Friday 23 December 2016

শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদ কমিয়ে, ‘আচ্ছে দিন‘- এ শ্রমিকদের বড়দিনের ‘উপহার‘ দিলেন মোদী সরকার : শ্যামল চক্রবর্তী



দুর্গাপুর,২৩শে ডিসেঃ – আজ দুর্গাপুর ইস্পাতনগরী হর্ষবর্ধন রোডে ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ ) এর ডি.এস.টি.পি.এস ইউনিটের কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় , কেন্দ্র ও রাজ্যের উভয় সরকারে শ্রমিক ও শিল্প-বিরোধী মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করে এ কথা বলেন সি.আই.টি.ইউ এর পঃ বঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি ও ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী । তিনি বলেন যে শিল্পের ভয়ানক অধোগতি,দেশের শিল্প-তালিকায় পঃ বঙ্গের ১৩-তম স্হানে নেমে যাওয়া চোখে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে । কিন্তু এই পরিস্হিতির মধ্যেও , মুখ্যমনন্ত্রী একের পর এক তথাকথিত জাঁকজমক-পূর্ণ,’শিল্প মেলা ‘করে রাজ্যে শিল্প গড়ার নামে জনগনের পয়সা অপব্যয় ছাড়া কিছু করছেন না । অন্যদিকে শ্রমিক আন্দোলনে কে দমন করার নীতি নিয়েছেন । কিন্তু সি.আই.টি.ইউ কোন ভাবেই মাথা নোয়াবে না । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে,গত ৩৭ বৎসর ধরে ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন,শ্রমিক স্বার্থে  ডিভিসি তে লাগাতার লড়াই আন্দোলন চালিয়ে গেছে । এর ফলে, শ্রমিকরা সুবিধাবাদী ট্রেড ইউনিয়ন দের পরিত্যাগ করে, ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন কে আপন করে নিয়েছে এবং ইউনিয়ন স্বীকৃতি নির্বাচনে সি.আই.টি.ইউ কে বিপুলভাবে জয়ী করেছে । এর স্বীকৃতি স্বরূপ শেষ পর্যন্ত ডিভিসি ম্যানেজমেন্ট ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন কে কার্যালয় খুলতে অনুমতি দিয়েছে ।

অন্যদিকে নোট-বদলী নিয়ে জনসাধারনের হয়রানি অবিলম্ব বন্ধ করার দাবী জানিয়ে তিনি বলেন যে সি.আই.টি.ইউ কালো টাকা উদ্ধারের জন্য লাগাতার ভাবে দাবী জানিয়ে আসছে ,অথচ কেন্দ্রের মোদি সরকার কালো টাকার উদ্ধার করার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ । অন্যদিকে রাজ্যে সারদা-নারদা কেলেংকারিতে জনগনের লুন্ঠিত কোটি কোটি টাকা হদিশ ও বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রেও একই রকমের গড়িমসি , কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক গোষ্ঠীর গোপন বোঝাপড়া সামনে আসছে । তিনি অভিযোগ করেন বিরোধীদের তোলা প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত দূর্ণীতি সংক্রান্ত অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিজেপি সংসদের শীতকালীন অধিবেশন বানচাল করেছে । তিনি দাবী করেন যে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত দূর্ণীতি সংক্রান্ত অভিযোগ নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিতে হবে ।

জনসভা শুরুর আগে ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ ) এর ডি.এস.টি.পি.এস ইউনিটের কার্যালয়ের দ্বারোদঘাটন করেন শ্যামল চক্রবর্তী । ডি.এস.টি.পি.এস ইউনিটের চীফ ইঞ্জিনীয়র অ্যান্ড প্রজেক্ট হেড এস.এন.ঝা সহ অন্যান্য উচ্চ পদস্হ আধিকারিক  এই অনুষ্ঠানে উপস্হিত ছিলেন এবং শ্যামল চক্রবর্তীর সাথে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করেন ।

ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারন সম্পাদক  জীবন আইচ বক্তব্য রাখতে গিয়ে তুলে ধরেন যে কি ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক পদক্ষেপের ফলে ডিভিসির জলসেচ প্রকল্প ও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি ভয়াবহ বিপদের মুখোমুখি হয়ে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে । দুর্গাপুর ব্যারেজের পলি উত্তোলনের কাজ না হওয়ায় জন্য দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ভয়ংকর জল সংকটের মুখেোমুখি হয়ছে । সবচেয়ে উন্নতমানের রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বেসরকারী হাতে তুলে দিতে চাইছে । অন্যদিকে, রাজ্যে নতুন শিল্প হচ্ছে না,চালু কারখানা একটার পর একটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । তার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে , ডিভিসির সংকটের বোঝা বাড়ছে । এই সংকটের  থেকে পরিত্রানের সঠিক রাস্তা দেখাতে না পেরে,তা শ্রমিকদের উপরে সংকটের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বেসরকারীকরন-কর্মী সংকোচনের রাস্তায় হাঁটার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার । এই প্রসঙ্গে দুর্গাপুরের ডিটিপিএইচ বন্ধের সিদ্ধান্ত রুখে দেওয়ার  বিরুদ্ধে ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন সাফল্যের কথা উল্ল্যেখ করে তিনি সতর্ক করে বলেন যে আত্মসন্তুষ্টির কোন অবকাশ নেই, লাগাতার  আন্দোলন চলবে । অন্যদিকে পে-রিভিশন কে বেসরকারী সংস্হা দিয়ে করানোর চক্রান্ত চলছে বলে তিনি সতর্ক করে , অবিলম্বে ডিভিসি ম্যানেজমেন্ট কে স্বীকৃত ইউনিয়ন ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাথে পে-রিভিশন সংক্রান্ত আলোচনায় বসার দাবী জানিয়েছেন ।

দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর সি.পি.আই.( এম ) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় বলেন যে গোটা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ধুঁকছে । ৬ টি রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা ও ১৬ বেসরকারী কারখানা ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে । অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট  কে বেসরকারীকরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও ইস্পাতনগরীর বেসরকারীকরনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার । এই উদ্যোগ সফল হলে , গভীর সংকটে পড়বে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট । অন্যদিকে রাজ্য সরকারের সংস্হা দুর্গাপুর কেমিক্যালসকে বেসরকারীকরনের কথা ঘোষনা করা হয়ছে , চরম সংকটে পড়েছে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দুর্গাপুর প্রজেক্ট লিমিটেড ( ডি.পি.এল ) । ডি.পি.এল এর কোকওভেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের এই ভয়াবহ পরিনিতি বর্ধমান জেলা তথা রাজ্যের অর্থনীতি কে বিপর্যস্ত করবে এই আশংকা প্রকাশ করে , তিনি দুর্গাপুরের সাথে   জেলা তথা রাজ্য ব্যাপি বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান ।

এছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন ডি.এস.টি.পি.এস ইউনিটের সভাপতি নেপাল দে ও সম্পাদক শুভাশিষ গুপ্ত । উপস্হিত ছিলেন প্রবীন শ্রমিক নেতা রথীন রায় , নির্মল ভট্টাচার্য , মহাব্রত কুন্ডু , সুবীর সেনগুপ্ত  সহ অন্যান্য শ্রমিক ও গণ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং ডিভিসি শ্রমিক ইউনিয়ন ও ডি.এস.টি.পি.এস ইউনিটের অন্যান্য প্রাক্তন ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ ।সভার শুরুতে গণসংগীত পরিবেশন করে গণনাট্যের দুর্গাপুর ইস্পাত শাখার শিল্পীরা । সভাপতিত্ব করেন নেপাল দে ।



















No comments:

Post a Comment