Saturday 9 May 2020

নবান্নের পাশেই পরিযায়ী শ্রমিকদের অবর্ণনীয় দুরাবস্হা : পাশে দাঁড়ালো সি.পি.আই.এম ।




দুর্গাপুর,৯ই মে : ওরা হাঁটছেন দলে দলে । শ’য়ে শ’য়ে হাজারে হাজারে রাস্তা,হাইওয়ে অথবা রেলপথ ধরে ওরা হাঁটছেন । হ্যাঁ । ওরা পরিযায়ী শ্রমিক । মোদি সরকারের হটাৎ করে ঘোষিত করোনা লকডাউনে কাজ হারিয়ে নিজের দেশে আজ পরিযায়ী শ্রমিকরা কার্যতঃ উদ্বাস্তু ।বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোর মতই পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি কোন দায়িত্ব পালন করছে না । কর্মক্ষেত্রে মালিকপক্ষ অথবা  রাজ্য সরকার কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি । দ্রুত টাকা-পয়সা ফুরিয়ে আসছে । আসন্ন অনাহার থেকে বাঁচতে দ্রুত ঘরে ফিরতে পরিযায়ী শ্রমিকরা হাঁটছেন অথবা সাইকেলে ফিরছেন কারন বাস-ট্রেন সবই বন্ধ । এদের অনেকের সাথে রয়েছেন স্ত্রী ও সন্তান,শিশুরা। পশ্চিমবঙ্গের থেকে ঘর-ফেরত এই পরিযায়ী শ্রমিকদের বড় অংশ যাবেন ঝাড়খণ্ড-বিহার ও পূর্ব উত্তর প্রদেশ । এদের একটা বড় অংশ ন্যাশান্যাল হাইওয়ে-২ অর্থাৎ জিটি রোড ধরে হাঁটছেন ।
       আজ সকালে ৮০-৮৫ জন শ্রমিকের বড় দল সারা রাত হেঁটে দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ে এসে পৌঁছায়। কাল রাতে বর্ধমানে পুলিশের হাতে অনেকে বেধরক মার খান । ক্লান্ত-অসুস্হ-অর্ধাহারে অবসন্ন দিশাহারা পরিযায়ী শ্রমিকদের দল আর চলতে পারছিলেন না। সেই এস.এফ.আই- ডি.ওয়াই.এফ.আই এর কর্মিরা তাদের দেখতে পেয়ে এগিয়ে যান ও তাদের দুরাবস্হার কথা জানতে পেরে সি.পি.আই.এম এর নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেন। সাথে সাথে পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার,পার্টি নেতা রাকেশ সিং সহ এস.এফ.আই- ডি.ওয়াই.এফ.আই এর নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্হলে আসেন । পরিযায়ী শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ জামুই,কেউ লক্ষীসরাই, হাজারিবাগ,বেনারসে থাকেন ও নবান্নের ১০ কিমি ব্যাসার্ধের বিভিন্ন কারখানাতে কাজ করতেন।ওরা বলেন যে এরকম কয়েকশো শ্রমিক হেঁটে আসছে হাওড়া,কোলকাতা থেকে। হেঁটে অথবা সাইকেলে প্রায় ৪০০-৭০০ কিমি পেরিয়ে বাড়ি যাবেন।তৃণমূলী দাদাদের হাতে ৪০০০-৪৫০০ টাকা দিয়ে সাইকেল জুটিয়েছেন। পার্টি নেতৃত্ব জেলা প্রশাসন ও মহকুমা শাসকের সাথে যোগাযোগ করে অবিলম্বে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য শিবির-খাবার ও ঝাড়খণ্ড সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য দাবি জানালে প্রশাসন অক্ষমতার কথা জানায় । মুখ্যমন্ত্রীর তথাকথিত করোনা-যুদ্ধের জন্য কোটি কোটি টাকার ব্যয়ের বিজ্ঞাপনের অসারতা আবারও প্রমানিত হল ।
       কিন্তু এতে দমে না গিয়ে নেতৃবৃন্দ ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সংলগ্ন এলাকার পার্টি ও যুব নেতৃত্বদের সাথে নিয়ে খাবার ( কেক,পাউরুটি,বিস্কুট চিড়ে,মুড়ি,গ্লুকোজ,শসা,) ও জলের ব্যাবস্থা করেন। হত্যোদম পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকের তখন চোখে জল । পথের সাথী লাল ঝাণ্ডার বন্ধুদের হাত ধরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখা গেল । তাদেরই একজন রোহন কুমার জানালেন যে অনেকে রেলপথ ধরে হেটে আসছেন । কিন্তু ঔরঙ্গাবাদের রেল দুর্ঘটনার পরে কড়াকড়ির জন্য এখন রাস্তায় হাঁটছেন । যাত্রাপথে রাজ্য সরকারের থেকে কোন সাহায্যই মেলে নি ।
 ইতিমধ্যে বাসের জন্য রাজ্য সরকারের দক্ষিনবঙ্গ পরিবহন সংস্হার কাছে আবেদন জানালেও কোন লাভ হয় নি । চারটি ট্রাকের ব্যাবস্থা করা হলো। ইতিমধ্যে পার্টির জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চাট্যার্জি সহ জেলা নেতৃবৃন্দ রাজ্য পার্টির মারফত ঝাড়খন্ড,বিহার ও উত্তর প্রদেশ রাজ্য পার্টির নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করেন । খাওয়া শেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকরা ট্রাকে ওঠেন। সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করাতে বলছে" সিপিএম সব কর দিয়া হ্যায়"। ট্রাক গুলো কুলটি-ডুবরি ঝাড়খন্ড সীমানায় পৌঁছালে কৃতজ্ঞচিত্তে পরিযায়ী শ্রমিক গনেশ রাম পঙ্কজ রায় সরকার কে ফোন করে জানালেন -  “হামলগ বর্ডার তক চলা আয়ে।লাল সেলাম।“
      এ দিকে আজ সন্ধ্যা বেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের আরেকটি দল দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন পার্টি অফিসে লাল ঝাণ্ডা দেখে এগিয়ে আসেন । সেই সময় পার্টি অফিসে ছিলেন পঙ্কজ রায় সরকার,সিদ্ধার্থ বসু সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ । তারা অভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের খাওয়ানোর ব্যবস্হা করেন । পঙ্কজ রায় সরকার জানিয়েছেন যে রাতেই তাদের ট্রাকে করে ঝাড়খন্ড সীমানায় পৌঁছে দেওয়া হবে।
এ দিকে আজ সন্ধ্যায় বাম সংগঠন গুলির ডাকে দুর্গাপুরের সব কটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির সামনে প্রয়োজনীয় স্বাস্হ্য বিধি মেনে জমায়েত হয় । গতকাল ঔরঙ্গাবাদে রেলের চাকায় পিষ্ট নিহত পরিযায়ী শ্রমিকদের স্মৃতিতে মোমবাতি জ্বেলে শ্রদ্ধা জাননোর পাশাপাশি টালবাহানা ছেড়ে অবিলম্বে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের অবিলম্বে বাড়ী ফেরানোর দাবি জানানো হয় । দুর্গাপুর স্টেশনের জিআরপি থানায় ঢুকতে বাঁধা দেওয়া হয় ও থানার ওসি ডেপুটেশন নিতে অগ্রাহ্য করলেও বিক্ষোভকারীরা থানায় প্রবেশ করেন ও চাপে পড়ে ওসি স্মারকলিপি নিতে বাধ্য হন ।













No comments:

Post a Comment