দুর্গাপুর,২৩শে জুলাই
: ২০১৫ সাল থেকে সাল থেকে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের শ্রমিকদের লড়াই চলছে কারখানা বাঁচাতে
,বেসরকারিকরন রুখতে । গড়ে উঠেছে ট্রেড ইউনিয়ন গুলির ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ, ‘অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট
বাঁচাও,দুর্গাপুর ইস্পাত বাঁচাও,দুর্গাপুর বাঁচাও’ কমিটি । প্রায় ২০০ টি কর্মসূচী পালিত
হয়েছে । ধর্মঘট হয়েছে । ৯২% শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন । কর্মসূচিতে কেবল শ্রমিক
বা শ্রমিক পরিবার নয়,অংশ নিয়েছেন দুর্গাপুরের সর্বস্তরের মানুষ । দৌড়ে অংশ নিয়েছেন
এমন কি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের খেলোয়াররা । খ্যাতনামা শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক
কর্মি-শিক্ষাবিদরা প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছেন । সেইলের এই বিশেষ উৎপাদনকারী সংস্হায়
প্রায় ৫০০ ধরনের ইস্পাত উৎপাদন হয় । যথার্থ অর্থে আলপিন থেকে এরোপ্লেন তৈরির জন্য ভারতের
প্রায় প্রতিটি শিল্প ক্ষেত্রে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের উৎপাদিত ইস্পাত অপরিহার্য কাঁচামাল
।দেশের সেবায় নিয়োজিত এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রের স্টিল প্ল্যান্ট
বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে ধান্দার পুঁজিবাদ কে মোদি সরকার সাহায্য করতে চাইবে – এতে
আশ্চর্য হওয়ার কি আছে ? কিন্তু বিস্মিত হচ্ছে মোদি সরকার । কারন একটা কারখানা কে ঘিরে
একটা গোটা জনপদের আবেগ এবং সেই কারখানার শ্রমিকদের প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা টানটান লড়াই
– যে লড়াই মোদি সরকারে রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রের বিলগ্নির অশ্বমেধের ঘোড়া কে লাগাম টেনে
ধরার স্পর্ধা দেখিয়েছে । এর আগে দুবার মোদি সরকার অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে বিক্রি করতে
চেয়ে ই.ও.আই ( এক্সপ্রেসন অফ ইন্টারেস্ট ) জারি করলেও,কেউ কেনার ‘আগ্রহ’ দেখাতে পারে
নি । কারন শ্রমিকরা কারখানার ধারেকাছে ‘ক্রেতাদের’ ঘেঁসতে দেন নি ।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে মোদি সরকার একশ দিনের
মধ্যে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রের ৫০টি কারখানা বিক্রি করতে চেয়ে নির্দেশ জারি করেছে
যার অন্যতম হল রাষ্ট্রায়ত্ব সেইলের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদনকারী অ্যালয় স্টিল সহ সালেম
ও ভদ্রাবতি স্টিল প্ল্যান্ট । উল্লে্যখযোগ্য,চন্দ্রযান-২ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে
সালেম প্ল্যান্টের বিশেষ ইস্পাত । তৃতীয়বারের জন্য মোদি সরকার অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্ট সহ সালেম ও ভদ্রাবতি স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রি করতে চেয়ে ই.ও.আই ( এক্সপ্রেসন
অফ ইন্টারেস্ট ) জারি করেছে ।সেইলের সর্বত্র বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। এর বিরুদ্ধে পথে
নেমেছে গোটা দুর্গাপুর । ‘অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট
বাঁচাও,দুর্গাপুর ইস্পাত বাঁচাও,দুর্গাপুর বাঁচাও’
কমিটির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনভাবেই অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রি করা
যাবে না । কেনার জন্য কোনভাবেই যাতে কোন ‘ইচ্ছুক ক্রেতা’ প্ল্যান্টের ধারেকাছে আসতে
না পারে,তার জন্য সতর্ক আছেন অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের শ্রমিকরা ।
কিন্তু এরমধ্যেও দুর্গাপুরের
মানুষ কে ভাবিয়ে তুলেছে দুটি ঘটনা । প্রথমতঃ,রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ‘নীরবতা’ । সালেম
ও ভদ্রাবতি স্টিল প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা সরব হয়েছেন
এবং প্রধানমন্ত্রী কে চিঠি দিয়ে বিরোধিতা করেছেন । কিন্তু মমতা ব্যানার্জী বিরোধীতার
কোন পদক্ষেপ এখনও করেন নি । তৃণমূল কংগ্রেসর শ্রমিক সংগঠন এখনও অবধি যৌথ আন্দোলনের
পাশে দাঁড়ায় নি ।অন্যদিকে দুর্গাপুরে সদ্য নির্বাচিত বিজেপি-র সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া,নির্বাচনে
প্রতিশ্রুতি দিলেও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বিক্রি রোখার কোন চেষ্টাই করেন নি । এর
আগে বাবুল সুপ্রিয় একই প্রতিশ্রুতি দিলেও,নির্বাচনের পর ‘বেপাত্তা’ । প্রথমে এলেও,বিএমএস
কারখানা বিক্রি বিরোধী যৌথ আন্দোলনের থেকে সরে এসছে ।
এই অবস্হায় ট্রেড
ইউনিয়ন গুলির ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ, ‘অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচাও,দুর্গাপুর ইস্পাত বাঁচাও,দুর্গাপুর
বাঁচাও’ কমিটি একগুচ্ছ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছে । আজ অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের মেইন
গেটে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গন-অনশনের কর্মসূচির সাথে বিক্ষোভ দেখানো হয়
। অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের শ্রমিকরা মিছিল করে এসে কর্মসূচিতে যোগ দেন । যোগ দেন দুর্গাপুর
ইস্পাতের শ্রমিকরা সহ ইস্পাত শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা । বক্তব্য রাখেন যৌথ মঞ্চের আহ্বায়কদ্বয়
বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী ও বিকাশ ঘটক, দুর্গাপুর(পূর্ব)-এর
বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় সহ সি.আই.টি.ইউ-আই.এন.টি.ইউ.সি-এ.আই.টি.ইউ.সি-টি.ইউ.সি.সি-এ.আই.ইউ.টি.ইউ.সি
এবং সারা ভারত গনতান্ত্রিক মহিলা সমিতির এর নেতৃবৃন্দ।