Friday 10 November 2023

ইস্পাতনগরীর লাইসেন্সড কোয়ার্টার-সেপকো টাউনশিপ-সেইল সমবায় আবাসন এর প্রতি তুঘলকি আচরনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ।

 


দুর্গাপুর,১০ই নভেঃ : দুর্গাপুর ইস্পাতনগরীর লাইসেন্সড কোয়ার্টার-সেপকো টাউনশিপ-সেইল সমবায় আবাসন এর প্রতি তুঘলকি আচরনের প্রতিবাদ জানিয়ে আজ বিকালে ইস্পাতনগরী নাগরিক কমিটির ডাকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার নগর প্রশাসনিক দপ্তরের ( টি.এ. বিল্ডিং) সামনে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।প্রসঙ্গত বিগত ১৯৯৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ছয় দফায় দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ক্যাটাগরি ১ ও ২ কোয়ার্টার এর লাইসেন্সিং দেওয়া হয় । ২০০২-২০০৩ সালে লিজও দেওয়া হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরির কোয়ার্টার। অন্যদিকে, সেইল সমবায় আবাসন ও সেপকো টাউনশিপে জমি লিজ দেওয়া হয়।কেন্দ্রিয় রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্থা সেইলের অপর কারখানা অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের পক্ষ থেকেও ইস্পাতনগরীতে কারখানার বিভিন্ন ক্যাটাগরির কোয়ার্টার লিজ ও লাইসেন্সিং এর মাধ্যমে দেওয়া হয়। উভয় কারখানার কর্মরত,অবসরপ্রাপ্ত স্থায়ী শ্রমিক ও আধিকারিক সহ অবসরপ্রাপ্ত স্থায়ী শ্রমিক ও আধিকারিক,ঠিকা শ্রমিক ও সহায়ক সংস্থা যেমন সমবায়,ব্যাঙ্ক,ভবন,এনএসপিসিএল,এফএসএনএল এবং বিভিন্ন সরকারী ও রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থায় কাজ করেছেন,তারা এর আগের লিজ ও লাইসেন্সিং এর মারফত কোয়ার্টার পেয়েছেন। বিগত শতাব্দীর ৯০-এর দশকের শেষ ভাগে উভয় কারখানার আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে,১৯৬০ এর দশকে তৈরি ইস্পাতনগরীর পরিকাঠামো ও কোয়ার্টার রক্ষনাবেক্ষন করা কর্তৃপক্ষের কাছে দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে শুধু তাই নয় বহু সংখ্যক শ্রমিক-আধিকরিক অবসরগ্রহন করার ফলে বহু ফাঁকা কোয়ার্টার দখলদারদের হাতে চলে যায়, সমাজবিরোধী কাজের আখড়া হয়ে ওঠে।অন্যদিকে লোকসানে চলার ফলে বিআইএফআরে চলে যাওয়ার আশংকা তৈরি হয়। এরফলে সেইলের অন্যান্য ইউনিটের সাথে সাথে ইস্পাতনগরীতে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের কোয়ার্টার লিজ ও লাইসেন্সিং শুরু হয়। যদিও এর আগেই ১৯৭০ এর দশক থেকেই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ইস্পাতনগরী সহ সংলগ্ন জায়গায় জমি লিজ দেওয়া শুরু হয়। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা তৈরি হওয়ার সময়ে অধীগৃহীত ১৫৮৭২ একর জমি দুর্গাপুর ইস্পাত কে হস্তান্তরিত করা হয়। এই জমির মধ্যে ২৯৮৪ একর জমি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট তৈরি,১৮৮৭ একর জমি ইস্পাতনগরী ও ৫০০ একর জমি শ্রমিক-আধিকারিকদের বিভিন্ন সমবায় আবাসনের জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে । ইস্পাতনগরীতে মোট কোয়ার্টারের সংখ্যা ১৯১৪১ ।২০২৩ সালে লাইসেন্সিং শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত ৮৬৫১ টি কোয়ার্টার লিজ/লাইসেন্সের মাধ্যমে  কর্মরত/অবসরপ্রাপ্তদের দেওয়া হয়েছে । ১৩৩৭টি কোয়ার্টার বিভিন্ন সরকারী সংস্থা,পুলিশ,সিআইএসএফ,সহ অন্যান্যদের কে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে।

  এই অবস্থায় দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষের থেকে ২০২৩ সালে জারি করা লাইসেন্সিং এর বিজ্ঞপ্তিতে,পূর্ববর্তি ১৯৯৯ সাল থেকে ৫-দফায় লাইসেন্সিং পাওয়া কোয়র্টারের ওপর একতরফাভাবে ১০০ শতাংশ লাইসেন্সিং ফি বৃদ্ধি করার সাথে সাথে স্ত্রী অথবা স্বামী ছাড়া পরিবারের অন্যান্যদের লাইসেন্সিং উত্তরাধীকারী হওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে ইস্পাতনগরী নাগরিক কমিটির পক্ষে স্বপন সরকার জানিয়েছেন।তিনি আরো অভিযোগ করেন যে এই বর্ধিত লাইসেন্সিং ফি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সাল থেকে বকেয়া ধরে চাপাতে চাইছে কিন্তু সেইল এর অপর সংস্থা অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ২০২৩ থেকে বর্ধিত লাইসেন্সিং ফি ধার্য করেছে।তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে একই রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার দুটো ইউনিটে দু-রকম নিয়ম কি করে হতে পারে?ঠিকা শ্রমিক ও সহায়ক সংস্থা যেমন সমবায়,ব্যাঙ্ক,ভবন,এনএসপিসিএল,এফএসএনএল এর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্তদের নতুন লাইসেন্সিং বিজ্ঞপ্তিতে কোয়ার্টার পাওয়ার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।অন্যদিকে, সেইল সমবায় আবাসন ও সেপকো টাউনশিপের জমির স্বত্তাধিকার-লিজ ডিড-মিউটিশন সংক্রান্ত জটিলতা কাটানোর দাবি নিয়েও  দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা করছে বলে তিনি অভিযোগ করছেন। একই সাথে তিনি অভিযোগ করেন ঐ বিজ্ঞপ্তিতে জঞ্জাল সাফাই এর কাজ দুর্গাপুর পৌর নিগমের হাতে তুলে দিয়ে ইস্পাতনগরীর বাসিন্দাদের উপরে “গার্বেজ ফি” বসাতে চাওয়া হয়েছে।তিনি বলেন যে অবিলম্বে এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার সহ নয়-দফা দাবিতে  ইস্পাতনগরী নাগরিক কমিটির পক্ষে এই বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রেখে দুর্গাপুর(পূর্ব)-এর প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় গনতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ইস্পাতনগরী নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে এই আন্দোলন কে আরো প্রসারিত ও ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আশিসতরু চক্রবর্তি,গুরুপ্রসাদ ব্যানার্জি,অশোক চক্রবর্তী,সিদ্ধেশ্বর শেঠ,সুভাষ ঘোষ,সুদীপ্ত নাগ ও স্বপন সরকার। সমাবেশ চলাকালীন নাগরিক কমিটির পক্ষে এক প্রতিনিধি দল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি সম্বলিত স্মারক লিপি জমা দিয়ে অবিলম্বে সমস্ত দাবি মেটানোর দাবি জানান । নাগরিক কমিটির পক্ষে স্বপন সরকার জানিয়েছেন যে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সব দিক বিবেচনা করে খতিয়ে দেখার আশ্বাস পাওয়া গেছে।
































No comments:

Post a Comment