দুর্গাপুর,৩০শে মার্চ : আজ সকাল থেকে ইস্পাতনগরী সংলগ্ন গ্রাম ও বস্তি অঞ্চলে দুর্গাপুর
( পূর্ব )-এর সিপিআই-এম প্রার্থী আভাষ রায় চৌধুরীর কে সাথে নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চলে
। হাজরা পাড়া থেকে নির্বাচনী শোভাযাত্রা শুরু হয়ে যায় মহুয়া বাগান,শোভাপুর ও বিজড়া
গ্রামে । বিজড়া গ্রামের মাহালী পাড়ায় প্রচার শেষ হয় । উল্ল্যেখ্য এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক
উন্নয়নে অসামান্য পদক্ষেপ নেয় বিগত বামফ্রন্ট সরকার । বিগত ২০০৭ সালে বামফ্রন্ট সরকারের
সময়ে তৎকালিন দুর্গাপুর-১ বিধানসভার বিধায়ক ও পঃ বঙ্গের বিদ্যুৎমন্ত্রী প্রয়াত মৃণাল
ব্যানার্জীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় , ১০০ একর জায়গার উপরে তিনশো বেডের হাসপাতাল সহ মেডিক্যাল
কলেজ , নার্সিং ট্রেনিং কলেজ ও বিশাল আবাসন প্রকল্প নিয়ে , আই.কিউ সিটি প্রকল্পের কাজ
শুরু হয় । ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন করেন তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন । শুরুতে প্রকল্পের
নাম ছিল ‘ নলেজ সিটি ‘ । রাজ্য সরকার অধিগৃহীত ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উপর ন্যস্ত
এই জমিতে ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্টের সময় চাষ করার অধিকার পান স্হানীয় গ্রাম ও বস্তিবাসি
। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে তাদের অবস্হার উন্নতি হবে এই বিবেচনা করে স্বেচ্ছায় বিনা
ক্ষতিপূরনে তারা জমির অধিকার ত্যাগ করেন । প্রকল্পের নির্মান কাজ শুরু হলে গ্রাম উন্নয়ন
কমিটির মাধ্যমে জমিদাতা পরিবারের সদস্যদের নির্ম্মান কাজে শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত করা
হয় । পরবর্তীকালে গ্রাম ও বস্তির অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা কাজ পান । প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ
ও গ্রাম উন্নয়ন কমিটির পারস্পরিক সহযোগিতায় প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগোতে থাকে ।
কিন্তু ২০১১ সালে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন ঘটে । মমতা ব্যানার্জী নেতৃত্বাধীন তৃনমূল সরকার
গঠিত হলে সমগ্র দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সাথে সাথে আই.কিউ সিটি প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের
জীবনে কালো দিন নেমে আসে । তৃণমূলীরা কর্মরত জমিদাতা শ্রমিকদের অধিকাংশ কে কাজ থেকে
উচ্ছেদ করে এবং বহিরাগতদের নিয়োগ করে নিজেরা ফুলে-ফেঁপে ওঠে । শুধু তাই নয় , হটাৎ একদিন
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী উপস্হিত হয়ে পুরনো ভিত্তিপ্রস্তর সরিয়ে ২০০৭ সাল
থেকে চালু হওয়া আই.কিউ সিটি প্রকল্পের পুনরায় ‘ শিলান্যাস ‘ করেন । এই সুযোগে আই.কিউ
সিটি প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ দাঁত-নখ বার করে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ
সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে । প্রতিবাদ করলে জুটেছে কর্তৃপক্ষের গলাধাক্কা ও তৃণমূলী
