Wednesday 28 March 2018

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই এর পথ দেখাচ্ছে দুর্গাপুর : অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধের এর দাবিতে মিছিল-আইন অমান্য কর্মসূচি-বিক্ষোভ সমাবেশে জনজোয়ার




দুর্গাপুর,২৮শে মার্চ : রাজ্য ও জেলার বিভিন্ন অংশে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুন ছড়িয়ে পড়ছে তখন আজ দুপুরে আশিষ-জব্বারের শহিদভূমি দুর্গাপুর ঐক্য ও সংগ্রামের আরও এক অন্যন্য নজির তৈরি করল । আজ দুপুরে অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধ এবং অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের এর দাবিতে দুর্গাপুরে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির যৌথমঞ্চ এর ডাকে বিশাল মিছিল এবং এস.ডি.ও দফ্তরে  আইন-অমান্য বিক্ষোভ-সমাবেশে হাজার হাজার ইস্পাত শ্রমিক ও মেহেনতি মানুষের কন্ঠে আওয়াজ উঠল – লড়াই কা ময়দান মে মজদুর মজদুর ভাই ভাই । আওয়াজ উঠল শ্রমিক ঐক্যের দূর্গ কে আরও মজবুত করার।
মোদি সরকারের বেসরকারীকরনের করালগ্রাসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইলের ৫০০ রকমের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদনকারি সংস্হা দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল কারখানা । বিপন্ন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা । শিল্পনগরী দুর্গাপুরের দুই স্তম্ভ অ্যালয় স্টিল কারখানাও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কেবল বিপন্ন তাই নয় । আগেই বন্ধ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব এম.এ.এম.সি-ফার্টিলাইজার সহ অন্যান্য ২০টি কারখানা । ধুঁকছে কেন্দ্রীয় তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারি সংস্হা  ডি.টি.পি.এস , রাজ্য সরকারি তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারি সংস্হা  ডি.পি.এল । ১০০ শতাংশ বিলগ্নিকরনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে রাজ্য সংস্হা দুর্গাপুর কেমিক্যালস । সংলগ্ন কয়লা অঞ্চলও কেন্দ্রীয় সরকারে ঘোষিত বেসরকারীকরনের বিভিষীকার মুখোমুখি । দুর্গাপুর-আসানসোল প্রত্যক্ষ করছে কেন্দ্রীয় সরকার ও তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলা রাজ্য সরকারের কারখানা ধ্বংস করার নীতি । নতুন কোন শিল্প আসছে না । বেকারদের কাজ নেই । কর্মরতরা নতুন করে হারাচ্ছে । এই অবস্হায় নোবেল-জয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান যে ভারতের মহ-বেকারিত্ব এর শংকা করেছেন ,তার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শি  হতে চলেছে একদা ভারতের অন্যতম শিল্পাঞ্চল , ভারতের ‘রুঢ়’ নামে খ্যাত দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল ।
গত দেড় বছর ধরে অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধ এবং অ্যালয় স্টিল কারখানা ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের এর দাবীতে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির যৌথমঞ্চ লড়াই চালাচ্ছে ।ধারাবাহিক ভাবে ১৫০-র বেশী বিক্ষোভ কর্সূচী হয়েছে । হাজার হাজার ইস্পাত শ্রমিক ( স্হায়ী ও ঠিকা উভয়ে ),অবসরপ্রাপ্ত ইস্পাত শ্রমিক সহ দুর্গাপুরের মানুষ এই সংগ্রামে সামিল হয়েছেন । দুর্গাপুর ছাড়িয়ে কোলকাতা ও দিল্লির বুকে জমায়েত হয়েছে । লড়াই এর পাশে প্রত্যক্ষ ভাবে দাঁড়িয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রিয় সি.আই.টি.ইউ । সংসদে তপন সেন সহ অন্যান্য বিভিন্ন দলের সাংসদরা অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধের বিরোধিতা করেছেন । গত বছরে বিক্রি বন্ধের বিরোধিতায় ৯২% শ্রমিক অ্যালয় স্টিলের ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন । কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে রাজ্য সরকার নিরব ! মোদি সরকারের প্রস্তাবিত স্ট্র্যাটেজিক ডিসইনভেষ্টমেন্টের তালিকায় সেইলের বিশেষ ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সালেম ও ভদ্রাবতী থাকলেও যথাক্রমে তমিলনাড়ু ও কর্নাটক সরকারের প্রকাশ্যে তীব্র আপত্তি থাকায় কোন সংস্হা ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেষ্ট ‘ দেখানোর সাহস পায় নি । কেন একই অবস্হান গ্রহন করে পঃ বঙ্গ সরকার অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসছেন না ? - এই প্রশ্ন এখন দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরছে । ইতিমধ্যে দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর সি.পি.আই.( এম ) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় ও রাজ্যে বাম পরিষদীয় দলনেতা সূজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানালেও কোন ফল হয় নি । ফলে দুর্গাপুরের মানুষের মনে কেন্দ্রের ভূমিকার সাথে সাথে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ জেগেছে ।
আগামী ১১ই এপ্রিল ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট ‘ এর পোষাকি নামের আড়ালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বিক্রির দরপত্র ( টেন্ডার ) জমা দেওয়ার শেষ দিন । আগামী ২রা মে দরপত্র প্রকাশের দিন ।
 এই অবস্হায়  অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বিক্রি রুখতে, অ্যালয় স্টিল কারখানা ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা বাঁচাতে গণ প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ-আই.এন.টি.ইউ.সি-বি.এম.এস-এ.আই.টি.ইউ.সি-এ.আই.ইউ.টি.ইউ.সি-টি.ইউ.সি.সি) গুলির যৌথমঞ্চ ।
আজ দুপুরে গান্ধী মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে এস.ডি.ও দফ্তরে  যায় । সেখানে প্রথমে আইন-অমান্য ও পরে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয় । মিছিল চলাকালিন সিটি সেন্টারের মূল রাস্তা কিছু ক্ষনের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পরে । পরে বিক্ষোভ-সমাবেশ চলাকালিন এস.ডি.ও দফ্তর ও দুর্গাপুর কোর্ট চত্বর অবরুদ্ধ হয় ।মিছিলে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দেন যৌথমঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী ও বিকাশ ঘটক , দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় , প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তি ,রথিন রায়, বিশ্বরূপ ব্যানার্জী,বিশ্বজিত বিশ্বাস, শম্ভুনাথ প্রামানিক, শিবপ্রসাদ দাস,অরূপ রায়,অনিত মল্লিক, মলয় ভট্টাচার্য ,বিজয় সাহা,পঙ্কজ রায় সরকার,সুবীর সেনগুপ্ত প্রমূখ । বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ । তারা দাবি মতন  অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধ এবং অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের উদ্যোগ না নেওয়া হলে , আন্দোলন আরও তীব্রতর করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ও ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন । সমাবেশ চলাকালিন যৌথমঞ্চের এক প্রতিনিদল মহকুমা শাসক শংখ সাঁতরার  সাথে দেখা করে প্রধানমন্ত্রি ও মুখ্যমন্ত্রির উদ্দেশ্য লেখা যৌথমঞ্চের পক্ষ থেকে লেখা দুটি চিঠি তার মাধ্যমে পাঠানোর জন্য তুলে দেয় । চিঠিতে প্রধানমন্ত্রি ও মুখ্যমন্ত্রির কাছে অবিলম্বে অ্যালয় স্টিলের বিক্রি বন্ধ এবং অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছে ।












No comments:

Post a Comment