দুর্গাপুর , ৬ই আগষ্ট : আজ ইস্পাতনগরীতে
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হল দুর্গাপুরের প্রথম শহীদ যুগল কমরেড আশিস-জব্বারকে।
১৯৬৬ সালের ৫ই আগষ্ট হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ডাকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার
শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে কারখানার কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে
গেলে শান্তিপূর্ন জমায়েতে রাজ্যের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিযুক্ত অন্ধ্র পুলিশ নৃশংসভাবে
লাঠিচার্জ করে,বহু শ্রমিক গুরুতর জখম হয়। পরের দিন অর্থাৎ ৬ই আগষ্টের ভোরে গুরুতর জখম
কমরেড আবদুল জব্বার মারা যান । এর প্রতিবাদে ইস্পাত কারখানায় স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট শুরু
হলে,ইস্পাতনগরীর রাণাপ্রতাপ রোডে পুলিশ ঠান্ডা মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যা করে কমরেড আশিস
দাসগুপ্ত কে । কমরেড আশিস দাসগুপ্ত ছিলেন সেই সময়ে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের
যুগ্ম-সম্পাদক ও দুর্গাপুরের ইস্পাত কারখানার ওয়ার্কস কমিটিতে নির্বাচিত অত্যন্ত জনপ্রিয় নির্বাচিত শ্রমিক প্রতিনিধি। সারা বাংলা গর্জে উঠেছিল এই বর্বরোচিত
হত্যালীলার বিরুদ্ধে। দুর্গাপুর নেমে এসেছিল রাস্তায় । স্বাধীন ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের নয়া রাস্তার নাম হোল,
আশিস -জব্বারের রক্তে ভেজা দুর্গাপুর। না এই আত্মবলিদানের শেষ এখানেই শেষ নয় । ভারতের
শাসক শ্রেণীর হিংস্র আক্রমনের মুখোমুখি রক্তস্নাত
ব্যারিকেডে বৃহত্তর দুর্গাপুরের প্রান দিয়েছেন ৩৮ জন কমিউনিস্ট ও বামপন্হী । তার মধ্যে,২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায়
আসার পরে শহিদ হয়েছেন দুই জন । আহত হয়েছেন শত শত । সি.আই.টি.ইউ করার অপরাধে চাকুরী
থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে চার হাজারের বেশী ঠিকা শ্রমিক । রাজ্য সরকারে পুলিশ-প্রশাসনের
প্রত্যক্ষ মদতে সন্ত্রাস চালিয়ে নির্বাচন ভণ্ডুল করে তৃণমূল দখল করে নিয়েছে কো-অপাঃ
ব্যাঙ্ক –সমবায়-স্কুল এর পরিচালন সমিতি । কিন্তু
গনতান্ত্রিক অধিকারের টুঁটি চিপে ধরে দুর্গাপুর কে নতজানু করানোর চক্রান্ত মানুষ
ব্যর্থ করে দিয়েছে । ভয়ংকর সন্ত্রাসের মধ্যও লাল ঝাণ্ডা উর্ধে তুলে মানুষ লড়াই চালিয়ে
গেছেন । এরই মধ্যে শুরু হয়েছে মোদি সরকার ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বেসরকারি হাতে রাষ্ট্রায়ত্ব
কারখানা বিক্রি করার ভয়ংকর চক্রান্ত । পাশাপাশি চলছে আরএসএস-বিজেপির সাম্প্রদায়িক মেরুকরনের
রাজনীতি । আজ আবার আক্রান্ত পঃ বঙ্গের গনতন্ত্র , মেহেনতি মানুষের অধিকার, ,ধর্মনিরপেক্ষতা । আক্রান্ত দুর্গাপুর
ও দুর্গাপুরের শিল্প,মেহেনতি মানুষের রুটি-রুজি। করোনা অতিমারী ও লক ডাউনের মাঝে বিপন্ন,আক্রান্ত
মানুষের জীবন-জীবিকা। আজ আবার ৬ই আগষ্ট । ডাক দিচ্ছে উত্তরাধিকারীদের,১৯৬৬-র অপরাজেয়
দুর্গাপুরের ব্যারিকেড অক্ষুন্ন রাখার । ইস্পাতনগরীতে ৬ই আগষ্ট আশীষ-জব্বরের সাথে দুর্গাপুরের
সমস্ত শহীদদের স্মরণ করা হয় ।
আজ সকালে ইস্পাতনগরীর বি’জোনে ১নং বিদ্যাগর এভিন্যুর বি টি রণদিভে ভবনে
রক্তপতাকা উত্তোলন করেন , হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদকমণ্ডলীর আহ্বায়ক বিশ্বরূপ ব্যানার্জি ও স্টিল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অফ্ ইন্ডিয়ার পক্ষে ললিত মিশ্র। মূল অনুষ্ঠানস্হল ইস্পাতনগরীর আশিস মার্কেটে রক্তপতাকা উত্তোলন করেন বিশ্বরূপ ব্যানার্জি । শহীদবেদিতে মাল্যদান করেন, বিশ্বরূপ ব্যানার্জি সন্তোষ দেবরায় ,পঙ্কজ রায় সরকার, ললিত মিশ্র,আর পি গাঙ্গুলী ,মলয় ভট্টাচার্য,নিমাই ঘোষ,শম্ভু প্রামানিক সহ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও গণ-আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ । জব্বারবাগেও শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন নেতৃবৃন্দ ।সকালে আরেকটি অনুষ্ঠানের হয় আশিস-জব্বার ভবনে । এখানে
রক্তপতাকা উত্তোলন করেন সন্তোষ দেবরায় । শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন নেতৃবৃন্দ ।
এর পরে বি টি রণদিভে ভবনে শহীদ-স্মরণে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পক্ষে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে ১৬ জন রক্তদান করেন।রেড ভলান্টিয়ার্সদের পক্ষ থেকে
বি টি রণদিভে ভবনের প্রাঙ্গনে শহীদ আশিস-জব্বারের স্মরণে বৃক্ষরোপন করা হয় ।
ইউনিয়নের
পক্ষে আয়োজিত সকল বয়সের জন্য অঙ্কন প্রতিযোগিতায়,কোভিড পরিস্হিতিতে,ঘরে আঁকা নিজেদের
ছবি ইউনিয়ন দপ্তরে জমা করেন শিল্পীরা । বিকালে বি টি রণদিভে ভবনে অনুষ্ঠিত হয় শ্রমিক
কনভেনশন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন বিশ্বরূপ ব্যানার্জি । অঙ্কন প্রতিযোগিতায় কৃতী শিল্পীদের
পুরস্কৃত করা হয় । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান ও আবৃতি পরিবেশন করেন বিভিন্ন শিল্পী ।সব
শেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “রক্তকরবী” নাটকের ছায়া অবলম্বনে একক নাটক পরিবেশন করেন রাজ্যের বিশিষ্ট
নাট্য শিল্পী শুভেন্দু ব্যানার্জি ।
No comments:
Post a Comment