Sunday 13 April 2014

জনবিরোধী কং – বিজেপি অপাঙ্গতেয় , তৃণমূলের ৩৪ মাসের “পরিবর্তনের চুপকথায় “ ঢাকা যাচ্ছে না দগদগে ঘা , ইস্পাতনগরী দুর্গাপুরের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে ।

দুর্গাপুর , ১৩ই এপ্রিল : জন-বিরোধী কং-বিজেপির কার্যকলাপ সম্পর্কে  ইস্পাতনগরী দুর্গাপুরের অভিজ্ঞতা নতুন কিছু নয় । বিগত শতাব্দীর ৬০’এর দশক থেকে কংগ্রেসের এই জনবিরোধী স্বরূপ ইস্পাতনগরী দুর্গাপুর প্রত্যক্ষ করেছে । শহীদ আশীষ –জব্বরের স্মৃতি আজও অমলিন । কুখ্যাত সিদ্ধার্থশংকর রায়ের কালো জামানার ইস্পাতনগরীর পথে পথে শহীদদের মৃত্যুবরন চিরকালীন লোককথায় পরিনত হয়েছে । ৯০’এর দশকে কংগ্রেসের আমদানী করা নয়া উদারনীতিবাদের চোটে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল রুগ্ন হতে বসেছিল ।এনডিএ-বাজপেয়ী জমানায় অনুসৃত কংগ্রেসের সৃষ্ট নয়া উদারনীতিবাদ দুর্গাপুরের টুঁটি চেপে ধরে । বন্ধ হয়ে যায় এমএমসি-এফসিআইর মত রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্হাগুলি । রুগ্ন হতে শুরু করেছিল দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা – মিশ্র ইস্পাত কারখানা । উল্লেখ্য,নরসীমা রাও সরকার ও বাজপেয়ী সরকার – উভয়েরই মন্ত্রী ছিলেন পঃ বঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী । ইতিহাস বলে দুর্গাপুরের সেই সর্বনাশের দিনে , মিথ্যে স্তোকবাক্য ছাড়া তৃণমূল নেত্রীর কাছে থেকে আর কিছুই পাওয়া যায় নি । এনডিএ জমানার সেই কালো দিনে দুর্গাপুরের পাশে দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার । নতুন করে দুর্গাপুরের শিল্পাঞ্চলকে জীবনদান করে বামফ্রন্ট সরকার । বেসরকারী ক্ষুদ্র ইস্পাত শিল্প ও অনুসারি বিভিন্ন শিল্প সহ বিভিন্ন শিল্প গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা জোগায় । গড়ে ওঠে এডুকেশনাল হাব্ । প্রতিষ্ঠা হয় ইঞ্জীনিয়ারিং কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । সফটওয়ার শিল্পের বিশ্ব মানচিত্রে যুক্ত হয় দুর্গাপুর । শুরু হয় হেলথ্ সিটি ও এয়ারোট্রোপলিসের মত বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠার কাজ ।
    কিন্তু ‘পরিবর্তন’-এর জমানায় ইস্পাতনগরীতে নেমে এসেছে হতাশার ঘন অন্ধকার । মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছাড়া , কি পেলাম এই ৩৪ মাসে ? এই প্রশ্ন , আজ ইস্পাতনগরীর বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরছে । গত ৩৪ মাস ইস্পাতনগরী প্রত্যক্ষ করেছে প্রত্যক্ষ পুলিশি মদতে শাসক তৃণমূলের জল্লাদবাহিনীর একটানা সন্ত্রাস । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ৩৫০০ ঠিকাশ্রমিককে কাজের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করা হয় সিআইটিইউ-এর সদস্য হওয়ার অপরাধে । সিপিআইএম-এর নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপর চলেছে লাগাতার হিংস্র শারীরিক আক্রমন ও হুমকী । ভাঙ্গচূর করা হয়েছে  শহীদ আশীষ –জব্বার ভবন সহ বিভিন্ন সেক্টার অফিস এবং হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের দফ্তর বিটি রণদিভে ভবন । অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়ছে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সহ সাধারন বামপন্হী কর্মীদের । হামলার হাত থেকে রেহাই পায় নি মহিলা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ , সাংবাদিক এমন কি নির্বিরোধী সাধারন মানুষ । বেআইনীভাবে  দখল করেছে পিপলস কো-অপাঃ ব্যাঙ্ক , কনজিউমার কো-অপাঃ । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় চলছে স্হায়ী শ্রমিকদের হটিয়ে ঠিকাদারদের লাভবান করার জন্য কি কারনে তৃণমূলী নেতাদের “ অভিযান “ চলছে , তা বুঝে নিতে কষ্ট হচ্ছে না ইস্পাত শ্রমিকদের । ভয়ে কাঁটা  মহিলারা  সন্ধ্যা নামার আগেই বাড়ীমুখো হচ্ছেন । এমনকি দিনের বেলাতে , ছাত্রীদের অভিভাবকদের সাথে নিয়ে বেড়োতে হচ্ছে ! পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠছে অসমাজিক কার্যকলাপের ‘ ঠেক ‘ । দুষ্কৃতিবাহিনী বেআইনীভাবে দখল করেছে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অসংখ্য কোয়ার্টার , দখল করেছে ইস্পাতনগরীর প্রাচীনতম স্টীলমার্কেট পোষ্ট-অফিসের ঐতিহ্যমন্ডিত পুরনো বাড়ী । সমস্ত ইস্পাতনগরী জুড়ে বহু মুল্যবান গাছ কেটে নিয়েছে দুষ্কৃতিবাহিনী । শিবাজী রোডের ফুলবাগান কি এই তালিকায় নবতম সংযোজন হতে চলেছে ? ভবিষ্যৎই তার উত্তর দেবে ।
