Tuesday 5 July 2022

ইস্পাত শ্রমিক-অবসরপ্রাপ্তদের জমি-কোয়ার্টারের লিজ-লাইসেন্সের দাবিতে সিআইটিইউ লড়াই চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর: ইস্পাতনগরীতে বিশাল সমাবেশ।

 


দুর্গাপুর,৫ই জুলাই :আজ বিকালে, হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ ) এর আহ্বানে ইস্পাতনগরীতে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার নগর-প্রশাসনিক দফ্তর টি.এ.বিল্ডিং-এ এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।সমাবেশে যোগ দেয় অন্যান্য বাম গন সংগঠন সহ একাধিক নাগরিক সংগঠন। ইস্পাতনগরীতে জমি-কোয়ার্টারের লিজ-লাইসেন্সিং,নগর পরিষেবা-প্রশাসনের অব্যবস্হা দুর করা ও সেইল সমবায় আবাসন অঞ্চলে জমির স্বত্তাধিকার-লিজ ডিড-মিউটিশন সংক্রান্ত জটিলতা কাটানোর দাবি নিয়ে  দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা করছে বলে ইউনিয়ন এর পক্ষ থেকে অভিযোগ করে আজকের সমাবেশের ডাক দেয়। ইতিমধ্যে হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলা কে অগ্রাহ্য করে লাইসেন্সিং কোয়ার্টারের এক বড় অংশের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের জন্য কর্তৃপক্ষ একতরফা নোটিশ ধরিয়েছে । এই বাসিন্দারা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট এর কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার বর্গ । ইস্পাতনগরীর উদ্বৃত্ব জমি ও কোয়ার্টারের একটা বড় অংশ বেআইনি দখলদারদের হাতে চলে গেছে।দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা তৈরি হওয়ার সময়ে অধীগৃহীত ১৫৮৭২ একর জমি দুর্গাপুর ইস্পাত কে হস্তান্তরিত করা হয়। এই জমির মধ্যে ২৯৮৪ একর জমি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট তৈরি,১৮৮৭ একর জমি ইস্পাতনগরী ও ৫০০ একর জমি শ্রমিক-আধিকারিকদের বিভিন্ন সমবায় আবাসনের জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে । বাকি অব্যবহৃত জমির এক বড় অংশ বেআইনী দখলদারদের হাতে চলে গেছে ও সেই জমি বিক্রী করে কিছু অসাধু ব্যাক্তি ব্যবসা করছেন । অন্যদিকে ইস্পাতনগরীতে মোট কোয়ার্টারের সংখ্যা ১৯১৪১ । বর্তমানে দুই কারখানায় কর্মরতের সংখ্যা ৯০০০ এর কাছাকাছি । ৮৬৫১ টি কোয়ার্টার লিজ/লাইসেন্সের মাধ্যমে  কর্মরত/অবসরপ্রাপ্তদের দেওয়া হয়েছে । ১৩৩৭টি কোয়ার্টার বিভিন্ন সরকারী সংস্হা,পুলিশ কে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে । কর্মরত/অবসরপ্রাপ্তরা দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত কোয়ার্টার ও জমির লিজ/লাইসেন্সিং এর দাবি জানালেও দুর্গাপুর ইস্পাতের কর্তৃপক্ষ সেইলের গাইড লাইন থাকা সত্বেও কোন এক অজানা কারনে লিজ/লাইসেন্সিং শুরু করছে না।কিছু পরিমান জমি-কোয়ার্টারে লিজিং-লাইসেন্সিং হলেও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট এর অধিকাংশ শ্রমিক-কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্তরা বঞ্চিত রয়ে গেছেন । অন্যদিকে এন.জে.সি.