দুর্গাপুর,৩রা জুলাই : অবিলম্বে স্হায়ী ও ঠিকা শ্রমিকদের সম্মানজনক বেতন-চুক্তি,২০১৭
সালের ১লা জানুয়ারি থেকে এরিয়ার সহ ৫-বছরের বেতন-চুক্তি,প্রকৃত বেসিকের নূন্যতম ১৫%
এমজিবি ও ৩৫% ভেরিয়েবেল পার্কস এবং ৯% পেনশন ,সিলিং ছাড়া গ্র্যাচুইটি সহ অন্যান্য বিষয়ে
অবিলম্বে ফয়সলার দাবিতে,কোভিডে মৃত স্হায়ী ও ঠিকা শ্রমিকের ১ জন পোষ্যের চাকুরী, সেইল
ও আরআইএনএল এর সমস্ত ধরনের বিলগ্নিকরনের ও কোলকাতা থেকে সেইলের আরএমডি দপ্তর সরানোর বাতিল,আন্দোলনরত ভিলাই ও বোকারো ইস্পাত কারখানার
শ্রমিকদের ওপরে চার্জশীট ও সাসপেনশন প্রত্যাহার সহ অন্যান্য দাবিতে কেন্দ্রিয় ও আঞ্চলিক
ট্রেড ইউনিয়ন গুলি যৌথ ভাবে ২৯শে জুন কেন্দ্রিয় রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা
আরআইএনএল ও ৩০শে জুন কেন্দ্রিয় রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইলে একদিনের ধর্মঘটের
ডাক দিয়েছিল।বেতন-চুক্তির জন্য নির্ধারিত সময় ৫৪-মাস অতিক্রম করেলেও কেন্দ্রিয় সরকারের ইস্পাত মন্ত্রকের
অধীনস্হ সেইল-আরআইএনএল কর্তৃপক্ষের অনমণীয় মনোভাবের জন্য গত ২২শে জুন থেকে চলা ছয়-দিন
ব্যাপী এনজেসিএস এর আলোচনা গতকাল কোন নিষ্পত্তি ছাড়াই শেষ হয় । ২৯শে জুন আরআইএনএল ধর্মঘটের
বিপুল সাড়া পড়ার পর ৩০শে জুন ধর্মঘটে সেইলে কার্যতঃ অচল হয়ে পড়ে । দুর্গাপুরের সেইলের
দুই ইস্পাত কারখানা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে সাম্প্রতিক
কালের মধ্যে সমস্ত ধর্মঘটের নজির কে অতিক্রম করে যায় এই ধর্মঘট দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায়
৭৫% ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে ৫৫% শ্রমিক ধর্মঘটে অংশগ্রহন করেন । শেষ মুহূর্তে আইএনটিইউসি
ও আইএনটিটিইউসি ধর্মঘটের থেকে সরে দাঁড়ালেও কারখানার শ্রমিকরাই শ্রমিক ঐক্য রক্ষা করে
এই নজিরবিহীন ধর্মঘট করেন।আজ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ইডি(ওয়ার্কর্স) এর দপ্তরের সামনে
শ্রমিকদের অভিনন্দন জানিয়ে যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হিন্দুস্হান স্টিল
এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এর সম্পাদকমন্ডলীর আহ্বায়ক ও সিআইটিইউ এর পঃ বঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর
সদস্য বিশ্বরূপ ব্যানার্জি বলেন যে বিগত আর্থিক বছরে ( ২০২০-২১ ) সেইলের মোট মুনাফার
পরিমান হয়েছে ২০,০২০ কোটি টাকা । সংস্হার আধিকারিকদের মোটা টাকার ভাতা বরাদ্দ করা হয়েছে
ও বেতন-চুক্তিতে উচ্চ হারে বেতন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি থাকলেও স্হায়ী ও ঠিকা শ্রমিকদের
সম্মানজনক বেতন-চুক্তি নিয়ে কর্তৃপক্ষ লাগাতার টালবাহানা করে চলেছে । উল্টে আরআইএনএল- অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট-সালেম-ভদ্রাবতী
