Thursday 29 February 2024

দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় আবার দুর্ঘটনা,আহত পাঁচ : শ্রমিক বিক্ষোভ।

 


দুর্গাপুর,২৯শে ফেব্রুঃ : আজ সকালে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস্ট,এক স্থায়ী শ্রমিক,এক ঠিকা শ্রমিক ও এক আধিকারিক। আহতরা হলেন যথাক্রমে সর্বজিত ধাঙ্গর,বিনয় কুমার হরিজন,সোমনাথ ঘোষ,চিত্ত মন্ডল ও পৃথ্বীরাজ রায়।আহতদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশংকাজনক,এক জনের অবস্থা স্থিতিশীল।আজ সকালে কারখানার এসএমএস বিভাগে ২নং বিওএফ কনভার্টারে ভয়াবহ বিষ্ফোরনের ফলে কর্ণভেদি শব্দে গলিত ইস্পাত শপ ফ্লোরে বহু দুর ছড়িয়ে পড়লে কর্মরত দুর্গাপুর ইস্পাতের ই.টি.এল বিভাগের দুই ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস্ট,এক স্থায়ী শ্রমিক,এক ঠিকা শ্রমিক ও এক আধিকারিক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। উচ্চ তাপমাত্রার(১৭০০-১৮০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) গলিত ইস্পাত তাদের শরীর কে তৎক্ষণাৎ দগ্ধ করে।প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে কনভার্টারে জল ঢুকে পড়ায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা হয়েছে। দ্রুততার সাথে আহতদের প্রথমে প্ল্যান্ট মেডিক্যাল ও পরে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মেইন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতিমধ্যে দুর্ঘটনার খবর চাউর হতেই যৌথ মঞ্চের (সিআইটিইউ-আইএনটিটিইউসি-আইএনটিইউসি-এআইটিইউসি-এইচএমএস-বিএমএস-এআইইউটিইউসি) নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে পৌঁছিয়ে হস্তক্ষেপ করেন। পরে আহতদের সুচিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি বেসরকারী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহতদের উদ্বিগ্ন আত্মীয়-পরিজনদের সাথে যৌথ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ মিশন হাসপাতালে আছেন।অন্যদিকে,এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর ছড়াতে কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ভীতি ও আশংকার পরিবেশ তৈরি হয়। বন্ধ হয়ে যায় এসএমএস বিভাগে বাকি দুই বিওএফ কনভার্টারের কাজ,বিঘ্নিত হয় উৎপাদন।শুরু হয় শ্রমিক বিক্ষোভ।অবস্থা সামাল দিতে তড়িঘড়ি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ইডি( ওয়ার্কস ) যৌথ মঞ্চের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেন। পরে ইডি( ওয়ার্কস ) সহ কারখানার অন্যান্য উচ্চ পদস্থ আধিকরিকরা এবং যৌথ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ একত্রে দুর্ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেন ।পরে কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত তদন্ত ও যথাযথ পদক্ষেপের আশ্বাস দলে বেলা তিন টে নাগাদ উৎপাদন শুরু হয়।

   হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিআইটিইউ ) এর পক্ষে বিশ্বরূপ ব্যানার্জি এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন যে দীর্ঘ দিন ধরে কারখানার আধুনিকীকরন ও সম্প্রসারনের জন্য  যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ এই বিষয় উদাসীন । স্বাভাবিক কারনে পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে একনাগাড়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে কিন্তু রক্ষনা-বেক্ষন ও মেরামতি যথাযথ করা হচ্ছে না। ফলে হামেশাই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ২৭শে ফেব্রুঃ ঐ কনভার্টারে জল ঢুকে পড়ার ঘটনা সম্পর্কে সেফটি বিভাগ আগাম সতর্ক করলেও উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া হয়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেন এর ফলে ‘রক্তপাত-হীন’ ইস্পাত উৎপাদনের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি কার্যতঃ ভুয়ো প্রতিশ্রুতিতে পরিনত হয়েছে। পর পর দুর্ঘটনা শ্রমিক ও আধিকরিক এবং তাদের পরিবার বর্গের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। অন্যদিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নীতির ফলে স্থায়ী দক্ষ শ্রমিকের বদলে অদক্ষ ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস্ট ও ঠিকা শ্রমিকদের দক্ষ শ্রমিক হয়ে ওঠার আগেই স্বল্প মজুরীতে কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করার জন্য কর্তৃপক্ষের কঠোর সমালোচনা করেন।তিনি জনিয়েছেন এই দুর্ঘটনার পরে কর্তৃপক্ষের কাছে যৌথ মঞ্চের পক্ষে যথাযথ তদন্ত,পূর্বের দুর্ঘটনা গুলির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ,আহত ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস্ট ও ঠিকা শ্রমিকদের স্থায়ী শ্রমিকদের মত সম চিকিৎসা,ক্ষতিপূরন সহ পরিবারের পাশে থাকা,অবিলম্বে লিঙ্ক রোডের দুর্ঘটনা ও আজকের দুর্ঘটনা সহ ও অন্যান্য দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট সহ পুর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছে।








No comments:

Post a Comment