Tuesday 13 December 2016

দুর্গাপুরের শ্রমিক ও গনতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা প্রয়াত কমরেড এস.কে.এন চৌধুরী কে চোখের জলে বিদায় জানালো ইস্পাতনগরী ।



দুর্গাপুর,১৩ই ডিসেঃ – গতকাল , দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মেইন হাসপাতালে চিকিৎসধীন অবস্হায় প্রয়াত হলেন দুর্গাপুরের শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা সুনীলকান্তি নারায়ন চৌধুরী । তিনি ‘ কমরেড এস.কে.এন ‘ নামেই সমাধিক পরিচিত ছিলেন । বেশ কিছুদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন । মৃত্যুর সময়ে তাঁর স্ত্রী,দুই কন্যা ও জামাতা বর্তমান ।
আজ সকালে, প্রয়াত কমরেড এস.কে.এন এর মরদেহ প্রথমে নিয়ে আসা হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্কসবাদী )-র দুর্গাপুর ইস্পাত জোনাল কমিটির দফ্তর ইস্পাতনগরীর আশীষ-জব্বর ভবনে। ইতিমধ্যে প্রয়াত  কমরেড এস.কে.এন এর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আশীষ-জব্বর ভবনে পৌঁছান ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্কসবাদী )-র বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক কমরেড অচিন্ত্য মল্লিক, পঃ বঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার সম্পাদক কমরেড অমল হালদার , আভাস রায়চৌধুরী,বীরেশ্বর মন্ডল , দুর্গাপুরের প্রাক্তন সাংসদ ও বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতির রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি সেখ সাইদুল হক, বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কমিটিরি সদস্য রাম প্রণয় গাঙ্গুলী সহ অন্যান নেতৃবৃ্ন্দ । প্রয়াত কমরেড এস.কে.এন চৌধুরীর মরদেহে রক্তপতাকা দিয়ে আচচ্ছাদিত করেন কমরেড অচিন্ত্য মল্লিক ও কমরেড অমল হালদার । মাল্যদান করেন  অমল হালদার , অচিন্ত্য মল্লিক , বীরেশ্বর মন্ডল,নির্মল ভট্টাচার্য , আভাস রায়চৌধুরী,সুবীর সেনগুপ্ত , রথীন রায় , রাম প্রণয় গাঙ্গুলী সহ পার্টি ও বিভিন্ন গন-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ । দুর্গাপুর ইস্পাত জোনাল কমিটির সম্পাদক ও দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় ( তিনি সাংগঠনিক কাজে দিল্লিতে গেছেন ) এর পক্ষেও মাল্যদান করা হয় । পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ ) এর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট শাখার দফ্তর ( তিলক রোড ) ও দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট শাখার দফ্তরে ( বি.টি.রণদিভে ভবন,১নং বিদ্যাসাগর এভিন্যু ) । রক্তপতাকায় আচ্ছাদিত করেন হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ ) এর সভাপতি রথীন রায় । মাল্যদান করেন রথীন রায় , রামপঙ্কজ গাঙ্গুলী , প্রফুল্ল মন্ডল , মলয় ভট্টাচার্য , নিমাই ঘোষ সহ অন্যান্য ট্রেড ইউনিয়ন ও বিভিন্ন গন-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং  প্রয়াত কমরেড এস.কে.এন চৌধুরীর কন্যা ও জামাতা ।
এরপরে, মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সিটি সেন্টারে সি.আই.টি.ইউ এর বর্ধমান জেলা দফ্তরে । রক্তপতাকায় আচ্ছাদিত করেন সি.আই.টি.ইউ এর বর্ধমান জেলা কমিটির সভাপতি বিনয়েন্দ্র কৃষ্ণ চক্রবর্তী ও বংশগোপাল চৌধুরী । মাল্যদান করেন বিনয়েন্দ্র কৃষ্ণ চক্রবর্তী, বংশগোপাল চৌধুরী,বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী , মহাব্রত কুন্ডু ,পঙ্কজ রায় সরকার , গৌরাঙ্গ চ্যাট্যার্জী , বাদল মজুমদার ,শ্যামা ঘোষ , হারা সাঁই সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ । সবশেষে , তাঁর মরদেহ সেইল আবাসন অঞ্চলে তাঁর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় । পরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় । এর আগে ,তাঁর ইচ্ছা অনুসারে , পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মরোণত্তোর চক্ষুদান করা হয় ।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করে স্ত্রী ও আত্মীয়-পরিজনদের ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্কসবাদী )-র বর্ধমান জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সমবেদনা জানানো হয়েছে । ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্কসবাদী )-র দুর্গাপুর ইস্পাত জোনাল কমিটির পক্ষেও অনুরূপ শোকজ্ঞাপন করা হয়েছে ।