দুষ্কৃতিদের রক্তচক্ষু । প্রতিকার চেয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের দ্বারস্হ হলে সেখানে জুটেছে
আর এক প্রস্হ শাসানি । এই অবস্হায় এলাকার অধিবাসীদের সাথে নিয়ে লড়াই করছে কৃষক সভা
ও সিআইটিউ । অন্যদিকে,
গভীর সংকটে
ইস্পাতনগরী সংলগ্ন গ্রামাঞ্চল । সংস্কারের
অভাবে চাষের জল যোগাতে পারছে না বক্সীর বাঁধ। মিলছে না ফ ।দুর্গাপুর ইস্পাতে কাজে যুক্ত
ছিলেন এরকম ৪৫০০ ঠিকা শ্রমিক কে তৃণমূল ২০১১ সালে রাজনৈতিক কারনে উচ্ছেদ করে । এদের
একটা বড় অংশই বাস করেন সংলগ্ন গ্রামাঞ্চল ও বস্তি অঞ্চলে । উচ্ছেদ হয়েছে মনেট কারখানায় । অন্যদিকে
নতুন কর্মসংস্হান নেই ।মোদি ও মমতা দুই সরকারের আমলে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে শিল্পের
মড়ক লেগেছে । ইতিমধ্যে কারখানা বন্ধের ফলে লক্ষাধিক লোক কাজ হারিয়েছে । নতুন শিল্প
হওয়ার আশা নেই । তরুনরা দুর্গাপুর ছেড়ে যাচ্ছেন । অথচ এক কালে কাজের আশায় মানুষ দুর্গাপুরে
আসতেন । বিপদাপন্ন দুর্গাপুরের প্রান ভোমরা রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প । এই সবের ধাক্কায় বিশেষ বিপদাপন্ন সংলগ্ন গ্রামাঞ্চল ও বস্তি অঞ্চলের মানুষ । মানুষের মুখে মুখে ফিরছে দুর্গাপুর এখন ‘দুর্দশাপুর’
। কিন্তু এর মধ্যেই ফুলে ফেঁপে উঠছে স্হানীয় তৃণমূল নেতারা । গ্রামের মানুষ জানালেন
যে এই অবস্হায় কোন বেসরকারী কাজের জন্য বেকারদের কাছে ত্রিশ হাজার থেকে দুলক্ষ টাকার
সেলামী আদায় করে নেতাদের গলায় ‘মোষের দড়ি’-র মত মোটা সোনার চেন ঝুলছে । বিভিন্ন ভাতার
টাকা মিলছে না । মিলছে না রেশন কার্ড । আধুনিক মহাজন বিভিন্ন মাইক্রো-ফিনান্স সংস্হার অবর্ণনীয় শোষনের শিকার হচ্ছেন গরীব মানুষ
। ৮০% থেকে ১৫০% চড়া সুদ গুনে দিতে হচ্ছে এই সব সংস্হা কে যাদের মালিকদের এক বড় অংশই
তৃণমূল অথবা বিজেপি-র ঘনিষ্ঠ। শিল্প বাঁচাতে,দুর্গাপুর বাঁচাতে লড়ছে লাল ঝাণ্ডা । নীরব
তৃণমূল অথবা বিজেপি । অ্যালয় স্টিল বাঁচাতে বিধান সভায় দুর্গাপুর ( পূর্ব )-এর সিপিআই-এম
বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় সহ বাম ও কং বিধায়করা
বারে বারে সোচ্চার হলেও নীরব তৃণমূলের বিধায়ক থেকে মুখ্যমন্ত্রী । অথচ এখন মেতেছেন
‘ছদ্ম-প্রতিদ্বন্ধীতায়’। মানুষের কাছে যে এই ‘ছদ্ম-প্রতিদ্বন্ধীতা’ পরিষ্কার হচ্ছে।
লকডাউনের সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল কেবল লাল ঝাণ্ডা।কেউ যেন অভুক্ত না থাকেন,তাঁর
জন্য সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল,খাবার তুলে দিয়েছে প্রান্তিক আয়ের মানুষের মুখে।আজ তীব্র
দাবদাহ উপেক্ষা করে দুর্গাপুর ( পূর্ব )-এর সিপিআই-এম প্রার্থী আভাষ রায় চৌধুরীর নির্বাচনী
প্রচারের সময়ে মানুষ বেরিয়ে আসেন প্রার্থীর
সাথে পরিচিত হতে । পরে ইস্পাতনগরীর বি-জোনের কাশীরামদাস রোটারীতে বক্তব্য রাখেন আভাষ
রায় চৌধুরী । সকাল থেকে উপস্হিত ছিলেন সুবীর সেনগুপ্ত,স্বপন ব্যানার্জি,আল্পনা চৌধুরী,স্বপন
সরকার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ।