Friday 25 May 2018

অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রির চেষ্টা ব্যর্থ করে আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের এর দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে ইস্পাত শ্রমিকরা ।




দুর্গাপুর , ২৫শে মে : রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইল ( স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড ) অন্তর্গত অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রির চেষ্টা রুখতে  অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক ও তাদের পরিবারবর্গ যৌথ ভাবে বিগত প্রায় ৩০ মাস ধরে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই চালাচ্ছেন । তাদের লড়াই এর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন দুর্গাপুরের সর্বস্তরের মানুষ।গড়ে উঠেছে কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির ( সি.আই.টি.ইউ-আই.এন.টি.ইউ.সি-এ.আই.টি.ইউ.সি-এ.আই.ইউ.টি.ইউ.সি-টি.ইউ.সি.সি ) যৌথ মঞ্চ – “ অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচাও, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বাঁচাও , দুর্গাপুর বাঁচাও “ কমিটি । অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের স্ট্র্যাটেজিক ডিসইনভেষ্টমেন্ট বাতিল , অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন ও সম্প্রসারন – এই তিন দফা দাবিতে  প্রায় ২০০ টি ছোট-বড় কর্মসূচি নিয়েছে যৌথ মঞ্চ । হাজার হাজার ইস্পাত শ্রমিক ( স্হায়ী ও ঠিকা উভয়ে ),অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত শ্রমিক সহ দুর্গাপুরের সর্বস্তরের মানুষ এই সংগ্রামে সামিল হয়েছেন । এই দাবিতে যৌথ মঞ্চের ডাকে  অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে এক দিনের ধর্মঘটে প্রায় ৯২% শ্রমিক অংশ নেন । অন্য দিকে যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রিয় ইস্পাত মন্ত্রির সাথে দেখা করে দাবি সমূহের যৌক্তিকতা বুঝিয়ে বলেন । সাথে ছিলেন রাজ্য থেকে নির্বাচিত বাম ও কং সাংসদারা । দুর্গাপুর ছাড়িয়ে কোলকাতা ও দিল্লির বুকে জমায়েত হয়েছে । লড়াই এর পাশে প্রত্যক্ষ ভাবে দাঁড়িয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রিয় সি.আই.টি.ইউ । সংসদে তপন সেন সহ অন্যান্য বিভিন্ন দলের সাংসদরা অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধের বিরোধিতা করেছেন । কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে রাজ্য সরকার নিরবতা পালন করে ! মোদি সরকারের প্রস্তাবিত স্ট্র্যাটেজিক ডিসইনভেষ্টমেন্টের তালিকায় সেইলের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সালেম ও ভদ্রাবতী থাকলেও যথাক্রমে তমিলনাড়ু ও কর্নাটক সরকারের প্রকাশ্যে তীব্র আপত্তি থাকায় কোন সংস্হা ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেষ্ট ‘ দেখানোর সাহস পায় নি । কেন একই অবস্হান গ্রহন করে পঃ বঙ্গ সরকার অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসে নি ? - এই প্রশ্ন এখন দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরছে । দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর সি.পি.আই.( এম ) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় ও রাজ্যের বাম পরিষদীয় দলনেতা সূজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানালেও কোন ফল হয় নি ।
এই অবস্হায় গত ১৪ই ফেব্রুঃ কেন্দ্রিয় সরকার অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রি করার জন্য ক্রেতার খোঁজে ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট ‘( ই.ও.আই ) এর পোষাকি নামের আড়ালে দরপত্র ( টেন্ডার ) আহ্বান করলে উত্তেজনা চরমে ওঠে । যৌথ মঞ্চের আহ্বানে ইস্পাত শ্রমিকরা জানিয়ে দেন – প্রান দেব তবু অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রি হতে দেব না । কোন বেসরকারি সংস্হার প্রতিনিধি  অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে ঢুকতে না পারে তার জন্য শ্রমিকরা লাগাতার নজরদারি শুরু করেন । যৌথ মঞ্চের আহ্বানে প্রায় প্রতি দিন শ্রমিকরা অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের অভ্যন্তরে মিছিল করেন । এই অবস্হায় ১১ই এপ্রিল ই.ও.আই জমা দেওয়ার শেষ দিন অতিক্রান্ত হলেও , প্রবল আন্দোলনের মুখে কোন বেসরকারি সংস্হা ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট’ দেখানোর সাহস করে নি । কিন্তু কেন্দ্রিয় সরকার তা সত্বেও ই .ও.আই জমা দেওয়ার মেয়াদ দু-দফায় বৃদ্ধি করে । কিন্তু ফলাফল একই থাকে । গত ১১ই মে ই.ও.আই জমা দেওয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় । এর পরে কেন্দ্রিয় সরকার আর নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করে নি ।
কিন্তু লড়াই এখানেই শেষ হয় নি । যতক্ষন না পর্যন্ত কেন্দ্রিয় সরকার অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন ও সম্প্রসারন এর দাবি মেনে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করবে না , ততক্ষন পর্যন্ত বেসরকারিকরন অথবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খাঁড়া ঝুলবে । আজ বিকালে,যৌথ মঞ্চের পক্ষে আয়োজিত অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের মেন গেটে ইস্পাত শ্রমিকদের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এই বিষয়ে সতর্ক করে দাবি আদায়ের জন্য আরও বৃহত্তর , প্রসারিত আন্দোলনের আহ্বান জানালেন । তারা জানিয়েছেন যে আগামি ৬ই জুন কেন্দ্রিয় ইস্পাত মন্ত্রির সাথে নির্ধারিত সভায় অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন ও সম্প্রসারনের বিষয়ে আবারও সবিস্তারে জানিয়ে যৌথ মঞ্চের পক্ষে অবলম্বে কেন্দ্রিয় বিনিয়োগ এর দাবি পুনরায় করা হবে । অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের শ্রমিকরা একটি বিশাল মিছিল করে কারখানার থেকে সমাবেশে এসে যোগ দেন । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিকরাও সমাবেশে যোগ দেন । সমাবেশের শুরুতে পুলিশের গুলিতে নিহত তুতিকোরিনের শহিদদের স্মরনে নিরবতা পালন করা হয় । বক্তব্য রেখেছেন যৌথ মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তি ও বিকাশ ঘটক , দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর সি.পি.আই.( এম ) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় , বিশ্বরূপ ব্যানার্জি ,অনিত মল্লিক,বিজয় সাহা,রানা সরকার ,শত্রুঘ্ন দেওঘরিয়া ও চন্দন ঘোষ ।









No comments:

Post a Comment