সহ সেইলের বিভিন্ন জায়গায় বেসরকারীকরন,কোলকাতার থেকে আরএমডির দপ্তর সরানোর মাধ্যমে
সেইলের পঃ বঙ্গের ৩টি কারখানার স্হায়ী সর্বনাশ ডেকে আনার মতো কাজে লিপ্ত কর্তৃপক্ষ
। আলোচনার মাঝে কর্তৃপক্ষ একতরফা ভাবে কেন্দ্রিয় পেনশন প্রকল্পে যুক্ত করতে চেয়ে সার্কুলার
জারি করেছে । কোভিড অতিমারীর মধ্যেও রেকর্ড পরিমান উৎপাদন করে চলেছে সেইল । কোভিডে আক্রান্ত হয়ে সেইলে ইতিমধ্যে
প্রায় ৮৫০ স্হায়ী ও ঠিকা শ্রমিক মারা গেছেন । সরকারি কর্মচারীদের কোভিড অতিমারীতে
মৃত্যু হলে পোষ্যের চাকরীর নির্দেশিকা জারি হলেও সেইল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে নীরব ! তাই
দুর্গাপুর সহ সারা ভারতে সেইলের সর্বত্র এবং আরআইএনএল শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে অভূতপূর্ব
এই ধর্মঘটের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ কে অবিলম্বে নায্য দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বার্তা দিলেন । না হলে আগামীদিনে আরও বৃহত্তর লড়াই এর জন্য
শ্রমিকরা প্রস্তুত । বিশ্বরূপ ব্যানার্জি দুর্গাপুরের
সেইলের দুই ইস্পাত কারখানা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে সাম্প্রতিক
কালের মধ্যে নজিরবিহীন ধর্মঘটের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দুর্গাপুরের প্রতি সেইলের বঞ্চনার
কথা তুলে ধরেন । তিনি বলেন যে এই মুহূর্তে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা সেইলের মধ্যে সেরা
লাভজনক কারখানা হলেও ,জাতীয় নিরাপত্তা সহ আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অ্যালয় স্টিল
প্ল্যান্টের এই দুই কারখানার আধুনিকীরন ও সম্প্রসারন,স্হায়ী শ্রমিক নিয়োগ,মেইন হাসপাতালের
আধুনিকীরন ও সম্প্রসারন,স্কুল ব্যবস্হা ঢেলে সাজানো,জমি ও কোয়ার্টারের লিজ-লাইসেন্সিং
সহ বিভিন্ন বিষয়ে সেইলের লাগাতার বঞ্চনার শিকার । স্বাধীন ভারতে চণ্ডীগড়ের পরেই দ্বিতীয়
পরিকল্পিত শহর দুর্গাপুরের গর্ব ইস্পাতনগরীর আজ হতশ্রী অবস্হা । রাস্তাঘাট-জল ও নিকাশী
ব্যবস্হা-বিদ্যুৎ এর বেহাল দশা। এই সব দাবিতে লাগাতার শ্রমিক আন্দোলন কে সেইল কর্তৃপক্ষ উপেক্ষা করে চলেছে । এই নজিরবিহীন ধর্মঘটের মাধ্যমে
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের শ্রমিকরা এটাও বুঝিয়ে দিলেন যে
মুল দাবির সাথে দুর্গাপুরের প্রতি সেইলের বঞ্চনার বিরুদ্ধেও তারা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই
চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর । তিনি আরও বলেন যে শান্তিপূর্ন ধর্মঘট ও আন্দোলন কে কেন্দ্র
করে কর্তৃপক্ষ যদি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কোন রকম দমনমূলক নীতি নেয়,তাহলে ট্রেড ইউনিয়নদের
যৌথ মঞ্চ সর্বাত্মক প্রতিরোধে নামবে ।
No comments:
Post a Comment