Wednesday 21 March 2018

যত দুর দেখা যায় শুধু মানুষ : অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধের এর দাবিতে মহামিছিলে জন সুনামি ।




দুর্গাপুর,২১শে মার্চ : মোদি সরকারের বেসরকারীকরনের করালগ্রাসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইলের ৫০০ রকমের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদনকারি সংস্হা দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল কারখানা । বিপন্ন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা । শিল্পনগরী দুর্গাপুরের দুই স্তম্ভ অ্যালয় স্টিল কারখানাও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কেবল বিপন্ন তাই নয় । আগেই বন্ধ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব এম.এ.এম.সি-ফার্টিলাইজার সহ অন্যান্য ২০টি কারখানা । ধুঁকছে কেন্দ্রীয় তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারি সংস্হা  ডি.টি.পি.এস , রাজ্য সরকারি তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারি সংস্হা  ডি.পি.এল । ১০০ শতাংশ বিলগ্নিকরনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে রাজ্য সংস্হা দুর্গাপুর কেমিক্যালস । সংলগ্ন কয়লা অঞ্চলও কেন্দ্রীয় সরকারে ঘোষিত বেসরকারীকরনের বিভিষীকার মুখোমুখি । দুর্গাপুর-আসানসোল প্রত্যক্ষ করছে কেন্দ্রীয় সরকার ও তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলা রাজ্য সরকারের কারখানা ধ্বংস করার নীতি । নতুন কোন শিল্প আসছে না । বেকারদের কাজ নেই । কর্মরতরা নতুন করে হারাচ্ছে । এই অবস্হায় নোবেল-জয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান যে ভারতের মহ-বেকারিত্ব এর শংকা করেছেন ,তার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শি  হতে চলেছে একদা ভারতের অন্যতম শিল্পাঞ্চল , ভারতের ‘রুঢ়’ নামে খ্যাত দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল ।
গত দেড় বছর ধরে অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধ এবং অ্যালয় স্টিল কারখানা ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের এর দাবীতে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির যৌথমঞ্চ লড়াই চালাচ্ছে । ১৫০-র বেশী বিক্ষোভ কর্সূচী হয়েছে । হাজার হাজার ইস্পাত শ্রমিক ( স্হায়ী ও ঠিকা উভয়ে ),অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত শ্রমিক সহ দুর্গাপুরের মানুষ এই সংগ্রামে সামিল হয়েছেন । দুর্গাপুর ছাড়িয়ে কোলকাতা ও দিল্লির বুকে জমায়েত হয়েছে । লড়াই এর পাশে প্রত্যক্ষ ভাবে দাঁড়িয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রিয় সি.আই.টি.ইউ । সংসদে তপন সেন সহ অন্যান্য বিভিন্ন দলের সাংসদরা অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধের বিরোধিতা করেছেন । গত বছরে বিক্রি বন্ধের বিরোধিতায় ৯২% শ্রমিক অ্যালয় স্টিলের ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন । কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে রাজ্য সরকার নিরব ! মোদি সরকারের প্রস্তাবিত স্ট্র্যাটেজিক ডিসইনভেষ্টমেন্টের তালিকায় সেইলের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সালেম ও ভদ্রাবতী থাকলেও যথাক্রমে তমিলনাড়ু ও কর্নাটক সরকারের প্রকাশ্যে তীব্র আপত্তি থাকায় কোন সংস্হা ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেষ্ট ‘ দেখানোর সাহস পায় নি । কেন একই অবস্হান গ্রহন করে পঃ বঙ্গ সরকার অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসছেন না ? - এই প্রশ্ন এখন দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরছে । ইতিমধ্যে দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর সি.পি.আই.( এম ) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় ও রাজ্যে বাম পরিষদীয় দলনেতা সূজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানালেও কোন ফল হয় নি । ফলে দুর্গাপুরের মানুষের মনে কেন্দ্রের ভূমিকার সাথে সাথে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ জেগেছে ।
আগামী ১১ই এপ্রিল ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট ‘ এর পোষাকি নামের আড়ালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বিক্রির দরপত্র ( টেন্ডার ) জমা দেওয়ার শেষ দিন । আগামী ২রা মে দরপত্র প্রকাশের দিন ।
 এই অবস্হায়  অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বিক্রি রুখতে, অ্যালয় স্টিল কারখানা ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা বাঁচাতে গণ প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ-আই.এন.টি.ইউ.সি-বি.এম.এস-এ.আই.টি.ইউ.সি-এ.আই.ইউ.টি.ইউ.সি-টি.ইউ.সি.সি) গুলির যৌথমঞ্চ ।
আজকের বিকালে এই মহামিছিল ভিড়িঙ্গী মোড় থেকে শুরু হয়ে,বেনাচিতি বাজারের মধ্য দিয়ে গিয়ে ইস্পাতনগরীর পাঁচমাথা মোড়ে শেষ হয় । হাজার হাজার ইস্পাত শ্রমিক ( স্হায়ী ও ঠিকা উভয়ে ),অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত শ্রমিক সহ ব্যাঙ্ক-বি.এস.এন.এল-ডিপিএল-ডিভিসির শ্রমিকরা,ব্যাঙ্কের অফিসার,বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ছাত্র-যুব-মহিলারা এই এই মহামিছিল যোগ দেন । মিছিলে শ্লোগান ওঠে – জান কবুল তবু অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট কে বিক্রি করতে দেব না ।
 মিছিলে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দেন যৌথমঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী ও বিকাশ ঘটক , প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় ,রথিন রায়,বিশ্বরূপ ব্যানার্জী,বিশ্বজিত বিশ্বাস, বিশ্বনাথ মন্ডল, শম্ভুনাথ প্রামানিক, অরূপ রায়, মলয় ভট্টাচার্য ,বিজয় সাহা প্রমূখ । মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ ।


















No comments:

Post a Comment