Saturday 12 September 2020

দুর্গাপুর ইস্পাতে গ্যাস পাইপ লাইনে আগুন,দূর্ঘটনা : কর্তৃপক্ষের দিকে আঙ্গুল তুললেন বিধায়ক,সিআইটিইউ ।

 



দুর্গাপুর,১২ই সেপ্টেঃ : গত কাল রাতে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে হটাৎ করে আগুন লেগে যায় । দূর্ঘটনাস্হলের কাছেই ছিল প্ল্যান্টের নিজস্ব পেট্রোল পাম্প সহ প্ল্যান্ট মেডিক্যাল,সিন্ট্যার প্ল্যান্ট,র’মেটেরিয়ালস হ্যান্ডেলিং প্ল্যান্ট সহ বিবিধ গুরুত্বপূর্ন বিভিন্ন বিভাগ । দমকলের দুটি গাড়ি সহ শ্রমিক ও আধিকারিকদের আপ্রান চেষ্টায় আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয় । না হলে বড়সড় দূর্ঘটনা ও জীবনহানি-সম্পত্তিহানির আশংকা ছিল । এদিকে এই দূর্ঘটনা ঘিরে কারখানা ও ইস্পাতনগরীতে যুগপৎ আতঙ্ক ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে । দুর্গাপুর ( পূর্ব )-এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত দমকল কর্মী,শ্রমিক,আধিকারিক ও নিরাপত্তা কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন । পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা করে এই দূর্ঘটনার জন্য তিনি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষের ধারাবাহিক গাফিলতি কে দায়ী করেছেন । তিনি বলেন যে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে ধারাবাহিকভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে কারখানার যন্ত্রপাতি-গ্যাস পাইপ লাইন সহ অন্যান্য বিষয়ে রক্ষণাবেক্ষন ও উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধানের দাবি জানানো হয়েছে,আন্দোলন হলেও কর্তৃপক্ষ না শোনার ভান করছে । ফলে কারখানায় দূর্ঘটনা বেড়েই চলছে । বাড়ছে মৃত ও আহতের সংখ্যা বাড়ছে।শ্রমিক-আধিকারিকদের নিরন্তর চেষ্টায় করোনা পরিস্হিতির মধ্যেও কারখানার উৎপাদন অব্যাহত আছে।যখন উৎপাদন বজায় রাখার জন্য শ্রমিক-আধিকারিকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন,তখন কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষন ও উপযুক্ত নিরাপত্তা নিয়ে এই ধরনের গাফিলতি শ্রমিক-আধিকারিকদের মনের উপরে চাপ সৃষ্টি করবে । ফলে উৎপাদনের ওপরে এর প্রভাব পড়তে পারে । গত কালের দূর্ঘটনা ভয়াবহ আকার নিলে কেবল দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ক্ষতি হত না,গোটা দুর্গাপুরের বিপদ ডেকে আনতে পারত । তাই কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে কারখানার রক্ষণাবেক্ষন ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়-বরাদ্দ বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংগঠনের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।একই সাথে বিধায়ক কারখানায় করোনা সংক্রমন বেড়ে চলায় চলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে সংক্রমন প্রতিরোধে ,সু-চিকিৎসা ও রোগী পরিচর্যার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন । করোনায় মৃ্ত্যু হলে মৃত শ্রমিক-আধিকারিকের পোষ্যের চাকরী সহ উপযুক্ত ক্ষতিপূরনের দাবি জানয়েছেন ।

হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সিআইটিইউ) এর পক্ষ থেকে বিশ্বরূপ ব্যানার্জি বলেছেন যে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কে এই দূর্ঘটনার ফলে অনেক বড় মাশুল দিতে হত ।যদি কর্তৃপক্ষ এখনই সতর্ক না হয়,তাহলে এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও,আগামীদিনে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় আরও বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কে ‘রক্তপাত-শূন্য’ ইস্পাত কারখানায় পরিনত করতে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সিআইটিইউ) এর পক্ষ বারে বারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে,আন্দোলন করা হয়েছে । কিন্তু কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করে নি । সেফটি কমিটি ও বিভাগীয় সেফটি কমিটির সাথে আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছে । পুরনো নক্সায় তৈরি কারখানায় ঘিঞ্জি অবস্হা তৈরি হয়েছে । সম্প্রসারন করা হলে এই সমস্যা মিটত । কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা করে নি । দক্ষ স্হায়ী শ্রমিক নিয়োগ হচ্ছে না । পাঁচ থেকে সারে পাঁচ হাজার ঠিকা শ্রমিক কারখানায় কাজ করেন । অথচ দূর্ণীতি-কাটমানি-অবাধ শোষনের জন্য ২৭-২৮ হাজার ঠিকা শ্রমিকের সেফটি ক্লীয়ারেন্স করিয়ে রাখা হয়েছে । ফলে ঠিকা শ্রমিকদের স্হায়ীত্বের অভাবে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে । ফলে দূর্ঘটনা-আহত-নিহতের সংখ্যা বাড়ছে । এ দিকে চুক্তি অনুসারে কর্মরত অবস্হায় মৃত তিন শ্রমিক ও এক আধিকারিকের পোষ্য এর চাকরি দেওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও টালবাহানা করছে । কর্তৃপক্ষ একদিকে কারখানার রক্ষণাবেক্ষন ও সুরক্ষা-নিরাপত্তা,অন্যদিকে শ্রমিক- আধিকারিকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে । অবিলম্বে ইউনিয়নের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে ইউনিয়নদের সাথে আলোচনা শুরু ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সিআইটিইউ) এর পক্ষ থেকে অন্যান্য ইউনিয়নদের সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বিশ্বরূপ ব্যানার্জি জানিয়েছেন ।

No comments:

Post a Comment