না । বিগত ৩৪ মাসের  পরিবর্তনের জমানার ‘ কালোকথার ‘ শেষ  হতে এখনও বাকী আছে । নতুন কোন শিল্প আসেনি , নতুন করে আসার কোন সম্ভাবনা অতি-উৎসাহীরাও শোনাতে পারছেন না । ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ১১টি কারখানা । বন্ধ হওয়ার আশংকায় দিন গুনছে আরও অনেকগুলি । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় আধুনিকীকরনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালে । কিন্তু ২০১৪ সালে এসেও সেই কাজ শেষ হয় নি । কবে শেষ হবে , তা ভবিষ্যৎই বলবে । শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছেন । বেকার যুবকদের ম্লান মুখ পাড়ার মোড়ে ভীঁড় বাড়িয়ে চলেছে অথবা কাজের আশায় অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছে ।
 হতাশার এই অন্ধকারে একমাত্র রূপালী ঝলক সেই  লাল ঝান্ডা যা ইস্পাতনগরীর স্বত্তায় ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ৬০’এর দশক থেকে । ইস্পাতনগরীর মানুষের মন থেকে যে লালঝান্ডকে মোঁছা যাবে না , তা বুঝতে পেরেই তৃণমূল সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে । কিন্তু সন্ত্রাসের ৩৪ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরে  সাধারন নির্বাচনের প্রাক্কালে যখন ইস্পাতনগরীর মানুষ প্রশ্ন করছে কি পেলাম , তখন তৃণমূলীরা পিঠটান দিচ্ছেন । ইস্পাতনগরীর বুকে বাইরে থেকে সমাজবিরোধী আনাগোনা বাড়ছে । ইতিমধ্যে  মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র সহ পুলিশের জালে ধরা পড়েছ  রঘুনাথপুর-মধুপল্লীর মিল্টন দাস নামে জনৈক তৃণমূলের নেতা সহ আরও চারজন কুখ্যাত অপরাধী । অন্যদিকে সন্ত্রাসের মুখে দাঁড়িয়ে অটল সিপিআইএম ও বামপন্হী গনসংগঠনের সদস্যরা বর্ধমান – দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট মনোনীত  সিপিআইএম  প্রার্থী কমরেড সাইদুল হকের সমর্থনে বাড়ী বাড়ী পৌঁছে গিয়েছেন । পার্টির ডাকে নির্বাচনী-তহবিলে অর্থ-সাহায্যের আবেদনে সারা মিলেছে বিপুল । বর্তমান সাংসদ কমরেড সাইদুল হক বিগত ৫ বৎসরে , দুর্গাপুর ও দুর্গাপুরের শিল্পাঞ্চলের অভাব-অভিযোগের কথা নিয়ে যে সংসদে  সোচ্চার ছিলেন , তা পার্লামেন্ট কমিটির দেওয়া হিসেবেই প্রমানিত । আবার , দুর্গাপুরের নিত্যনৈমিত্তিক আন্দোলনের চেনামুখ  সাংসদ কমরেড সাইদুল হক দক্ষতার সাথে সাংসদ তহবিলের অর্থ এলাকার উন্নয়নের কাজে ব্যয় করেছেন একথা নিন্দুকেরাও স্বীকার করছেন । তাই সবমিলিয়ে , কমরেড সাইদুল হকের সমর্থনে নির্বাচনী কর্মসূচীতে  ইস্পাতনগরী দুর্গাপুরে বুকে জনসমর্থনের ঢল নামছে ।
  আজ সকালে , ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি ( মার্কসবাদী )-র দুর্গাপুর জোনাল ১এ কমিটির আহ্বানে বর্ধমান – দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট মনোনীত  সিপিআইএম  প্রার্থী কমরেড সাইদুল হকের সমর্থনে এক বিশাল পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় । সিটি সেন্টার সংলগ্ন সেইল সমবায় আবাসনের মৌলনা আজাদ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয়ে কবিগুরু – ভগৎ সিং মোড় – চণ্ডীদাস – চণ্ডীদাস বাজার হয়ে শেষ হয় মহিষ্কাপুর এভিন্যুতে ।আদিবাসী লোকশিল্পীদের ধামস-মাদলে উত্তাল সবধরনের মানুষের এই  মিছিলে উল্ল্যখযোগ্য সংখ্যায় উপস্হিত ছিলেন মহিলা – ঠিকা শ্রমিক ও যুবরা । মিছিলে উপস্হিত ছিলেন কমঃ অজিত মুখার্জী , সন্তোষ দেবরায় , আল্পনা চৌধুরী ,সুবীর সেনগুপ্ত সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ।































No comments:

Post a Comment