দুর্গাপুর,৩০শে সেপ্টে : কেন্দ্রিয় সরকারে অধীনস্হ রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদন
সংস্হা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ( সেইল ) এর চেয়ারম্যান সোমা মণ্ডল জানিয়েছেন ২০২১-২২
আর্থিক বছরে সেইল এর আর্থিক লেনদেন এর পরিমান বার্ষিক ১ লক্ষ কোটি টাকা ( ১.০৩ লক্ষ
কোটি টাকা ) ছাড়িয়েছে। ফলে , সেইল বার্ষিক ১ লক্ষ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন করে ভারতের
এই রকম মুষ্টিমেয় কিছু কোম্পানীর “এলিট গ্রুপে
“ জায়গা করে নিয়েছে । ২০২০-২১ সেইল এর আর্থিক লেনদেন এর পরিমান ছিল বার্ষিক ৬৮৪৫২ কোটি
টাকা । ২০২১-২২ সালে ভারতের “ মহারত্ন “ সেইলের ইতিহাসে এ যাবত কালের মধ্যে সর্বকালীন সর্বোচ্চ
উৎপাদন- উৎপাদনশীলতা-বিক্রি ও মুনাফা হয়েছে। নিট মুনাফার পরিমান ১২০১৫ কোটি টাকা ছোঁয়,যা
সেইলের ইতিহাসে সর্বকালীন রেকর্ড । বিগত বছরের তুলনায় এই মুনাফার পরিমান তিন গুন এর
বেশী বৃদ্ধি পায় । কিন্তু সেইলের ৫৫ বছরের ইতিহাসে এই আনন্দঘন মুহুর্তে ,এই সাফ্যলের
অন্যতম কাণ্ডারী ইস্পাত শ্রমিকদের জীবনে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া । কারন শারোদৎসব এর
প্রাক্কালে বার্ষিক বোনাস পাওয়া কে ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় গভীর সংকটে পড়েছে রাজ্যে
সেইল এর তিন কারখানা যথাক্রমে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা,অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট সহ
সেইল-আরআইএনএল এর হাজার হাজার শ্রমিক – কর্মচারিবৃন্দ ও তাদের পরিবারবর্গ। করোনার অতিমারীর মধ্যেও দুর্গাপুর ইস্পাত
কারখানা সহ সেইলের শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারখানার উঁচু হারের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা
বজায় রেখে চাহিদা ও অর্ডারের যথাযথ জোগান বজায় রেখে চলে।মৃত্যু এসে শতাধিক শ্রমিকের
জীবন ছিনিয়ে নেয়। বেতন চুক্তি সহ বকেয়া বিভিন্ন বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সমাধানের বদলে ঝুলিয়ে রেখেছে।এর ফলে সেইল-আরআইএনএল
এর শ্রমিকদের মধ্যে যে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চারিত হয় । কিন্তু এরই মধ্যে শ্রমিকদের বার্ষিক
বোনাস,যা ‘পুজো বোনাস’ নামে শিল্পাঞ্চলে সমাধিক পরিচিত, গত ২৪শে সেপ্টেঃ (শনিবার) দিল্লিতে
অনুষ্ঠিত সেইল-আরআইএনএল এর কর্তৃপক্ষের সাথে ইউনিয়ন গুলির সাথে বার্ষিক বোনাস সংক্রান্ত
আলোচনা, কর্তৃপক্ষের একঁগুয়েমীর জন্য ভেস্তে
যায়। ফলে শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিষ্ফোরিত হয় । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা
সহ সেইলের সর্বত্র শ্রমিকরা প্রবল বিক্ষোভ আন্দোলন সামিল হয়েছেন। আজ নিয়ে ধারাবাহিক
পঞ্চম দিনেও বার্ষিক বোনাসের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায়।
সিআইটিইউ সহ ৭টি সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ আহ্বানে মিছিল করে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মুখ্য
প্রশাসনিক দপ্তরে গিয়ে বার্ষিক বোনাস-বেতন চুক্তি সহ বকেয়া বিভিন্ন দাবিতে ইস্পাত শ্রমিকরা
প্রবল বিক্ষোভ দেখায় ও অবিলম্বে বোনাসের ফয়সালার দাবি জানান।বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ সিআইটিইউ
সহ ৭টি ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সিআইটিইউ এর পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিশ্বরূপ
ব্যানার্জি ও প্রদ্যুৎ মুখার্জি । বক্তারা দাবি না মেটা পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন
চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ করেন ।
অন্যদিকে,
রাউরকেলা
ইস্পাত কারখানায়, সিআইটিইউ সহ সব কটি সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ আহ্বানে,এই দাবিতে
অভুতপূর্ব জমায়েতের ফলে বীরসা চক দীর্ঘক্ষন অবরুদ্ধ হয়ে পরে। এই খবর জানিয়ে স্টিল ওয়ার্কার্স
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া ( সিআইটিইউ )-এর পক্ষ থেকে ললিত মিশ্র জানিয়েছেন যে সেইলের সর্বত্র
বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিক্ষোভের ব্যপকতা আরো বাড়বে । সম্মানজনক বার্ষিক
বোনাসের দাবিতে সেইল শ্রমিকরা এককাট্টা হয়েছেন।শুধু তাই নয় বেতন-চুক্তি সংক্রান্ত মউ
( মেমোরাণ্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং) এর পুনরালোচনা চাইছেন শ্রমিকরা ।ট্রেড ইউনিয়ন
গুলিও পারস্পরিক এই বিষয়ে মত বিনময় করছে।কারন ইতিমধ্যেই দেখা গেছে মউ এর ফলে তরুন শ্রমিকদের
নিদারুন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। দ্রুত গতিতে বাড়ছে কেন্দ্রিয় রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা
সেইল ও আরআইএনএল-এ বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ঠিকা শ্রমিকদের সংখ্যা । সেইল ও
আরআইএনএল-এ বর্তমানে প্রায় ৮০,০০০ হাজার ঠিকা শ্রমিক কর্মরত আছেন । এই চুক্তিতে ঠিকা
শ্রমিকদের সম্পূর্ণ ভাবে বাইরে রেখে কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি চুড়ান্ত অসম্মান প্রদর্শন
করছে। এর প্রতিবাদে সেইল ও আরআইএনএল-এ ঠিকা শ্রমিকদের জোড়ালো আন্দোলন চলছে।বোনসের বিষয়ে
ইউনিয়নদের চাপে সেইল কর্তৃপক্ষ সার্কুলার জারী করলেও,প্রত্যেক ঠিকা শ্রমিকের বোনাসের বিষয়ে ঠিকাদারদের ওপরে নজরদারির
বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে বৃহৎ অংশের ঠিকা শ্রমিকের
বোনাস হয় না । প্রশ্ন উঠেছে সেইল কর্তৃপক্ষের অভিসন্ধি নিয়ে। শ্রমিকদের মধ্যে প্রশ্ন
জাগছে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্হার এই অভুতপূর্ব সাফল্যের দিনে শ্রমিকদের উৎসাহিত করার পরিবর্তে
শিল্পে অশান্তি সৃষ্টি করে কার স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে কর্তৃপক্ষ?