দুর্গাপুর,১৪ই মার্চ
: আজ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সি.ই.ও এর দফ্তরের সামনে গণ অনশনের ( সকাল ৮টা থেকে
বিকাল ৫টা ) ধর্ণা মঞ্চ থেকে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বিক্রি রুখতে গণ প্রতিরোধের
ডাক দিল কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির নেতৃবৃন্দ । এই বিষয়ে বিভিন্ন বক্তা দাবি আদায়ের
উদাহরন হিসাবে মহারাষ্ট্রে কৃষক সভার নেতৃত্বে কৃষকদের লঙ মার্চ এর সাফল্যের কথা তুলে
ধরেন । আগামী ১১ই এপ্রিল ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট
‘ এর পোষাকি নামের আড়ালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বিক্রির দরপত্র ( টেন্ডার ) জমা
দেওয়ার শেষ দিন । আগামী ২রা মে দরপত্র প্রকাশের দিন । এই নিয়ে দুর্গাপুরে উত্তেজনার
পারদ চড়ছে । গত দেড় বছর ধরে যৌথমঞ্চের পক্ষ থেকে ইস্পাত শ্রমিক ও দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের
নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট এর প্রস্তাবিত বিলগ্নীকরন রুখতে ও দুর্গাপুর
ইস্পাতের আধুনিকীকরন-সম্প্রসারনের দাবীতে কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির যৌথমঞ্চ লড়াই-আন্দোলন
পরিচালনা করছে ।
মোদি সরকারের প্রস্তাবিত স্ট্র্যাটেজিক
ডিসইনভেষ্টমেন্টের তালিকায় সেইলের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সালেম ও ভদ্রাবতী থাকলেও
যথাক্রমে তমিলনাড়ু ও কর্নাটক সরকারের প্রকাশ্যে তীব্র আপত্তি থাকায় কোন সংস্হা ‘এক্সপ্রেশন
অফ ইন্টারেষ্ট ‘ দেখানোর সাহস পায় নি । কেন একই অবস্হান গ্রহন করে পঃ বঙ্গ সরকার অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসছেন না ? - এই প্রশ্ন এখন দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের
মুখে মুখে ঘুরছে । গোটা দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে শিল্পে যেন মড়ক লেগেছে ।
বেসরকারি কল-কারখানার সাথে সাথে এই মড়ক ছড়িয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন শিল্প সংস্হায়
। বন্ধ হয়েছে হিন্দুস্হান কেবলস । বন্ধের মুখে বার্ণ স্ট্যান্ডার্ড । ধুঁকছে ডিটিপিএস
। অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রি রোখা না গেলে গভীর সংকটে পরবে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা
। ইতিমধ্যে কেন্দ্রিয় সরকার কয়লা শিল্পের বেসরকারিকরনের নির্দেশ জারি করেছে । ফলে রাজ্যের
সবচেয়ে শিল্প-সমৃদ্ধ দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলের সাথে সাথে রাজ্যের অর্থনীতির সংকট
ভয়াবহ রূপ ধারন করতে চলেছে । পলি পড়ে শুকিয়ে যেতে বসেছে দামোদর ও সংলগ্ন সেচ-খাল ।এর
ফলে গ্রীষ্ম কালে দুর্গাপুরে জল-সংকট চরম আকার নিচ্ছে , বর্ষায় শহর ভাসছে । শিল্পের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনায় পিছিয়ে নেই রাজ্য সরকারও । দুর্গাপুর কেমিক্যালস এর ১০০% বেসরকারীকরন
, দুর্গাপুর প্রজেক্ট লিমিটেড ( ডিপিএল ) এর কোক ওভেন বন্ধ সহ রুগ্নতার দিকে ঠেলে দেওয়া
, যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা অণ্ডালে প্রস্তাবিত বিমান নগরীর জায়গায় কেবল বিমান ওঠা-নামার
মধ্য সীমাবদ্ধ করা এবং তাও প্রায় বন্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া – এই সবই রাজ্যের তৃনমূল সরকারে
মোদি সরকারে নীতির অনুসরন এর সাক্ষ্য দিচ্ছে । নতুন শিল্পের কোন নাম-গন্ধ নেই । নতুন
কাজ সৃষ্টি হচ্ছে না । কর্মরতরা নতুন করে বেকার হচ্ছে । দুর্গাপুর ‘দুর্দশাপুর‘ হওয়ার
দিকে এগোচ্ছে ।
এই অবস্হায় অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্টের বিক্রি বাতিল , অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার
আধুনিকিকরন ও সম্প্রসারনের দাবিতে কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির (সিআইটিইউ-আইএনটিইউসি-এআইটিউসি-এইইউটিইউসি-ইউটিইউসি)
যৌথমঞ্চ লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে । সাম্প্রতিক কালে পুনরায় যোগ দিয়েছে বিএমএস ।
আজ যৌথমঞ্চের ডাকে
গণ অনশন ও ধর্নায় বসেন অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিকরা
। ধর্না মঞ্চে এসে যোগ দেন ছাত্র-যুব-মহিলা সহ অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত শ্রমিকরা । সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সংলগ্ন কয়লা শিল্পের শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ,বর্তমান
ও প্রাক্তন সাংসদ-বিধায়ক সহ যৌথমঞ্চ ও ইস্পাত শ্রমিক আন্দোলনের ও অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত
শ্রমিকদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ । অনশন-বিক্ষোভ
চলাকালিন সময়ে যৌথমঞ্চের এক প্রতিনিধিদল সি.ই.ও দফ্তরে অবিলম্বে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের
বিক্রি বাতিল , অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন ও সম্প্রসারনের
দাবিতে স্মারক লিপি জমা দেয় ।
বক্তব্য রেখেছেন যৌথমঞ্চের
যুগ্ম আহ্বায়ক বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী ও বিকাশ ঘটক , দুর্গাপুরের প্রাক্তন সাংসদ
সুনীল খান ও সেখ সাইদুল হক , রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ জীবনবিহারী রায় ও আর.পি.সিং
, পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জী, দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর বিধায়ক
সন্তোষ দেবরায় ,এসডব্লুএফআই এর সম্পাদক পি.কে.দাস, বিশ্বরূপ ব্যানার্জী,বিশ্বজিত বিশ্বাস,
আমির হায়দার,শম্ভুনাথ প্রামানিক,অনিত মল্লিক,বিশ্বনাথ মন্ডল,শিবু দাস,মলয় ভট্টাচার্য
,বিজয় সাহা,অরূপ রায় ,অশোক চক্রবর্তী প্রমূখ । সভাপতিত্ব করেন রথীন রায় ।
No comments:
Post a Comment