দুর্গাপুর , ৫ই মার্চ – আজ সকালে
দুর্গাপুর ইস্পাতনগরীর স্টেডিয়াম চত্বর , যেখানে রয়েছে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার নেহেরু
স্টেডিয়াম ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের স্টেডিয়াম , সেখানে দলে দলে বিভিন্ন খেলার সাথে
যুক্ত ক্রীড়াবিদরা জড়ো হতে শুরু করেন । তারা জড়ো হলেন এক ঐতিহাসিক দৌড়ে অংশ নিতে ।
শহর দুর্গাপুর অনেক দৌড়ের সাক্ষী । এই শহর দেখেছে কিংবদন্তী দৌড়বিদ এমিল ও ডানা জাটোপেকের
দৌড় । সাক্ষী রয়েছেন অসংখ্য ভারত-বিখ্যাত ক্রীড়াবিদের
ক্রীড়া নৈপুন্যের । কিন্তু আজ সকালে এক নয়া দৌড় শুরু করলেন দুর্গাপুরের খেলোয়াররা
– নিজের শহরের কারখানা বাঁচাতে, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্হা বাঁচাতে । সারা বিশ্বে এমন নজির
মেলা ভার , যে খানে একটি শহর বাঁচাতে , শিল্প বাঁচাতে শহরের খ্যাত-অখ্যাত সমস্ত খেলোয়াররা
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দৌড়ের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের বার্তা পৌঁছে দিলেন শহরের এক
প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত । কিসের টানে খেলোয়াররা একত্রিত হলেন ? এমন কি দুর্গাপুরের
বাইরে চলে গেছেন , এ রকম খেলোয়াররা যোগ দিলেন আজকের দৌড়ে অংশ নিতে ? দুর্গাপুর শহরের
জন্মই হয়েছে কল-কারখানার জঠরে । গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে ২য় পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা
চলাকালীন সময়ে শিল্পনগরী দুর্গাপুর শহরের জন্ম হয় দামোদর নদের পাশে ৬৪ টি জঙ্গল ঘেরা
গ্রামের জমি অধিগ্রহন করে আর এই শিল্প শহরের প্রান ভোমরা হল রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্হা ।
রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্হাগুলির পরিকল্পিত টাউনশিপের অসংখ্য বড় বড় খেলার মাঠ ,স্টেডিয়াম,জিম,সুইমিংপুল
,অসংখ্য ক্লাব ,অগুনিত ক্রীড়ামোদি মানুষ এবং একদল নিবেদিত ক্রীড়া সংগঠক দুর্গাপুরকে
শিল্পের সাথে সাথে জেলা ও রাজ্যে স্তরের ,এমন কি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের খেলোয়ারদের তৈরি করছে । আবার বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্হা গুলি কৃতি খেলোয়ারদের চাকুরী দেওয়ার সুবাদে , বিভিন্ন
জায়গা থেকে খেলোয়াররা দুর্গাপুরে এসেছেন , দুর্গাপুরের ক্রীড়া-জগৎ কে সমৃদ্ধ করেছেন
। কিন্তু শহর আজ বিপন্ন । বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২০ বেসরকারী কারখানা সহ ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব
। লক্ষাধিক মানুষ কাজ হারিয়েছেন । কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ব
ইস্পাত উৎপাদক ‘নবরত্ন’ সংস্হা সেইলের সালেম ,ভদ্রাবতী সহ দুর্গাপুরের বিশ্ব বিখ্যাত
অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট কে বেসরকারি হাতে বিক্রি করে দেবে । রাজ্যের তৃণমূল সরকার একই
ভাবে দুর্গাপুর কেমিক্যালস কে বেসরকারি হাতে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার , উভয়েরই রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্হা বিরোধী মনোভাবের জন্য ধুঁকছে দুর্গাপুর
ইস্পাত কারখানা,ডিপিএল ও ডিটিপিএস । বিপন্ন গোটা দুর্গাপুর শহরের অস্তিত্ব । জীবন-জীবিকার
টানে জোট বাঁধছেন শ্রমিকরা সহ শহরের সর্বস্তরের মানুষ ।
শহরের ক্রীড়া জগৎ
সহ জীবন-জীবিকা বাঁচানোর টানেই , আজ দুর্গাপুরের খেলোয়াররা , দুর্গাপুর স্পোর্টস লাভার্স
অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে দৌড়ে অংশ নিলেন ।এমন
কি যোগ দিলেন শিল্প সুরক্ষা বাহিনীর খেলোয়াররা । সকালে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের স্টেডিয়াম
থেকে দৌড় শুর হয় । দৌড় শুরুর আগে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ সুবীর সরকার,স্বপন
গুহ,গোলাম মুস্তাফা খান,এম.গঙ্গাধরন,তপন মাল,সন্ত কুমার মন্ডল,মেঘনাদ আঢ্য,গৌতম দে,সুবীর
সিনহা,সলিল গাঙ্গুলী,জি.সোনার,সফদর খান ও নাজির খান কে সংবর্ধনা দেওয়া হয় । তাদের হাতে
পুষ্প স্তবক তুলে দেন দুর্গাপুর ( পুর্ব ) এর বিধায়ক সন্তোষ দেব রায় । দৌড়ের সূচনায়
উপস্হিত ছিলেন বিনয়কৃষ্ণ চক্রবর্তী,বিকাশ ঘটক,পি.কে.দাস , ডঃএন.এন.কুলশ্রেষ্ঠ,সুখময়
বোস সহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ । দৌড় শুরু হয়ে ইস্পাতনগরীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে যায় সিটি
সেন্টার সহ দুর্গাপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং ২৫ কিমি পথ অতিক্রম করে শেষ হয় ইস্পাতনগরীর
নেহেরু স্টেডিয়ামে । দৌড়ের পিছনে ক্রীড়া প্রেমিকদের বিশাল বাইক মিছিল ছিল চোখে পড়ার
মত । জায়গায় জায়গায় মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে এসে খেলোয়ারদের ফুল ছিঠিয়ে অভ্যর্থনা জানান,তাদের
হাতে জলের বোতল তুলে দেন । দৌড় শেষে নেহেরু স্টেডিয়ামে খেলোয়ারদের দুর্গাপুর স্পোর্টস
লাভার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন
জানানো হয় এবং ১৯৮৫ সালে সাফ গেমস জয়ী ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সদস্য সুবীর সরকারের হাতে
স্মারক তুলে দেন স্বপন গুহ ।
No comments:
Post a Comment