দুর্গাপুর,১২ই সেপ্টেঃ
: ক্রমশঃ তীব্র হচ্ছে দুর্গাপুর ইস্পাত ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের ঠিকা শ্রমিকদের
আন্দোলন । সি.আই.টি.ইউ ভূক্ত ঠিকা শ্রমিকদের সংগঠন ইউ.সি.ডব্লু.ইউ – এ.এস.পি.সি.ই.ইউ-টি.সি.ই.ইউ
এর যৌথ আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে স্হায়ী শ্রমিকদের সংগঠন এইচ.এস.ই.ইউ । ২০১১ সালে তৃণমূল
সরকার গঠিত হওয়ার সাথে সাথে তৃণমূল দুর্গাপুরের ইস্পাত ঠিকা শ্রমিকদের উপরে ভয়ংকরতম
আক্রমন নামিয়ে এনে প্রায় চার হাজার ঠিকা শ্রমিক কে সি.আই.টি.ইউ করার অপরাধে কাজের জায়গা
থেকে উচ্ছেদ করে । এরপরে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় ঠিকা শ্রমিকদের জীবনে চরম দূর্দিন
নেমে এসেছে । উচ্ছেদ ঠিকা শ্রমিকদের অনেক পরিবার অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন ।এই
সব অনেক পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে । অনেক ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু
হয়েছে । সেই সব পরিবারের সদস্যদের অসহনীয় অবস্হায় দিন কাটছে । অন্যদিকে ঠিকা শ্রমিকদের
নিয়োগ কে ঘিরে তৃণমূলী নেতাদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকার কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে
। ঠিকা শ্রমিকদের নির্ধারিত বেতন থেকে অনেক কম বেতন দেওয়ার অভিযোগ হামেশাই শোনা যাচ্ছে
। এমন কি বেতনের টাকা থেকে তোলা নেওয়ার অভিযোগ আছে ।তোলা ও কাটমানি ঘিরে অন্তর্দলীয়
কোন্দলের ফলে মাঝে মধ্যেই কারখানার ভেতরে ও বাইরে সশস্ত্র সংঘর্ষের ফলে কাজের পরিবেশ
নষ্ট হচ্ছে ।ঠিকা শ্রমিকদের যখন-তখন কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া অথবা উচ্ছেদ করা চলছেই ।
ভয় দেখিয়ে ঠিকা শ্রমিকদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলায় অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে
। দীর্ঘ দিনের দক্ষ শ্রমিকদের উচ্ছেদ করে অদক্ষ শ্রমিকদের কাজে ঢোকানোর জন্য উৎপাদনে
প্রভাব পড়েছে,দূর্ঘটনা ও আহত-নিহত শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্গাপুরের ইস্পাতে ২০১১ সালের পর থেকে ঠিকা শ্রমিকদের বেতন-চুক্তি
বকেয়া পড়ে আছে ।প্রাপ্য পি.এফ-
ই.এস.আই এর সুবিধা থেকে বিভিন্ন
ভাব বঞ্চিত করা অথবা হয়রানি বেড়ে চলেছে । এমন কি ২০১৭ সালে এন.জে.সি.এস চুক্তি অনুসারে
প্রাপ্য সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন । ইস্পাতনগরী থেকে ই.এস.আই এর স্বাস্হ্য কেন্দ্রটি
সরিয়ে নেওয়ায় দূর্গতি বেড়েছে । মাথার উপর বেসরকারিকরনের খাঁড়া ঝুলছে । মোদি সরকারের
এই কুমতলবের বিরুদ্ধে গত তিন বছর ধরে বীরত্বপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অ্যালয় স্টিল
প্ল্যান্টের শ্রমিকরা । এই পরিস্হিতে ঘুরপথে শ্রমিকদের উপরে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ । ইতিমধ্যে কোপ পড়েছে ঠিকা শ্রমিকদের উপর । বছরে প্রাপ্য ২৩টি ছুটি
একতরফা ভাবে বাতিল করে,নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে ‘নো ওয়ার্ক,নো পে’
নীতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে । ঠিকা শ্রমিকদের ৬ কিস্তির ভি.ডি.এ বাবদ প্রাপ্য টাকা দেওয়া
হয় নি । অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের ঠিকা শ্রমিকদের বেতন-চুক্তি ২০০৩ সাল থেকে বকেয়া
আছে । মাসের নির্ধারিত ১০ তারিখের মধ্যে বেতন অনেক সময়েই না হওয়ার ফলে শ্রমিকদের মধ্যে
ক্ষোভ বাড়ছে ।
মোদি
সরকারের বেসরকারিকরন ও ডাউনসাইজিং নীতির ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রের অন্যান্য কারখানার
সাথে সাথে দুর্গাপুর ইস্পাত ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে ঠিকা শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি
পেলেও,সম কাজে সম বেতনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন দুরে থাক,চুক্তি মোতাবেক
বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঠিকা শ্রমিকরা পাচ্ছেন না । ঠিকা শ্রমিকদের স্হায়িকরনও
বন্ধ আছে ।
এই
সবের প্রতিবিধান চেয়ে ঠিকা শ্রমিকরা সি.আই.টি.ইউ এর নেতৃত্বে জোট বাঁধছেন ।১০-দফা দাবিতে
এক গুচ্ছ কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে আজ সকালে অ্যালয় স্টিল
প্ল্যান্টের মেইন গেট ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ২নং গেটের সংযোগ স্হলে ঠিকা শ্রমিকদের
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রেখেছেন আর.পি.গাঙ্গুলী,আশিস মিশ্র,আশিসতরু চক্রবর্তি,স্বপন
মজুমদার ও বিজয় সাহা ।
ইতিমধ্যে এই জমায়েত চলাকালিন খবর আসে অ্যালয় স্টিল
প্ল্যান্টের এস.এম.এস ও টেলি কমিউনিকেশন বিভাগের ঠিকা শ্রমিকরা মাসের নির্ধারিত ১০
তারিখের মধ্যে বেতন না হওয়ার প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেছেন । এই খবর পেয়ে এ.এস.পি.সি.ই.ইউ
(সি.আই.টি.ইউ ) সহ অন্যান্য ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ আন্দোলনরত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান ।
আন্দোলনের চাপে পড়ে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের কর্তৃপক্ষ এস.এম.এস বিভাগের ঠিকাদার কে
ডেকে এ.এস.পি.সি.ই.ইউ (সি.আই.টি.ইউ ) সহ অন্যান্য ইউনিয়নের
নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় । আলোচনায় এস.এম.এস বিভাগের ঠিকাদার অবিলম্বে
বেতন দিতে সম্মত হলে,কর্মবিরতি শেষ হয় । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, এস.এম.এস বিভাগের ঠিকা শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেতনের
টাকা আসা শুরু হয়েছে ।
এদিকে আগামী ১৬ই সেপ্টেঃ, সি.আই.টি.ইউ ও আই.এন.টি.ইউ.সি যৌথ ভাবে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের
জি.এম ( ওয়ার্কর্স) এর দফ্তরে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের ঠিকা শ্রমিকদের বিভিন্ন বকেয়া
অবিলম্বে ফয়সালার দাবিতে বিক্ষোভ জমায়েতের ডাক দিয়েছে।
No comments:
Post a Comment