Saturday 28 January 2017

শিল্পনগরী দুর্গাপুর কে শ্মশানে পরিনত হতে দেব না – দুর্গাপুরে ঐতিহাসিক শ্রমিক-কৃষক জমায়েতের প্রত্যয়ী ঘোষনা ।



দুর্গাপুর,২৮শে জানুঃ – ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্কসবাদী )-র বর্ধমান জেলা কমিটির ডাকে আজ সকালে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার সংলগ্ন পলাশডিহা মাঠে শিল্প-কৃষি-দেশ বাঁচানোর আহ্বানে এক ঐতিহাসিক শ্রমিক-কৃষক জমায়েত হল। সংগঠকদের নিরন্তর আহ্বান ছাপিয়ে কুল ভাঙ্গা জনস্রোত সমাবেশ স্হল ভাসিয়ে প্লাবিত করল এন.এইচ-২ ( জি.টি.রোড)।
কর্মচঞ্চল,ভারতের ,’রুঢ়’ অঞ্চল নামে পরিচিত দুর্গাপুর হবে শ্মশানে ! সেই অবস্হার দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল । ইতিমধ্যে ৬ টি রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা সহ ২২টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে ও প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে । অধিকাংশ কারখানাই ধুঁকছে অথবা বন্ধ হওয়ার মুখে । একই অবস্হা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ডিপিএল ও ডিটিপিএস( ডিভিসির অন্তর্গত) এর । একদিকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির জন্য বন্ধ হচ্ছে বেসরকারী ছোট-মাঝারী কারখানা,বিশেষ করে ইস্পাত কারখানা । অন্যদিকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েই দুর্গাপুরের প্রান ভোমরা  রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা গুলিকে হয় বিক্রী নয় শুকিয়ে মারার নীতি নিয়েছে । প্রাসঙ্গিক বিগত বাজপেয়ী সরকারের সময় ভারতের অন্যতম সেরা এঞ্জিনিয়ারিং রাষ্ট্রায়ত্ব এম.এ.এম.সি কারখানা বন্ধ করার মধ্য দিয়ে দুর্গাপুরে কারখানা বন্ধ হওয়ার রেওয়াজ শুরু হয় এবং রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তখন সেই সরকারের অন্যতম মন্ত্রী ছিলেন । বর্তমানে রাজ্য সরকার দুর্গাপুর কেমিক্যালস এর ১০০% বিলগ্নীকরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার আসানসোলের হিন্দুস্হান কেবলস কারখানা পুরোপুরি বন্ধ করা ও দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইলের  আন্তর্জাতিক স্তরের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট কে নিলামে বেসরকারী হাতে বিক্রী করবে বলে জানিয়েছে । এই সিদ্ধান্ত জানার সাথে সাথে দুর্গাপুর ইস্পাতনগরীতে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায় ।বহু যুদ্ধে পোড় খাওয়া মিশ্র ইস্পাত ও দুর্গাপুর ইস্পাত শ্রমিক ও হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন সর্বব্যাপি জনমত গড়ে তুলেছে । আন্দোলনের স্রোতে যুক্ত হয় সাধারন মানুষ । অন্যদিকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা চরম বঞ্চনার শিকার । আধুনিককরন-সম্প্রসারনের জন্য  সেইলের ৭০,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের মধ্যে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার জন্য বরাদ্দ মাত্র ১২,০০০ কোটি টাকা । এর ফলে সেইলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ইন্টিগ্রেডেড স্টিল প্ল্যান্টে পরিনত হবে  দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা । তাছাড়া মিশ্র ইস্পাত কারখানা বিক্রী হলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্হ হবে  দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা । মিশ্র ইস্পাত ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কেবল দুর্গাপুরের নয় , জেলা ও রাজ্যের অন্যতম অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্হান কেন্দ্র । কিন্তু ‘ অজানা কারনে ‘ রাজ্য সরকার ও তৃণমূল দল মিশ্র ইস্পাত ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বাঁচানোর জন্য কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না । মোদি-মমতার গোপন-আঁতাত দুর্গাপুরের মানুষের কাছে আর গোপন নেই – এই কথাই আজকের সমাবেশে বক্তা থেকে শ্রোতা সবার মুখে মুখে ঘুরছে । ডিভিসির অবহেলায় জলের অভাবে শুকিয়ে যেতে বসেছে দুর্গাপুর । কিন্তু রাজ্য সরকারের হুঁশ নেই ।সি.আই.টি.ইউ করার অপরাধে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ৩৫০০ ঠিকা শ্রমিক সহ দুর্গাপুরের হাজার হাজার শ্রমিক কে বিগত ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার আসার পর কাজের জায়গা থেকে উৎখাত করেছে তৃণমূলী গুন্ডা বাহিনী ।কিন্ত সব জেনেও কেন্দ্রীয় সরকার নীরব । বাংলার শস্যাগার নামে পরিচিত বর্ধমান এখন কৃষক-ক্ষেতমজুরের লাশ ঘর । ফসলের দাম নেই,রেগার কাজ নেই । মোদি-মমতার জমানায়  শতাধিক কৃষক-ক্ষেতমজুর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে । রমরমা জমি মাফিয়াদের ।বর্গী আক্রমন ছাড়া সমৃদ্ধ  বর্ধমান জেলার ইতিহাসে এরকম কালোদিন এর আগে কখন আসে নি , জীবন-জীবিকার উপর এমন আক্রমনও হয় নি।  শিল্প-কৃষি-দেশ বাঁচানোর জন্য তীব্রতম প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশ শেষ হয় ।

বক্তব্য রেখেছেন পার্টির জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক , অমল হালদার , মদন ঘোষ,সন্তোষ দেবরায়,অঞ্জু কর,আব্দার রেজ্জাক মোল্লা গৌরাঙ্গ চ্যাট্যার্জী ও আভাস রায় চৌধুরী ।













No comments:

Post a Comment