এস-এর চুক্তিভঙ্গ করে কর্তৃপক্ষ একতরফা ভাবে বিদ্যুৎ-মাশুল বৃদ্ধি করেছে,এমন কি জলের ওপর মাশুল চাপিয়েছে । বিগত বেশ কয়েক বছর ইউনিয়ন ধারাবাহিক ভাবে দুর্গাপুর ইস্পাতের কর্তৃপক্ষের কাছে দামোদর নদ-ফিডার ক্যানেল-ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় ড্রেজিং করে নাব্যতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে এলেও কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করে নি । একই ভাবে জল সরবরাহ ব্যবস্হার আধুনিকিকরন এর জন্য ব্যবস্হা নেয় নি । এর ফলে আজ এই জল-সংকটে পড়তে চলেছে দুর্গাপুর ইস্পাত ও ইস্পাতনগরী ।বেআইনি দখলদাররা যথেচ্ছভাবে ও বেআইনীভাবে জল-বিদ্যুৎ এর অবাধ ব্যবহার করছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ থেকে পরোক্ষে মদদ জোগাচ্ছে বলে সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন ।  অবিলম্বে লাইসেন্সিং হোল্ডারদের দেওয়া একতরফা নোটিশ প্রত্যাহার,এডিডিএ এর থেকে ৬৮টি প্রাপ্য প্লট আদায় ও বিতরন, জমি-কোয়ার্টারের লিজ-লাইসেন্সিং দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বেহাত জমি উদ্ধার, ইস্পাতনগরীর বেআইনি নির্মান ও খাটাল বন্ধ,পরে থাকা স্কুল বিল্ডিং ও অন্যান্য বিল্ডিং এর লিজ-লাইসেন্সে এবং কুমারমঙ্গলম পার্ক-চিত্রালয় সিনেমার অচলাবস্হা কাটানোর দাবি জানানো হয়। ইস্পাতনগরীর বিভিন্ন অব্যবহৃত জমিতে শ্রমিকদের বহুতল আবাসন নির্মানের দাবি জানানো হয় । নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় আধুনিকীকরন,যন্ত্রাংশ, বিদ্যুৎ সরবরাহকারি তারের রক্ষনাবেক্ষন ও গাছের ডাল ছাঁটাই,রোড ও স্ট্রিট লাইট অবিলম্বে লাগানো,নিয়মিত মিটার রিডিং ও বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। দুই বেলায় নিয়মিত জল সরবরাহের জন্য সরাসরি দামোদর নদ থেকে ২৭ ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে আধুনিক জল ট্যাঙ্ক ব্যবহার,বর্ষা আসার আগেই কোয়ার্টার,হোস্টেল ও রাস্তাঘাটের মেরামতি সম্পূর্ন করার দাবি জানান বক্তারা। এর সাথে সাথে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার জনস্বাস্হ্য দফ্তর এর দক্ষতা বৃদ্ধি করে ইস্পাতনগরীতে রোগ প্রতিরোধ ও মশা-মাছি- সাপের উপদ্রব বন্ধ করার জন্য  দাবি জানানো হয় । এছাড়া চিকিৎসা পরিষেবার সম্পূর্ন আধুনিকীকরন সহ অবিলম্বে ডাক্তার-নার্স-চিকিৎসা কর্মী নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম-পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং বন্ধ হেলথ সেন্টার গুলি খোলার জন্য দাবি জানান বক্তারা।অবিলম্ব সেইল সমবায় আবাসন অঞ্চলে জমির স্বত্তাধিকার-লিজ ডিড-মিউটিশন সংক্রান্ত জটিলতা কাটানোর দাবি জানান বক্তারা । বক্তব্য রাখেন সুকান্ত সেন,দুলল কয়াল,অশোক চক্রবর্তী,দেবাশীষ পাল, বিশ্বরূপ ব্যানার্জি ও প্রদ্যুত মুখার্জি। সমাবেশ চলাকালীন ইউনিয়ন, বাম গন সংগঠন ও নাগরিক সংগঠন গুলির এক যৌথ প্রতিনিধিদল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি-সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দিয়ে অবিলম্বে ফয়সলার জন্য জোড়ালো দাবি জানান ।















 

No comments:

Post a Comment