দুর্গাপুর,১লা জুন
: গতকাল রাত্রি থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় দফায় দফায় শ্রমিক বিক্ষোভ চলে । গতকাল
রাতে শ্রমিকরা নাইট শিফটে কাজ যোগ দিতে গেলে দেখে মেইন গেটে কারখানা ঢোকার গেট বন্ধ
। শ্রমিকরা কর্তব্যরত সিআইএসএফদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায় যে দুর্গাপুর ইস্পাত
কারখানার কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢোকার সময় রাত ৯-৩০ মিঃ থেকে ১০-০০ টার পরিবর্তে ৯-৫০ থেকে ১০-০০ করা হয়েছে । এরফলে শ্রমিকদের
মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয় । কারন এই কম সময়ের মধ্যে কারখানার মধ্যে হাজার হাজার শ্রমিক
সুরক্ষার জন্য চেকিং করার পরে গেটে ঢোকা কি ভাবে সম্ভব তাই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় ।
অন্যদিকে শ্রমিকরা ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করলে নেতৃবৃন্দ জানিয়ে দেয় যে কর্তৃপক্ষ
এই বিষয়ে কিছুই জানায় নি । শ্রমিকরা সিআইএসএফ এর আধিকারিকদের কাছে এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সার্কুলার দেখতে চাইলে
তারা সার্কুলার দেখাতে পারে নি । পরিবর্তে শ্রমিকদের হুমকি দেওয়া শুরু করলে শ্রমিকদের মধ্যে বিক্ষোভ চরমে পৌঁছায় এবং সতঃস্ফূর্ত
অবরোধ শুরু হয়ে যায় । হাজার হাজার শ্রমিক মেইন গেট থেকে ওভারব্রীজ হয়ে লিংক রোড পর্যন্ত
দাঁড়িয়ে পড়েন । এরপরেই সিআইএসএফ আচমকা লাঠিচার্য শুরু করে । সংলগ্ন ব্যারাক থেকেও কর্তব্যরত
নয় এমন জওয়ানরা এসে লাঠি চালায় বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন । এর ফলে পরিস্হিতি অগ্নিগর্ভ
হয়ে ওঠে । অন্যদিকে,বি-শিফটে ছুটির পরে শ্রমিকরা মেইন গেটে এসে পৌঁছালে,শ্রমিকদের উপর
সিআইএসএফ এর অকারন ও বর্বরোচিত লাঠিচার্যের কথা জানতে পারলে,তারও গেটের ভেতরেই অবস্হান
শুরু করেন । কারখানার উৎপাদন স্তব্দধ হয়ে যায় । ব্লাষ্ট ফার্ণেস বন্ধের আশংকা দেখা
দেয় । কর্তৃপক্ষের কিছু আধিকারিক শ্রমিকদের
বোঝাতে এলে কার্যতঃ তাড়া খেয়ে পালিয়ে যায় । এই অবস্হায় সি.আই.টি.ইউ সহ ট্রেড ইউনিয়ন
সমূহ ( বিএমএস বাদে) এর নেতৃবৃন্দ এর দাবি মত ইডি(পি এ্যাণ্ড এ),জিএম (পি এ্যাণ্ড এ)
ও সিআইএসএফ এর ডিআইজি কারখানায় আসতে বাধ্য হয় এবং শ্রমিকদের দাবি মেনে সর্ব সমক্ষে
নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আপাততঃ দুই জন দোষী সিআইএসএফ
জওয়ান কে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষনা করেন এবং সিসি টিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পরবর্তীকালে
সব দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে রাত ১-০০ টার সময়ে অবরোধ ওঠে
। শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন স্বাভাবিক করেন । হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন
(সি.আই.টি.ইউ ) এর পক্ষে বিশ্বরূপ ব্যানার্জী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন যে এই
ঘটনার অবিলম্বে বিশদ তদন্ত করে কে বা কাদের প্ররোচনায় উৎপাদনের ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য
কর্তৃপক্ষ সিআইএসএফ কে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিল তা প্রকাশ্যে আনার জন্য দাবি
জানান । তিনি বলেন একই ভাবে সিআইএসএফ সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ট্রেণীদের ওপরে নৃশংস লাঠিচার্জ করেছিল । কিন্তু
এখনও তার তদন্ত হয় নি অথবা দোষীরা শাস্তি পায় নি । ইউনিয়নদের এড়িয়ে কর্তৃপক্ষ একতরফা
সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এক্তিয়ার বহির্ভুত ভাবে সিআইএসএফ কে ব্যবহার
করার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের আজ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে । এই ঘটনা থেকে শিক্ষা
