Wednesday 5 August 2015

৫ই আগষ্ট , ২০১৫ - জানিয়ে দিল শহীদভূমি দুর্গাপুর হার মানেনি,হার মানতে জানে না ।

                                             


দুর্গাপুর, ৫ই আগষ্ট : আজ বিকালে, দুর্গাপুরের ঐতিহাসিক আগষ্ট আন্দোলনের ৫০-তম বার্ষিকী উদযাপন কমিটির এর ডাকে,শহীদ দিবসের ( ৬ই আগষ্ট ) প্রাক্কালে এক ঐতিহাসিক মিছিল জব্বর বাগ থেকে শুরু হয়ে আশীষ-জব্বর ভবন ছুঁয়ে ১নং বিদ্যাসাগরে বি.টি.রণদিভে ভবনে পৌঁছায় । মিছিলের শুরুতে ১৯৬৬ র আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছেন এমন ৫০ জন প্রবীন প্রাক্তন শ্রমিক , ৫০ জন যুব শ্রমিক ও যুবকের হাতে ৫০টি রক্তপতাকা তুলে দেন ,পরে দয়ানন্দ মোড়ে যুবরা পতাকা তুলে দেন ৫০ জন মহিলার হাতে এবং আই-সেক্টার মোড়ে মহিলারা ৫০ জন শ্রমিকের হাতে সেই পতাকা তুলে দিলে , শ্রমিকরা সেই ৫০টি রক্তপতাকা  ১নং বিদ্যাসাগরে বি.টি.রণদিভে ভবনে হিন্দুস্হান এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এর দফ্তরে বহন করে নিয়ে , সেখানে আবার প্রবীন নেতৃত্ব এর হাতে তুলে দিলে মিছিল শেষ হয় ।
৫ই আগষ্ট ,১৯৬৬ তে হিন্দুস্হান এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এর ডাকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ( সংক্ষেপে ডিএসপি ) শ্রমিকরা ডিএসপি র প্রশাসনিক ভবনে ( তখন ছিল আজকের জি.টি.রোড সংলগ্ন ওল্ড কোর্ট মোড়ে ) উৎপাদন বোনাস সহ বিভিন্ন দাবীতে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে জমায়েত হলে , সন্ধ্যা নামার মুখে , ডিএসপি কর্তৃপক্ষ ও রাজ্যে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের ঘৃণ্য পরিকল্পনায় , অন্ধ্র পুলিশ নামিয়ে , জমায়েতকে ঘিরে ধরে নৃশংস ভাবে লাঠি চার্জ শুরু করলে বহু শ্রমিক গুরুতর ভাবে জখম হয় ,লাঠির আঘাতে কমরেড আবদুল জব্বরের খুলি ফেটে যায় । ডিএসপি মেন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। এই খবর বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পড়লে ডিএসপি সহ সমগ্র দুর্গাপুরে অঘোষিত ধর্মঘট শুরু হয়ে যায় । পরের দিন রাণপ্রতাপ রোডে হরস্ শু মার্কেটে ( বর্তমানে আশীষ মার্কেট ) ধর্মঘটের সমর্থনে পিকেটিং চলাকালীন ,পুলিশ সরাসরি গুলি চালিয়ে হিন্দুস্হান এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এর যুগ্ম-সম্পাদক কমরেড আশীষ দাসগুপ্ত কে হত্যা করে । উত্তরে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ ও রাজ্যে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের অবর্ণনীয় অত্যাচারের সামনে বুক চিতিয়ে দুর্গাপুর লড়াই চালায় । দুর্গাপুর  ইস্পাত কারখানার বীর শ্রমিকরা ৮-দিন ব্যাপি লাগাতার ধর্মঘট করে ।  দুর্গাপুর ,পঃ বঙ্গ তথা স্বাধীন ভারতে এই আন্দোলন ঐতিহাসিক আগষ্ট আন্দোলন নামে পরিচিত , যে আন্দোলনে স্বাধীন ভারতে শ্রমিকশ্রেনীর সর্বপ্রথম ‘ ব্যারিকেড লড়াই ‘ এর মাধ্যমে শাসকশ্রেনীর কাছে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় । দুর্গাপুরের লড়াই সেখানেই থেমে থাকে নি । একে একে সর্বমোট ৩৪ জন শহীদের রক্তে দুর্গাপুরের লাল মাটি আরও লাল হয়েছে । বর্তমানে তৃণমূলের ভয়াবহ সন্ত্রাসে দুর্গাপুরে হাজার হাজার সিআইটিইউ সদস্য কাজ হারিয়েছেন , আক্রান্ত হয়ে শতাধিক গুরুতর জখম হয়েছেন সিআইটিইউ সহ বাম এ গনতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী-নেতৃত্ব,অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে । আজকে ইস্পাতনগরীর ঐতিহাসিক মিছিল , রক্তপতাকার প্লাবন জানিয়ে দিল ঐতিহাসিক আগষ্ট আন্দোলনের জন্মদাত্রী শহীদভূমি দুর্গাপুর হার মানেনি,হার মানতে জানে না । আজকের মিছিলে উপস্হিত ছিলেন ৬৬’ র আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব কমঃ রথীন রায় ,অজিত মুখার্জী , অর্ধেন্দু দাক্ষী সহ অন্যান্যরা ।
আগামীকাল  ৬ই আগষ্ট , শহীদ দিবস । দুর্গাপুরের প্রথম শহীদদ্বয় আশীষ-জব্বর সহ ৩৪ শহীদের স্মরণে সারাদিন ধরে ইস্পাতনগরীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে ।  দুর্গাপুরের ঐতিহাসিক আগষ্ট আন্দোলনের ৫০-তম বার্ষিকী উদযাপন কমিটির এর পক্ষ থেকে বর্ষব্যাপি অনুষ্ঠানের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে ।






No comments:

Post a Comment