের প্রতি
মোহভঙ্গ হতে দুর্গাপুরের মানুষেরও বেশী সময় লাগে নি । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক
ইউনিয়নের স্বীকৃতি নির্বাচনে ( ২০১১ ) পরাস্ত হতেই তৃণমূল স্বমূর্তি ধরে । দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ( ২০১২
) থেকে যে কোন নির্বাচনে সন্ত্রাসই একমাত্র
তৃণমূলের ভরসা হয়ে দাঁড়ায় । সমবায় নির্বাচন
থেকে ক্রীড়া সংস্হার নির্বাচন , প্রহসনে পরিনত করে গায়ের জোড়ে দখল করা তৃণমূল অভ্যাসে পরিনত করে ফেলে
। ১৯৭২ সালের পর থেকে এরকম ভোটাধীকার লুঠ হওয়ার অভিজ্ঞতা দু্র্গাপুরের মানুষের ছিল
না । ২০১৪ সালের লোকসভার নির্বাচনের সময় তৃণমূলের ভোট-লুঠ চরমে ওঠে । মানুষ ফুঁসতে
থাকে । এমন কি তৃণমূলের সমর্থক ভোটারদের মধ্যে তৃণমূলের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মাতে শুরু
করে । এর প্রতিফলন দেখা যায় ২০১৫ সালে । দুর্গাপুর
ইস্পাত কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের স্বীকৃতি নির্বাচন , সি.আই.এস.এফ এর নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত
হয় । নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন তৃণমূলের ভয়ংকর সন্ত্রাসের মুখেও ইস্পাত শ্রমিকরা
ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে তৃণমূল কে পর্যদুস্ত করে পুনরায় হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ
ইউনিয়ন কে এক নম্বর ইউনিয়ন হিসাবে নির্বাচিত করে । এর পরে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে
ইতিহাস রচনা করে দুর্গাপুরের মানুষ । দুর্গাপুর ( পূর্ব ) ও দুর্গাপুর ( পশ্চিম ) দুটি
বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কে পর্যদুস্ত করে জয়ী করেন যথাক্রমে সি.পি.আই.(এম ) প্রার্থী
সন্তোষ দেবরায় ও জোট-প্রার্থী হিসাবে জাতীয় কংগ্রেসের বিশ্বনাথ পারিয়াল কে । বিধান
সভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে পৌরসভার ৪৩ টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ৪০টি ওয়ার্ডে বিপুল
ভোটে পিছিয়ে আছে ।
অকর্মণ্যতা ও দূর্ণীতির
নিরিখে তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশনের স্হান সবার ওপরে – এ
কথা মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে । মেয়র স্বয়ং গত বিধান সভা নির্বাচনে দুর্গাপুর ( পশ্চিম
) কেন্দ্র থেকে হেরেছেন । পূর্ববর্তী বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ডের বিপুল কাজের কোন তুলনায়
বর্তমান বোর্ড আসতে পারেছে না – এ কথা তৃণমূলের সমর্থকরা মানছে । জল-নিকাশী-রাস্তাঘাট
– আবর্জনা পরিষ্কার সহ সমস্ত পৌরসেবা বেহাল । কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা খরচ না করতে পারায়
টাকা ফেরৎ গেছে । ‘ স্মার্ট-সিটি ‘-র প্রতিশ্রুতি দুরে থাক , জেলা ভাগের নামে দুর্গাপুর
কে গুরুত্বহীন করে দেওয়ার দগদগে ঘা দুর্গাপুরে মানুষ কে বয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে । নতুন
শিল্পের সম্ভাবনা শেষ । একে কারাখানা বন্ধ হচ্ছে । টুঁটি চিপে ধরা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব
শিল্প কে ।এ ক্ষেত্রে মোদি সরকারের দোসর মমতা ব্যানার্জীর সরকার পিছিয়ে নেই – সে কথা
দুর্গাপুরে মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । শিল্পাঞ্চল বাঁচানোর লড়াই চালাচ্ছে লাল ঝাণ্ডা
ও যৌথমঞ্চ । দুর্গাপুর কে ‘শিল্প-হীন’ করার চক্রান্তে তৃণমূল-বিজেপি মিলেমিশে একাকার
হয়ে গেছে । তৃণমূলের রাজত্বে দুর্গাপুর এখন ‘ দুর্দশাপুর ‘ ।
এই অবস্হায় পরাজয়
একপ্রকার নিশ্চিত জেনে , যে কোন উপায় পৌর বোর্ডের দখল রাখার জন্য তৃণমূল মরিয়া হয়ে
উঠেছে । এক দিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌর বোর্ডে প্রশাসক বসিয়ে ‘পেছনের দরজা ‘ দিয়ে দখলের
রাস্তা নেওয়ার চেষ্টা চলছে । অন্যদিকে নির্বাচিত বাম কাউন্সিলর দের আর্থিক প্রলোভন
ও ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে । শাসক দলের দোসর
হিসাবে প্রশাসন ও পুলিশের একাংশ কাজ করছে ।
এই ঘৃণ্য চক্রান্তের
বিরুদ্ধে আজ বিকালে পার্টির ডাকে এক বিশাল মিছিল সিটি সেন্টারের শহীদ বিমল দাসগুপ্ত
ভবন থেকে শুরু হয়ে এস.ডি.এম দফ্তরে যায় এবং বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দেয় । সমাবেশ চলাকালীন
এস.ডি.এম এর কাছে এক স্মারক লিপি জমা দিয়ে অবিলম্বে এই চক্রান্ত বন্ধের জন্য দাবী জানান
পার্টি নেতৃবৃন্দ । নচেৎ এস.ডি.এম দফ্তরে লাগাতার বিক্ষোভ চলবে বলে পার্টি নেতৃবৃন্দের
পক্ষ থেকে প্রশাসন কে স্পষ্ট হুঁশিয়ারী দেওয়া হয় । আজকের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহাদেব
পাল , সন্তোষ দেবরায় , বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী , আল্পনা চৌধুরী ও পঙ্কজ রায় সরকার । স্মারক
লিপি জমা দেওয়ার আগে, সমাবেশে তা পাঠ করেন দুর্গাপুর পৌর নিগমের বিরোধী দলনেতা শিবশঙ্কর
চ্যাটার্জী ।