দুর্গাপুর,২২শে ডিসেঃ
– “ উই উইল ফাইট টিল ডেথ “ – আজ ইস্পাতনগরী
দুর্গাপুরে আয়োজিত ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের এর যৌথ কনভেনশন এই শপথ নিয়ে , দুর্গাপুর কে
ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা ও রাজ্যের অর্থনীতিকে নিশ্চিত রুগ্নতার হাত থেকে বাঁচাতে
অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বেসরকারীকরনের উদ্যোগ বাতিল , সেইলের ( কেন্দ্রীয় সরকারের
রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ) বিশেষজ্ঞ সংস্হা ,’সেট’
এর প্রস্তাব অনুসারে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে
( এ.এস.পি ) বিনিয়োগ ও আধুনিকীকরন এবং একই সাথে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট ( ডি.এস.পি
) কে বার্ষিক ২.২ মিলিয়ন টন থেকে ১০ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা-সম্পন্ন কারখানায়
পরিনত করার জন্য ইস্পাত শ্রমিক ( স্হায়ী ও
ঠিকা ) ও তাদের পরিবারবর্গ সহ দুর্গাপুরের দলমত-নির্বিশেষ সকলকে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয় ।
মোদি সরকারের সম্প্রতি
২২ টি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্হা বেসরকারীকরনের সিদ্ধান্ত
নিয়েছে যার মধ্যে রয়েছে সেইলের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা দুর্গাপুরে অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্টে , সালেম ও ভদ্রাবতী স্টিল প্ল্যান্ট । আশ্চর্যজনক হলেও এটাই সত্য
যে কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বিগত
১৬ বৎসর ধরে ক্রমান্বয়ে মুনাফা করে কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে হাজার হাজার কোটি টাকা
জমা করেছে । কিন্তু ২০১৪-১৫ আর্থিক বছর থেকে সেইল লোকসান শুরু করে এবং বেসরকারী ক্ষেত্রের
ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা গুলির অবস্হা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে । বিদেশের তৈরি ইস্পাত অবাধে
দেশে বিক্রী হচ্ছে , কিন্তু দেশীয় ইস্পাত শিল্প বাঁচাতে কোনো অজ্ঞাতকারনে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অ্যান্টি-ডাম্পিং
শুল্ক বসানো হচ্ছে না ।
স্বাধীন ভারতে শ্রমিক
অধিকার রক্ষায় , দুর্গাপুরের ইস্পাত শ্রমিকরা যে অন্যন্য সাধারন নজীর তৈরি করছে ,তা
দেশ-কালের পরিধি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেছে । একই সাথে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প
বাঁচাতে এবং জন্মলগ্ন থেকে এ.এস.পি ও ডি.এস.পি
বাঁচাতে ও দেশের মধ্যে ইস্পাত উৎপাদনে শীর্ষে
পৌঁছাতে দুর্গাপুরের ইস্পাত শ্রমিকরা অন্যবদ্য ভূমিকা পালন করেছে । বিগত এনডি-বিজেপি
সময়ে যখন এম.এ.এম.সি – এফ.সি.আই-বি.ও.জে.এল মত একটার পর একটা রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প বন্ধ
হয়ে যায় , তখন
দুর্গাপুরের ইস্পাত শ্রমিকদের
যৌথ আন্দোলনের ব্যারিকেড, এ.এস.পি কেনার জন্য আগত জিন্দাল
গোষ্ঠী ও ডি.এস.পি –র ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট
কেনার জন্য আগত বহুজাতিক সংস্হা এনরনের প্রতিনিধিদের কারখানায় ঢুকতেই দেয় নি । যৌথ
শ্রমিক আন্দোলন গড়ার ক্ষেত্রেও দুর্গাপুরের ইস্পাত শ্রমিকরা সারা ভারতের মধ্যে পথিকৃৎ
এর ভূমিকা পালন করছে ।
আজকের ট্রেড ইউনিয়ন
সমূহের এর যৌথ গণ কনভেনশন সি.আই.টি.ইউ সহ আই.এন.টি.ইউ.সি-এ.আই. টি.ইউ.সি-বি.এম.এস-এইচ.এম.এস-ইউ.টি.ইউ.সি-টি.ইউ.সি.সি যোগ দেয় ।
যৌথ প্রস্তাব উথ্থাপন
ও ব্যাখ্যা করেন ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সি.আই.টি.ইউ এর বর্ধমান জেলা
কমিটির সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ চক্রবর্তী । বক্তব্য রেখেছেন প্রবীন শ্রমিক নেতা রথীন রায়
, দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর সি.পি.আই.( এম ) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় , স্টিল ওয়ার্কার্স
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (সি.আই.টি.ইউ ) এর সাধারন সম্পাদক পি.কে.দাস , ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের
অপর যুগ্ম আহ্বায়ক ও
আই.এন.টি.ইউ.সি-র বর্ধমান জেলা
কমিটির সভাপতি বিকাশ ঘটক,আমীর হায়দার (এ.আই. টি.ইউ.সি), অরূপ কুমার রায় (বি.এম.এস)
অনীত মল্লিক ( টি.ইউ.সি.সি ), সব্যসাচী গোস্বামী
(ইউ.টি.ইউ.সি ) সহ এ.এস.পি ও ডি.এস.পি কারখানার শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ।সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ১২ই
জুলাই কমিটির ও ব্যাঙ্ক কর্মীদের পক্ষে মধুসূদন খান ও ইস্কো আই.এন.টি.ইউ.সি-এর পক্ষে
হরজিন্দার সিং । সভাপতিত্ব করেন রথীন রায় । কনভেনশন থেকে আগামী ৯ই জানুঃ এস.ডি.ও দফ্তরে ( সিটি
সেন্টার ) গণ অনশন ও ১৮ই জানুঃ এ.এস.পি থেকে ডি.এস.পি কারখানার গেট পর্যন্ত মিছিলের
ডাক দেওয়া হয় ।
কনভেনশন স্হলে উপচে
পড়া ভীড় প্রমান করছে আসন্ন লড়াই এর জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ইস্পাত শ্রমিকরা ।
No comments:
Post a Comment