Friday 9 June 2017

হুমকি-প্রলোভনের কাছে দুর্গাপুর মাথা নত করবে না – লাল ঝাণ্ডার অঙ্গীকার ।



দুর্গাপুর,৯ই জুন : তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ ফুরিয়ে আসতে চললেও , নির্বাচনের সূচী ঘোষনার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না । আসলে , ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার গঠিত হওয়া পরে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ভয়াবহ সন্ত্রাস চালিয়েও , তৃণমূল সিপিআই(এম) এর গণভিত্তি ধ্বংস করতে পারে নি ।  তৃণমূলের প্রতি মোহভঙ্গ হতে দুর্গাপুরের মানুষেরও বেশী সময় লাগে নি । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের স্বীকৃতি নির্বাচনে ( ২০১১ ) পরাস্ত হতেই তৃণমূল স্বমূর্তি ধরে । দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ( ২০১২ ) থেকে যে কোন নির্বাচনে  সন্ত্রাসই একমাত্র তৃণমূলের ভরসা হয়ে দাঁড়ায় ।  সমবায় নির্বাচন থেকে ক্রীড়া সংস্হার নির্বাচন , প্রহসনে পরিনত করে  গায়ের জোড়ে দখল করা তৃণমূল অভ্যাসে পরিনত করে ফেলে । ১৯৭২ সালের পর থেকে এরকম ভোটাধীকার লুঠ হওয়ার অভিজ্ঞতা দু্র্গাপুরের মানুষের ছিল না । ২০১৪ সালের লোকসভার নির্বাচনের সময় তৃণমূলের ভোট-লুঠ চরমে ওঠে । মানুষ ফুঁসতে থাকে । এমন কি তৃণমূলের সমর্থক ভোটারদের মধ্যে তৃণমূলের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মাতে শুরু করে । এর প্রতিফলন দেখা যায় ২০১৫ সালে  । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের স্বীকৃতি নির্বাচন , সি.আই.এস.এফ এর নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন তৃণমূলের ভয়ংকর সন্ত্রাসের মুখেও ইস্পাত শ্রমিকরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে তৃণমূল কে পর্যদুস্ত করে পুনরায় হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন কে এক নম্বর ইউনিয়ন হিসাবে নির্বাচিত করে । এর পরে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ইতিহাস রচনা করে দুর্গাপুরের মানুষ । দুর্গাপুর ( পূর্ব ) ও দুর্গাপুর ( পশ্চিম ) দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কে পর্যদুস্ত করে জয়ী করেন যথাক্রমে সি.পি.আই.(এম ) প্রার্থী সন্তোষ দেবরায় ও জোট-প্রার্থী হিসাবে জাতীয় কংগ্রেসের বিশ্বনাথ পারিয়াল কে । বিধান সভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে পৌরসভার ৪৩ টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ৪০টি ওয়ার্ডে বিপুল ভোটে পিছিয়ে আছে ।
অকর্মণ্যতা ও দূর্ণীতির নিরিখে তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশনের স্হান সবার ওপরে – এ কথা মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে । মেয়র স্বয়ং গত বিধান সভা নির্বাচনে দুর্গাপুর ( পশ্চিম ) কেন্দ্র থেকে হেরেছেন । পূর্ববর্তী বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ডের বিপুল কাজের কোন তুলনায় বর্তমান বোর্ড আসতে পারেছে না – এ কথা তৃণমূলের সমর্থকরা মানছে । জল-নিকাশী-রাস্তাঘাট – আবর্জনা পরিষ্কার সহ সমস্ত পৌরসেবা বেহাল । কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা খরচ না করতে পারায় টাকা ফেরৎ গেছে । ‘ স্মার্ট-সিটি ‘-র প্রতিশ্রুতি দুরে থাক , জেলা ভাগের নামে দুর্গাপুর কে গুরুত্বহীন করে দেওয়ার দগদগে ঘা দুর্গাপুরে মানুষ কে বয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে । নতুন শিল্পের সম্ভাবনা শেষ । একে কারাখানা বন্ধ হচ্ছে । টুঁটি চিপে ধরা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প কে ।এ ক্ষেত্রে মোদি সরকারের দোসর মমতা ব্যানার্জীর সরকার পিছিয়ে নেই – সে কথা দুর্গাপুরে মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । শিল্পাঞ্চল বাঁচানোর লড়াই চালাচ্ছে লাল ঝাণ্ডা ও যৌথমঞ্চ । দুর্গাপুর কে ‘শিল্প-হীন’ করার চক্রান্তে তৃণমূল-বিজেপি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে । তৃণমূলের রাজত্বে দুর্গাপুর এখন ‘ দুর্দশাপুর ‘ ।
এই অবস্হায় পরাজয় একপ্রকার নিশ্চিত জেনে , যে কোন উপায় পৌর বোর্ডের দখল রাখার জন্য তৃণমূল মরিয়া হয়ে উঠেছে । এক দিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌর বোর্ডে প্রশাসক বসিয়ে ‘পেছনের দরজা ‘ দিয়ে দখলের রাস্তা নেওয়ার চেষ্টা চলছে । অন্যদিকে নির্বাচিত বাম কাউন্সিলর দের আর্থিক প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে । শাসক দলের দোসর হিসাবে প্রশাসন ও পুলিশের একাংশ কাজ করছে ।

এই ঘৃণ্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে আজ বিকালে পার্টির ডাকে এক বিশাল মিছিল সিটি সেন্টারের শহীদ বিমল দাসগুপ্ত ভবন থেকে শুরু হয়ে এস.ডি.এম দফ্তরে যায় এবং বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দেয় । সমাবেশ চলাকালীন এস.ডি.এম এর কাছে এক স্মারক লিপি জমা দিয়ে অবিলম্বে এই চক্রান্ত বন্ধের জন্য দাবী জানান পার্টি নেতৃবৃন্দ । নচেৎ এস.ডি.এম দফ্তরে লাগাতার বিক্ষোভ চলবে বলে পার্টি নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে প্রশাসন কে স্পষ্ট হুঁশিয়ারী দেওয়া হয় । আজকের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহাদেব পাল , সন্তোষ দেবরায় , বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী , আল্পনা চৌধুরী ও পঙ্কজ রায় সরকার । স্মারক লিপি জমা দেওয়ার আগে, সমাবেশে তা পাঠ করেন দুর্গাপুর পৌর নিগমের বিরোধী দলনেতা শিবশঙ্কর চ্যাটার্জী ।























No comments:

Post a Comment