দুর্গাপুর,৮ই সেপ্টেঃ : স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পের মানচিত্রে
দুর্গাপুর খুব গুরুত্বপূর্ণ স্হান গ্রহন করেছে । পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে ভারতের ‘রূঢ়’
অঞ্চল বলে দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্প ও খনি অঞ্চলের অসামান্য অবদান সর্জনবিদিত । এ হেন
দুর্গাপুরে তৎকালীন কেন্দ্রে বাজপায়ী নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার(যে মন্ত্রীসভার অন্যতম
মন্ত্রী ছিলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি)এর আমলে দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ব
কারখানা বন্ধ ও ধংস্ব করার কাজ শুরু হয়ে যায় । সেই সময় একে একে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ব
কারখানা এমএএমসি,ফার্টিলাইজর ও ভারত অপথ্যালমিক । ২০১১ সালে রাজ্যে তৃনমূল ও ২০১৪ সালে
কেন্দ্রে মোদি সরকার আসার পরে নতুন করে দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা গুলিতে বিপদ
ঘনিয়ে এসেছে । ইতিমধ্যে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রি করার জন্য মোদি সরকার ও দুর্গাপুর
কেমিক্যালস বিক্রি করার উদ্যোগ এবং রাজ্য সরকার পরিচালনাধীন ডিপিএল এর কোক ওভেন বন্ধ
করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে । তার মাঝে নতুন এক বিপদের উদয় হয়েছে । বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা
এমএএমসি,ফার্টিলাইজর ও ভারত অপথ্যালমিক কারখানার যন্ত্রপাতি সহ মায় ইট পর্যন্ত খুলে
নিয়ে চলছে অবাধে লুঠপাঠ । এই লুঠপাঠের করাল গ্রাসে পড়েছে দুর্গাপুরের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ব
কারখানা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা । এই বিষয়ে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন(সিআইটিইউ)
এর পক্ষ থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে জানিয়েও কোন
লাভ হয় নি । গত ৫ই সেপ্টেঃ দুর্গাপুর ( পূর্ব )-এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় কেন্দ্রীয়
ইস্পাত মন্ত্রী এই বিষয়ে একটি চিঠিতে সবিস্তারে জানিয়ে কিভাবে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা
ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের জমির এবং ইস্পাতনগরীর কোয়ার্টার-জমির অবৈধ দখল-হস্তান্তর চলছে তা তুলে ধরে হস্তক্ষেপের
দাবি করেছেন । তিনি দেখিয়েছেন যে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা তৈরি হওয়ার সময়ে অধীগৃহীত
১৫৮৭২ একর জমি দুর্গাপুর ইস্পাত কে হস্তান্তরিত করা হয়। এই জমির মধ্যে ২৯৮৪ একর জমি
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট তৈরি,১৮৮৭ একর জমি ইস্পাতনগরী ও
৫০০ একর জমি শ্রমিক-আধিকারিকদের বিভিন্ন সমবায় আবাসনের জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে । বাকি
অব্যবহৃত জমির এক বড় অংশ বেআইনী দখলদারদের হাতে চলে গেছে ও সেই জমি বিক্রী করে কিছু
অসাধু ব্যাক্তি ব্যবসা করছেন । অথচ এই অব্যবহৃত জমি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্টের আধুনিকীকরন-সম্প্রসারনের কাজে ব্যবহার করা যায় । অন্যদিকে ইস্পাতনগরীতে
মোট কোয়ার্টারের সংখ্যা ১৯১৪১ । বর্তমানে দুই কারখানায় কর্মরতের সংখ্যা ৯০০০ এর কাছাকাছি
। ৮৬৫১ টি কোয়ার্টার লিজ/লাইসেন্সের মাধ্যমে কর্মরত/অবসরপ্রাপ্তদের দেওয়া হয়েছে । ১৩৩৭টি কোয়ার্টার
বিভিন্ন সরকারী সংস্হা,পুলিশ কে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে । কর্মরত/অবসরপ্রাপ্তরা দীর্ঘদিন ধরে
অব্যবহৃত কোয়ার্টার ও জমির লিজ/লাইসেন্সিং এর দাবি জানালেও দুর্গাপুর ইস্পাতের কর্তৃপক্ষ
সেইলের গাইড লাইন থাকা সত্বেও কোন এক অজানা কারনে লিজ/লাইসেন্সিং শুরু করছে না বলে
বিধায়ক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । তিনি অভিযোগ করেছেন যে খালি-অব্যবহৃত কোয়ার্টার ও স্কুল
বিল্ডিং গুলি সমাজবিরোধী কার্যকলাপের আখড়া হয়ে উঠেছে । অন্যদিকে সুপ্রীম কোর্টের রায়
থাকা সত্বেও কোয়ার্টারে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচ্যুইটি আটকে রাখার জন্য দুর্গাপুর
ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা করে ইস্পাত
মন্ত্রী কে অবিলম্বে এই সব অবসরপ্রাপ্তদের বকেয়া গ্র্যাচ্যুইটি তৎপরতর সাথে দেওয়ার
আবেদন জানিয়েছেন । পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা এমএএমসি,ফার্টিলাইজর ও ভারত অপথ্যালমিক
এর জমি-সম্পত্তি রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কে উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানিয়েছেন ।
এ দিকে এক সাম্প্রতিক আরটিআই এর মাধ্যমে জনা তথ্যে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বেসরকারীকরনের
তালিকাভুক্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দুর্গাপুর ( পূর্ব )-এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়
জনিয়েছেন যে যদি এই সংবাদ সত্য হয় তা হলে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বেসরকারীকরন-বিরোধী
আন্দোলনের মতই এ ক্ষেত্রে তীব্র ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে । অন্যদিকে আজ সকালে
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মেইন গেটে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন(সিআইটিইউ)
এর পক্ষ থেকে আয়োজিত সংহতি সভায় বিপিসিএল এ দু-দিন ব্যাপি বেসরকারীকরন-বিরোধী ধর্মঘটের
প্রতি সংহতি জানানো হয় ।
No comments:
Post a Comment