Sunday 28 January 2018

প্রস্তাবিত এফ.আর.ডি.আই বিল আমানতকারীদের সঞ্চয় লুঠ ও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কিং ব্যবস্হা কে সমূলে ধ্বংস করার চক্রান্ত : প্রদীপ বিশ্বাস




দুর্গাপুর,২৮শে জানুঃ : আজ বিকালে ইস্পাতনগরীতে অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত শ্রমিক-আধিকারিকদের দুই সংগঠন যথাক্রমে ‘এক্স-এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোঃ অফ ডিএসপি এ্যান্ড সেইল “ ও “ দুর্গাপুর সহমর্মী “এক্স-এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোঃ অফ এ.এস.পি.”–র যৌথ উদ্যোগে প্রস্তাবিত দানবীয়  এফ.আর.ডি.আই. বিল এর বিরুদ্ধে আয়োজিত এক জনসভায় একথা বলেন ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া-র সর্বভারতীয় সম্পাদক প্রদীপ বিশ্বাস ।
তিনি বলেন যে ১৯৬৯ সালের ১৯শে জুলাই ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্হা জাতীয়করন ,স্বাধীন ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্হায় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিল । রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক এর অসামান্য অবদান হল সবুজ বিপ্লব , যা দেশ কে খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর করে তুলেছিল । এই প্রথম ভারতের কৃষক মহাজনী-ঋন থেকে অনেকটা মুক্ত হয়ে ফসল উৎপাদনের প্রাথমিক বাধা কাটাতে সংক্ষম হয়ে উঠতে শুরু করেন । পরবর্তীকালে গ্রামীন ব্যাঙ্ক ( ১৯৭৫ ) ও নাবার্ড ( ১৯৮০ ) গঠন ভারতের গ্রামীন অর্থনীতির উন্নয়নে যথেষ্ঠ সহায়ক হয়ে ওঠে । এর আগে বেসরকারী ব্যাঙ্কিং ব্যবস্হায় গ্রামীন ক্ষেত্র পুরোপুরি অবহেলিত ছিল । নির্দেশিকা অনুসারে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক এর মোট বিনিয়োগের ৪০%  কৃষি ( ১৮% )- ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প – স্বনির্ভর গোষ্ঠী – শিক্ষা ঋনে জন্য বরাদ্দ ছিল । জাতীয়করনের আগে দেশে ব্যাঙ্কের শাখা ছিল ৮০০০ ও মূলতঃ শহর-কেন্দ্রীক । জাতীয়করনের পরে ১৯৯১ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক এর শাখা ৬৫০০০ এর কাছে পৌছায় । কর্মী সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়ায় ২ লক্ষ (জাতীয়করনের আগে)  থেকে ৯ লক্ষ । কিন্তু ১৯৯১ সালে দেশে নয়া উদার অর্থনীতি চালু হওয়ার সাথে সাথে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্হার উপরে আঘাত আসতে শুরু করে । ১৯৯৩ সালে আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক এর ৪৯% শেয়ার বেসরকারী হাতে বেচে দেওয়ার রাস্তা খুলে দেওয়া হয় । এর মধ্যেও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক এর ভুমিকায় ২০০৮ বিশ্বজোড়া অর্থনীতির ধ্বসের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি বেঁচে যায় । রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক এর এই অনবদ্য ভুমিকা, উদরনীতিবাদের প্রবক্তারাও মানতে বাধ্য হন । কিন্তু ২০১৪ সালে মোদি সরকার এর আমলে এক দিকে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কিং ব্যবস্হার উপরে চরম আঘাত আসতে শুরু করেছে । বলা হচ্ছে ব্যাঙ্ক কেবল ব্যবসা করবে । আগে ব্যাঙ্কার্স কনফারেন্সের (ব্যাঙ্ক-কন ) এ বক্তব্য রাখতেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা । এখন বক্তব্য রাখেন ধর্মীয় গুরুরা ! বিশেষতঃ ২০১৫ সালে ‘ইন্দ্রধনুষ’  ঘোষনায় রাষ্ট্রায়ত্ব  ব্যাঙ্কিং ব্যবস্হার মৃ্ত্যু পরোয়ানা ঘোষনা করা হয়েছে । অন্যদিকে পরিচিত ও শাসকদলের ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট গোষ্ঠীর কাছে অনাদায়ি ঋনের পরিমান বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১০ লক্ষ কোটি টাকা । সর্বদা লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ব  ব্যাঙ্ক এবার ১৫০০ কোটি টাকার লোকসান করেছে । এরপরে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ভয়ংকরতম এফ.আর.ডি.আই বিল যা ‘বেইল আউট’এর বাহানায় সরাসরি ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সঞ্চয় প্রকৃতপক্ষে লুঠ করার পাকাপাকি ব্যবস্হা । প্রস্তাবিত এফ.আর.ডি.আই বিল এর বিশেষ করে ৫২ ও ৬৫ নং ধারায় এর ভয়াবহ ইঙ্গিত মিলেছে ।
তাই দেশের সেবায় নিয়োজিত রাষ্ট্রায়ত্ব  ব্যাঙ্ক ও আমানতকারীদের সঞ্চয় লুঠ করা রুখতে তিনি দল-মত নির্বিশেষ সাধারন মানুষ কে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সর্বাত্মক লড়াই গড়ে তোলার আহ্বান জানান ।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু আচার্য,অশোক চক্রবর্তী,ব্রজমানিক চক্রবর্তী,অর্ধেন্দু দাক্ষী,বিকাশ ঘটক,দেবাশীষ লাহিড়ী ও পি.কে.দাস । উপস্হিত ছিলেন দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় ।









No comments:

Post a Comment