দুর্গাপুর, ২১শে অক্টোঃ : বিগত ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে, রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত সংস্হা
স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড সংক্ষেপে সেইল কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে সমস্ত ট্যাক্স
মিটিয়ে দিয়ে ২০৯৩ কোটি টাকার মুনাফা করে । কিন্তু তা সত্বেও সেইল কর্তৃপক্ষ গত ১৫ই
অক্টোঃ প্রোডাকশন – প্রোডাক্টিভিটির সভায় ইউনিয়নগুলির প্রতিনিধিদের জানায় যে চলতি বছরে
তারা শ্রমিকদের কোন বাৎসরিক বোনাস ( APLRS) দিতে পারবে না । সেইল কর্তৃপক্ষের এহেন
অযৌক্তিক-অমানবিক-ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরনে শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন । দুর্গাপুর ইস্পাত
কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে এই বিক্ষোভ চরম
আকার ধারন করেছে । নিয়মানুসারে বিগত আর্থিক বছরের ফলাফল অনুযায়ী বর্তমান বছরের বাৎসরিক
বোনাস দেওয়া হয় যা দুর্গাপুর ইস্পাতের ক্ষেত্রে বরাবর পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয়তম উৎসব
দুর্গাপুজার আগেই দেওয়া হয় বলে পূজা বোনাস নামে পরিচিত ।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ইতিহাসে এই প্রথম শারোদৎসবের আগে সেইল কর্তৃপক্ষ
কোন বোনাস না দেবার কথা ঘোষনা করেছে । অথচ বিগত আর্থিক বছরে ( ২০১৪-১৫ ) সেইলের নিট
মুনাফা হয় ২০৯৩ কোটি টাকা যার মধ্যে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মুনাফা ছিল ৫০৩ কোটি
টাকা । ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে সেইলের নিট মুনাফা
ছিল ২৬১৬ কোটি টাকা । ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মুনাফা ছিল ৪১৬
কোটি টাকা । অর্থাৎ ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে তুলনায় ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে সেইলের নিট মুনাফা
কমলেও ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে তুলনায় ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মুনাফা
২২% বৃদ্ধি পায় । এর ফলে , সেইল কর্তৃপক্ষের বাৎসরিক বোনাস ( APLRS) চলতি কথায় পূজা
বোনাস না দেওয়ার ঘোষনায়,দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার
হয়েছে । হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ) এর ডাকে গত ১৬ই অক্টোঃ দুর্গাপুর
ইস্পাত কারখানার ভেতরে ই.ডি. ওয়ার্কসের দফ্তরে প্রবল গনবিক্ষোভ,মিছিল ও পরের দিন ,অবিলম্বে
ন্যায্য বার্ষিক বোনাস,ইচ্ছুক
শ্রমিক-কর্মচারী সহ অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের কোয়ার্টারের লিজিং অথবা লাইসেন্সিং,কর্তৃপক্ষের একতরফা ভাবে শ্রমিকদের উপর চাপানো জল
ও ডায়েট চার্জ এবং অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের উপর চাপানো কোয়ার্টার পেনাল রেট
অবিলম্বে নিঃশর্তে প্রত্যাহারের দাবীতে হুঁশিয়ারী দিয়ে ই.ডি. ওয়ার্কসের কাছে ধর্মঘটের
নোটিশ দেওয়া হয় । একই সাথে ১৬ই অক্টোঃ থেকে ১৯শে অক্টোঃ ,হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ
ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ) এর পক্ষ থেকে কারখানার প্রতিটি বিভাগে দাবীগুলির সমর্থনে গণ-সাক্ষর
সংগ্রহ অভিযানে শ্রমিক-কর্মচারীরা অভূতপূর্ব সাড়া দেয় । ১৯শে অক্টোঃ , ,হিন্দুস্হান
স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ) এর ডাকে কারখানার প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় প্রধানদের
কাছে শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং তারপরে কোক ওভেন বিভাগ থেকে শুরু হয় এক ঐতিহাসিক
মিছিল । মিছিল যায় সিইও দফ্তরে ( অ্যাডমিন বিল্ডিং )। সাম্প্রতিককালের মধ্যে দুর্গাপুর
ইস্পাত কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের এরকম অভূতপূর্ব বিশাল মিছিল দেখা যায় নি । মিছিল
শেষে সেইল কর্তৃপক্ষের কুশপুত্তলিকা দাহ করা ।
এ দিকে , দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের পুজা বোনাস না হওয়ার
দুর্গাপুর সহ সংলগ্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবস্হায় প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে । দুর্গাপুর
সহ আসানসোল ও বর্ধমানের ছোট-বড় ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ ,যারা সারা বছর ধরে
পূজোর সময়ে কেনাকেটার উপর অনেকটা নির্ভরশীল,তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছেন ।
এর ফলে সামগ্রিকভাবে , বোনাস বা এক্সগ্র্যাসিয়ার ন্যায্য দাবীর আন্দোলনকে কেন্দ্র
করে একদিকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে , অন্যদিকে ইস্পাতনগরী
ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল সহ বৃহত্তর দুর্গাপুরের মানুষের মধ্যে আন্দোলনরত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের
সমর্থনে দৃঢ় জনমত গড়ে উঠছে যা আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করেছে ।,হিন্দুস্হান
স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ) এর পক্ষ থেকে দূর্গাপুজার পরেই বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া
হয়েছে ।
No comments:
Post a Comment