দুর্গাপুর ,২রা মার্চ
: এ এক বিস্ময়কর সাদৃশ্যতা ! সারা বিশ্ব জেনে গেছে কারগিল যুদ্ধের শহীদ এর কন্যা গুরুমেহের
কাউর কিভাবে সংঘ পরিবারের আক্রমনের শিকার হয়েছেন । ঠিক সেই সময়ে , কেন্দ্রের মোদি পরিচালিত
এনডিএ-বিজেপি সরকার , কারগিল যুদ্ধের আরেক নায়ক অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে , যার উৎপাদিত
বিশেষ ইস্পাত বোফর্স কামানের গোলার খোল তৈরি কাজে ব্যবহার করা হয় , তা কে বেসরকারী
হাতে বেঁচে দেওয়ার জন্য আইনী পরামর্শদাতা ও
হস্তান্তর বিশেষজ্ঞ নিয়োগ এবং বিক্রীর জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল । গত ২৭ ফেব্রুঃ , সেলের
ওয়েবসাইটে দরপত্র ও আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া চেয়ে
বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে । অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের
সাথে সাথে রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক ও ‘নবরত্ন’ সংস্হা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া
( সেইল ) এর অপর দুই বিশেষ ইস্পাত এর কারখানা সালেম ও ভদ্রাবতির প্ল্যান্টের নামও এই
টেন্ডার প্রক্রিয়াতে আছে । প্রসঙ্গতঃ , আন্তর্জাতিক
খ্যাত সম্পন্ন বিশেষ ইস্পাত উৎপাদক অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে ৫০০ ধরনের বিশেষ ইস্পাত
উৎপাদিত হয় যার চাহিদা দেশ-বিদেশের পরমানু গবেষনা থেকে মহাকাশ গবেষনা সহ প্রায় প্রতিটি
শিল্পে । মাত্র ১১০০ কোটি টাকা খরচ করলে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত গুরু্বপূর্ন
অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের আধুনিকীকরন করা যায় । অথচ তার পরিবর্তে বেসরকারী হাতে
বেঁচে দিয়ে , কোন ‘জাতীয়তাবাদ’ এর পরিচয় দিচ্ছে মোদি সরকার , সেই প্রশ্ন এখন দুর্গাপুরবাসীর
মুখে মুখে ঘুরছে । গত বছরের ফেব্রুঃ মাস থেকে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের বেসরকারীকরন
এর চক্রান্তের আঁচ পেয়ে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ ) লাগাতার
আন্দোলন শুরু করে এবং নভেঃ মাস থেকে অন্যান্য ইউনিয়ন যোগ দেয় ও যৌথ মঞ্চ তৈরি হলে অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচাও আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় । ইতিমধ্য গত পরশু , দরপত্র প্রক্রিয়া
শুরু নজরে আসতেই শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন । অবিলম্বে বেসরকারীকরনের প্রক্রিয়া বাতিলের
দাবীতে, গতকাল সকালে
যৌথ মঞ্চের ডাকে কারখানার গেটে শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখান । আজ সকাল
পাঁচ টায় মর্নিং শিফটের শুরুর আগে থেকেই কারখানার গেটে গেটে বিক্ষোভ-অবরোধ শুরু হয়ে
যায় ।অভূতপূর্ব শ্রমিক ঐক্যের নজীর তৈরী হয় । এই প্রথম আই.এন.টি.টি.ইউ.সির নেতৃত্ব
ও শ্রমিক সদস্যরা যৌথ মঞ্চের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিক্ষোভ-অবরোধে যোগ দেন । আধিকারিকরাও
ভেতরে ঢুকতে পারেন নি । উৎপাদন কার্যতঃ বন্ধ হয়ে যায় । কর্তৃপক্ষের অনুরোধে , যৌথ মঞ্চ বেলা ১১টার সময় অবরোধ তুলে নিলে , উৎপাদন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় । অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের
মেইন গেটে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সি.আই.টি.ইউ এর বর্ধমান জেলার সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ
চক্রবর্তী , আই.এন.টি.ইউ.সির বর্ধমান জেলার সভাপতি বিকাশ ঘটক , এস.ডব্লু এফ.আই এর সাধারন সম্পাদক পি.কে.দাস ,মলয়
ভট্টাচার্য ও বিজয় সাহা (হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন , সি.আই.টি.ইউ ),মনিলাল
সিনহা (আই.এন.টি.ইউ.সি) ও সাধন সিনহা (আই.এন.টি.টি.ইউ.সি) । উপস্হিত ছিলেন রথীন রায়,সুবীর
সেনগুপ্ত সহ অন্যান্য শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ।
পাশে দুর্গাপুর স্টিল
প্ল্যান্টেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে । ই.ডি.( ওয়ার্কর্স ) এর দফ্তরে শয়ে শয়ে শ্রমিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন । গেটে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য
রাখেন বিশ্বরূপ ব্যানার্জী,কবিরঞ্জন দাসগুপ্ত,ললিত মিশ্র ((হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ
ইউনিয়ন , সি.আই.টি.ইউ ),রানা সরকার (আই.এন.টি.ইউ.সি) ও শম্ভু প্রামানিক (এ.আই.টি.ইউ.সি)।
এ দিকে, আজ বিধান সভার অধিবেশনে যোগ দিয়ে,সন্ধ্যায়
দুর্গাপুরে ফিরে আসেন দুর্গাপুর ( পূর্ব )
এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় । তিনি বর্তমান পরিস্হিতির কথা বিবেচনা করে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট
বাঁচাও আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য যৌথ আন্দোলন আরও প্রসারিত ও মজবুত করার আবেদন
জানিয়েছেন ।
No comments:
Post a Comment