দুর্গাপুর,২৮শে ফেব্রুঃ
: গত দু বছর ধরে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের
যৌথ মঞ্চ লাগাতার লড়াই চালিয়ে আসছে । প্রায় ১৫০টি যৌথ কর্মসূচীতে হাজার হাজার শ্রমিক
সহ সাধারন মানুষ অংশ গ্রহন করেছেন । আজ যৌথ মঞ্চের ডাকে ইস্পাতনগরীর চন্ডিদাস বাজারে
প্রতিবাদ সভা কার্যতঃ জনসভার রূপ নিল । নজিরবিহীন ভাবে যৌথ মঞ্চের এই কর্মসূচীতে অংশ
নিয়ে বি.এম.এস অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট এর স্ট্র্যাটেজিক
বিলগ্নীকরন এর পোশাকি নামের আড়ালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট এর বিক্রির জন্য মোদি সরকারের
ঘৃণ্য অপচেষ্টার তীব্র বিরোধিতার ডাক দিয়েছে । তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আই.এন.টি.টি.ইউ.সি
ও এই কর্মসূচীতে যোগ দেয় । নতুন করে আসা বি.এম.এস ও আই.এন.টি.টি.ইউ.সি সহ কেন্দ্রীয়
ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের যৌথ মঞ্চ এর স্টিয়ারিং কমিটি আগামী ৩রা মার্চ সভা করে আন্দোলনের
নয়া কর্মসূচী গ্রহন করবে বলে সভায় ঘোষনা করা হয় । শ্রমিক আন্দোলনের এই ব্যপকতম ঐক্য
অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচাও আন্দোলন কে আরো শক্তিশালী করবে । স্বাধীন ভারতে শ্রমিক অধিকার রক্ষায় , দুর্গাপুরের ইস্পাত
শ্রমিকরা যে অন্যন্য সাধারন নজীর তৈরি করছে ,তা দেশ-কালের পরিধি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক
পরিচিতি লাভ করেছে । একই সাথে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প বাঁচাতে এবং জন্মলগ্ন থেকে এ.এস.পি ও ডি.এস.পি বাঁচাতে ও দেশের মধ্যে ইস্পাত
উৎপাদনে শীর্ষে পৌঁছাতে দুর্গাপুরের ইস্পাত
শ্রমিকরা অন্যবদ্য ভূমিকা পালন করেছে । বিগত এনডি-বিজেপি সময়ে যখন এম.এ.এম.সি – এফ.সি.আই-বি.ও.জে.এল
মত একটার পর একটা রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প বন্ধ হয়ে যায় , তখন দুর্গাপুরের ইস্পাত শ্রমিকদের যৌথ আন্দোলনের
ব্যারিকেড, এ.এস.পি কেনার জন্য আগত জিন্দাল গোষ্ঠী ও ডি.এস.পি –র ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট কেনার জন্য আগত বহুজাতিক সংস্হা এনরনের
প্রতিনিধিদের কারখানায় ঢুকতেই দেয় নি । যৌথ শ্রমিক আন্দোলন গড়ার ক্ষেত্রেও দুর্গাপুরের
ইস্পাত শ্রমিকরা সারা ভারতের মধ্যে পথিকৃৎ এর ভূমিকা পালন করছে ।অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট
বাঁচাও আন্দোলন এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ।
সংবাদপত্রে অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রির জন্য গ্লোবাল টেণ্ডারের ( এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট ) খবর
প্রকাশিত হতেই দুর্গাপুরে নতুন করে আশংকার মেঘ জমতে শুরু করেছে। বিগত দেড় বছরে বেশী
সময় ধরে রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইলের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদনকারী অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রির ( স্ট্র্যাটেজিক ডিসইনভেষ্টমেন্ট ) চেষ্টার বিরুদ্ধে ট্রেড
ইউনিয়ন সমূহের যৌথ মঞ্চ লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে । পাশে দাঁড়িয়েছেন দুর্গাপুর (
পূর্ব ) এর সি.পি.আই.( এম ) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়। প্রসংগত বিক্রির তালিকায় ছিল রাষ্ট্রায়ত্ব
ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইলের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদনকারী সালেম ( তামিলনাড়ু ) ও ভদ্রাবতী
( কর্নাটক ) স্টিল প্ল্যান্ট । কিন্তু প্রবল শ্রমিক আন্দোলনের চাপে সংশ্লিষ্ট রাজ্য
সরকার গুলি বেসরকারীকরনের তীব্র বিরোধিতা করতে বাধ্য হয় । বেগতিক দেখে মোদি সরকার পিছিয়ে
আসতে বাধ্য হয় । কেবল মাত্র অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রির জন্য গ্লোবাল টেণ্ডারের
( এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট ) আহ্বান করা হয়েছে । এখানেই প্রশ্ন উঠছে পঃ বঙ্গ সরকারের
ভূমিকা নিয়ে । ইতিমধ্যে দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর সি.পি.আই.( এম ) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়
ও রাজ্যে বাম পরিষদীয় দলনেতা সূজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপের
দাবি জানালেও কোন ফল হয় নি । ফলে দুর্গাপুরের মানুষের মনে কেন্দ্রের ভূমিকার সাথে সাথে
রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ জেগেছে ।
এই অবস্হায় ইস্পাত
শ্রমিক সহ দুর্গাপুরের মানুষের কাছে ঐক্যবদ্ধ
ভাবে সরাসরি রাস্তায় নেমে লড়াই করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই বলে সভায় বক্তারা জানিয়েছেন
। বক্তব্য রখেছেন যৌথ মঞ্চের যৌথ আহ্বায়ক বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী ( সি.আই.টি.ইউ
) ও বিকাশ ঘটক (আই.এন.টি.ইউ.সি ) ,শিবপ্রসাদ দাস ( বি.এম.এস ),রাজা চ্যাটার্জী (আই.এন.টি.টি.ইউ.সি),শম্ভূ
প্রামানিক ( এ.আই.
টি.ইউ.সি ),বিশ্বনাথ মন্ডল (এ.আই.
টি.ইউ.সি.সি ) , বিশ্বরূপ ব্যানার্জী প্রমূখ । সভাপতিত্ব করেন প্রবীন শ্রমিক নেতা রথীন
রায় ।