নিয়ে কর্তৃপক্ষ যদি স্বেচ্ছাচারী হওয়ার থেকে বিরত না হয় ,তাহলে ভবিষ্যৎে আরও বড় শ্রমিক
বিক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে বলে বিশ্বরূপ ব্যানার্জী মনে করছেন ।
আজ সকালে এই রকম আরেকটি
শ্রমিক বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় অফিস অঞ্চল জুড়ে । কয়েক দিন আগে
কর্তৃপক্ষ আচমকা একতরফা সার্কুলার জারী করে ১লা জুন থেকে ‘বায়ো-মেট্রিক’ হাজিরা দেওয়ার
নির্দেশ দেয় ।প্রসংগত, এর আগেও একইভাবে কর্তৃপক্ষ বায়ো-মেট্রিক’ হাজিরা চালু করার চেষ্টা
করে ব্যর্থ হয় ।
সি.আই.টি.ইউ ১৩-দফা দাবি-সম্বলিত
স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল । সি.আই.টি.ইউ এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিষয়ে ইতিমধ্যে সেইল
কর্তৃপক্ষ কে যুক্তি সহকারে চিঠি দিয়েছেন এবং শ্রম ট্রাইবুন্যালে অভিযোগ জানিয়েছেন
।‘বায়ো-মেট্রিক’হাজিরা ট্রাইবুন্যালের বিচারাধীন আছে । এর মধ্যে ‘বায়ো-মেট্রিক’হাজিরার
সার্কুলার জারীর প্রতিবাদে বিএমএস বাদে সি.আই.টি.ইউ সহ সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন পরিষ্কার
ভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের ‘বায়ো-মেট্রিক’ হাজিরা না দেওয়ার জন্য আবেদন জানায় । এই আবেদনে
সাড়া দিয়ে আজ ১০০% শ্রমিক-কর্মচারী ‘বায়ো-মেট্রিক’ হাজিরা বয়কট করেন । সকালে দুর্গাপুর
ইস্পাত কারখানার প্রশাসনিক ভবনে সি.আই.টি.ইউ-আই.এন.টি.ইউ.সি- আই.এন.টি.টি.ইউ.সি-এ.আই.টি.ইউ.সি-এ.আই.ইউ.টি.ইউ.সির এর ডাকে
শ্রমিক-কর্মচারীদের বিশাল মিছিল ও পরে অবস্হান-বিক্ষোভ শুরু হলে কর্তৃপক্ষ চাপে পড়ে
আলোচনায় বসে ।
ইডি(পি এ্যাণ্ড এ),জিএম (পি এ্যাণ্ড
এ) এর উপস্হিতিতে উত্তপ্ত পরিবেশের আলোচনায় ইউনিয়ন সমূহের নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন তোলেন যে
বেতন-চুক্তি দুই বছরের বেশী বকেয়া,পেনশন লাগুতে টালবাহানা,বিগত এনজেসিএস এর বকেয়া,হাউস
রেন্ট ভাতা,ট্রেণীদের স্হায়ীকরন,কোয়ার্টার ও জমির লিজ-লাইসেন্সিং,ইস্পাত নগরী ও হাসপাতালের
পরিষেবা উন্নতি ও সর্বোপরি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের মতো
দীর্ঘদিনের দাবিগুলি বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নীরব অথচ হটাৎ করে কে বা কাদের নির্দেশে কর্তৃপক্ষ
একতরফা বায়ো-মেট্রিক’ হাজিরা লাগু করতে তৎপর হয়েছে ? কার্যতঃ প্রবল চাপের মুখে কর্তৃপক্ষ
আপাততঃ ‘বায়ো-মেট্রিক’ হাজিরা বাধ্যতামূলক নয় এই নির্দেশ বিভাগ গুলি কে জানিয়ে দিলে
অবস্হান ওঠে । হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সি.আই.টি.ইউ ) এর পক্ষে বিশ্বরূপ
ব্যানার্জী বলেন যে প্রতিকূল পরিস্হিতির মধ্যেও শ্রমিক-আধিকারিকদের নিরলস প্রচেষ্টায়
উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ৩ বছর বাদে সেইল মুনাফা করেছে । নীট মুনাফার পরিমান দুই হাজার একশ
ঊনআশি কোটি টাকা । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানাও ৩ বছর বাদে মুনাফা করেছে । নীট মুনাফার
পরিমান দুই শ আশি কোটি টাকা । এই পরিস্হিতিতে শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য বকেয়া দাবি
পূরনের বদলে
কর্তৃপক্ষ স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একের পর এক সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের
উপরে চাপিয়ে দিয়ে কারখানার সুস্হ কাজের পরিবেশ কে বিঘ্নিত করছে । এরফলে শ্রমিক বিক্ষোভ
চরমে পৌঁছিয়েছে । শ্রমিকদের দাবি পূরনে সিআইটিইউ অন্যান্য সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নের সাথে
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ।










No comments:
Post a Comment