Tuesday 8 September 2020

দুর্গাপুর জুড়ে অবাধে চলছে রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানার জমি-সম্পত্তির লুঠ : ইস্পাত মন্ত্রী কে চিঠি সিপিআই-এম বিধায়কের ।

 


দুর্গাপুর,৮ই সেপ্টেঃ : স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পের মানচিত্রে দুর্গাপুর খুব গুরুত্বপূর্ণ স্হান গ্রহন করেছে । পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে ভারতের ‘রূঢ়’ অঞ্চল বলে দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্প ও খনি অঞ্চলের অসামান্য অবদান সর্জনবিদিত । এ হেন দুর্গাপুরে তৎকালীন কেন্দ্রে বাজপায়ী নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার(যে মন্ত্রীসভার অন্যতম মন্ত্রী ছিলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি)এর আমলে দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা বন্ধ ও ধংস্ব করার কাজ শুরু হয়ে যায় । সেই সময় একে একে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা এমএএমসি,ফার্টিলাইজর ও ভারত অপথ্যালমিক । ২০১১ সালে রাজ্যে তৃনমূল ও ২০১৪ সালে কেন্দ্রে মোদি সরকার আসার পরে নতুন করে দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা গুলিতে বিপদ ঘনিয়ে এসেছে । ইতিমধ্যে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বিক্রি করার জন্য মোদি সরকার ও দুর্গাপুর কেমিক্যালস বিক্রি করার উদ্যোগ এবং রাজ্য সরকার পরিচালনাধীন ডিপিএল এর কোক ওভেন বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে । তার মাঝে নতুন এক বিপদের উদয় হয়েছে । বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা এমএএমসি,ফার্টিলাইজর ও ভারত অপথ্যালমিক কারখানার যন্ত্রপাতি সহ মায় ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে চলছে অবাধে লুঠপাঠ । এই লুঠপাঠের করাল গ্রাসে পড়েছে দুর্গাপুরের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা । এই বিষয়ে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন(সিআইটিইউ) এর পক্ষ থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে জানিয়েও কোন লাভ হয় নি । গত ৫ই সেপ্টেঃ দুর্গাপুর ( পূর্ব )-এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী এই বিষয়ে একটি চিঠিতে সবিস্তারে জানিয়ে কিভাবে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের জমির এবং ইস্পাতনগরীর কোয়ার্টার-জমির  অবৈধ দখল-হস্তান্তর চলছে তা তুলে ধরে হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন । তিনি দেখিয়েছেন যে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা তৈরি হওয়ার সময়ে অধীগৃহীত ১৫৮৭২ একর জমি দুর্গাপুর ইস্পাত কে হস্তান্তরিত করা হয়। এই জমির মধ্যে ২৯৮৪ একর জমি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট তৈরি,১৮৮৭ একর জমি ইস্পাতনগরী ও ৫০০ একর জমি শ্রমিক-আধিকারিকদের বিভিন্ন সমবায় আবাসনের জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে । বাকি অব্যবহৃত জমির এক বড় অংশ বেআইনী দখলদারদের হাতে চলে গেছে ও সেই জমি বিক্রী করে কিছু অসাধু ব্যাক্তি ব্যবসা করছেন । অথচ এই অব্যবহৃত জমি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের আধুনিকীকরন-সম্প্রসারনের কাজে ব্যবহার করা যায় । অন্যদিকে ইস্পাতনগরীতে মোট কোয়ার্টারের সংখ্যা ১৯১৪১ । বর্তমানে দুই কারখানায় কর্মরতের সংখ্যা ৯০০০ এর কাছাকাছি । ৮৬৫১ টি কোয়ার্টার লিজ/লাইসেন্সের মাধ্যমে  কর্মরত/অবসরপ্রাপ্তদের দেওয়া হয়েছে । ১৩৩৭টি কোয়ার্টার বিভিন্ন সরকারী সংস্হা,পুলিশ কে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে । কর্মরত/অবসরপ্রাপ্তরা দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত কোয়ার্টার ও জমির লিজ/লাইসেন্সিং এর দাবি জানালেও দুর্গাপুর ইস্পাতের কর্তৃপক্ষ সেইলের গাইড লাইন থাকা সত্বেও কোন এক অজানা কারনে লিজ/লাইসেন্সিং শুরু করছে না বলে বিধায়ক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । তিনি অভিযোগ করেছেন যে খালি-অব্যবহৃত কোয়ার্টার ও স্কুল বিল্ডিং গুলি সমাজবিরোধী কার্যকলাপের আখড়া হয়ে উঠেছে । অন্যদিকে সুপ্রীম কোর্টের রায় থাকা সত্বেও কোয়ার্টারে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচ্যুইটি আটকে রাখার জন্য দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা করে ইস্পাত মন্ত্রী কে অবিলম্বে এই সব অবসরপ্রাপ্তদের বকেয়া গ্র্যাচ্যুইটি তৎপরতর সাথে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন । পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা এমএএমসি,ফার্টিলাইজর ও ভারত অপথ্যালমিক এর জমি-সম্পত্তি রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কে উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানিয়েছেন ।

এ দিকে এক সাম্প্রতিক আরটিআই এর মাধ্যমে জনা তথ্যে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বেসরকারীকরনের তালিকাভুক্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দুর্গাপুর ( পূর্ব )-এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় জনিয়েছেন যে যদি এই সংবাদ সত্য হয় তা হলে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বেসরকারীকরন-বিরোধী আন্দোলনের মতই এ ক্ষেত্রে তীব্র ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে । অন্যদিকে আজ সকালে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মেইন গেটে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন(সিআইটিইউ) এর পক্ষ থেকে আয়োজিত সংহতি সভায় বিপিসিএল এ দু-দিন ব্যাপি বেসরকারীকরন-বিরোধী ধর্মঘটের প্রতি সংহতি জানানো হয় ।





No comments:

Post a Comment