সংক্ষিপ্ত জীবনী : ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহন করেন প্রয়াত কমরেড এস.কে.এন চৌধুরী । কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল ও পরে আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশন থেকে বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্ত করেন ও ১৯৬১ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হন ।
১৯৬২ সালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে সিনিয়ার অপারেটিভ ট্রেনী হিসেবে যোগদান করেন ও রিসার্চ এ্যান্ড কন্ট্রোল ল্যাব ইন্সপেক্টার হিসাবে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন । এক্সিকিউটিভ হওয়ার প্রমোশন প্রত্যাখ্যান করেন ।
তাঁর পরিবার বামপন্হী আন্দোলন তথা পার্টির সাথে যুক্ত ছিল । তাঁর দাদা সুকোমল কান্তি চৌধুরী ছিলেন রেল শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রনী নেতা ।
১৯৬৫ সালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রতক্ষ্য করেন ও ঐ বৎসরে কারখানার কনজিউমার কো-অপঃ এর প্রথম নির্বাচনেই ডাইরেক্টর নির্বাচিত হন ।
১৯৬৬ সালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এর এ.এস.পি শাখার প্রতিষ্ঠার অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি । ২০০২ সালে কর্মজীবন থেকে অবসরগ্রহনের সময় তিনি হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এর কার্যকরী সভাপতি ছিলেন । সি.ই.টি.ইউ এর বর্ধমান জেলার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন ।
১৯৬৮ সালে তিনি পার্টি সভ্যপদ লাভ করেন । পার্টির প্রাক্তন জোনাল কমিটির সদস্য ও আমৃত্যু আঞ্চলিক কমিটির সদস্য ছিলেন ।
১৯৬৯ সালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের ২য় ওয়ার্কর্স কমিটির নির্বাচনে জয়ী হয়ে সম্পাদকের দায়িত্ব বহন করেন ।
১৯৭০ সালে , সি.ই.টি.ইউ এর প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ১৯৮২ সালে স্টিল ওয়ার্কর্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠা সম্মেলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন । সম্মেলনে প্রকাশিত ‘ হুইদার স্টিল ইন্ডাষ্ট্রী ‘নামক সংকলনটি প্রয়াত কমরেড মৃণাল ব্যানার্জীর সাথে যৌথ সম্পাদনা করেন ।
দেশের ইস্পাত শিল্পের এন.জে.সি.এস ও স্ট্যান্ডর্ডাইজেসন কমিটিতে বিকল্প সদস্য ছিলেন ।
১৯৯০ সাল থেকে সাক্ষরতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থেকে রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য হয়েছিলেন এবং মৃত্যুকালে ‘ বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি’-র বর্ধমান জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন ।
বিগত দু-দশক ধরে বিজ্ঞান আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন ।
২০১৩ সালে , তাঁর রচিত  ,” এ.এস.পি-র হত্যাকান্ড : তদন্তে ঐ শিল্পের এক মজুর “ বইটি অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট কে তিলে তিলে ধ্বংস করার চক্রান্ত কে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভাবে উন্মোচিত করে ।
অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচানোর লড়াই এ তাঁর অবদান অপরিসীম । ২০০২ সালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট কে জিন্দালদের বেঁচে দেওয়ার চক্রান্ত রুখতে ঐতিহাসিক গেট-ধর্ণায় তাঁর অসামান্য ভূমিকা , আজকে যখন পুনরায় অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচানোর যে লড়াই তীব্রতর হচ্ছে , তাকে অবশ্যই প্রেরণা যোগাবে ।


































No comments:

Post a Comment