দুর্গাপুর , ১৯শে নভেঃ : ১৭ই নভেঃ এর দুর্গাপূর ইস্পাত কারখানার মেইন গেটের
সমাবেশ বুঝিয়ে দিয়েছিল তৃণমূলী দুষ্কৃতিদের হামলা-হুমকিকে দুর্গাপূর ইস্পাতের ঠিকা
শ্রমিকরা আর পরোয়া করছে না । ঠিক ২-দিনের মাথায় দুর্গাপূর ইস্পাত কারখানার ২-নং গেটের
সভায় শীতের সকালে হিমেল হাওয়ার আলতো স্পর্ষে অজস্র লাল পতাকায় ঠেউ এর মাঝে কালো মাথার
সমুদ্র আর মুষ্টিবব্ধ হাত জানিয়ে দিল তৃণমূলের
রাজত্বে বঞ্চিত-শোষিত-নিপিড়ীত ঠিকা শ্রমিকদের
দূর্বার আন্দোলন আসন্ন । কোন শক্তিই আর ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না । আন্দোলনের স্বাভাবিক
নেতৃত্ব যে লালঝাণ্ডা ইউনিয়ন ইউ.সি.ডব্লু.ইউ ( সিআইটিইউ ) , সে কথা বলার আর অপেক্ষা
রাখে না । এই কথা দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথেই জানালেন ইউ.সি.ডব্লু.ইউ ( সিআইটিইউ ) এর সাধারন
সম্পাদক কমঃ সুবীর ( লাল্টু ) সেনগুপ্ত । তিনি বলেন যে গত ২০১১ সালের মে’মাসে তৃণমূলী সন্ত্রাসের শুরু ।
সেই সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে হাজার হাজার ঠিকা শ্রমিক । উচ্ছেদ হয়েছেন ৩৫০০ ঠিকা শ্রমিক
। তৃণমূলী দুষ্কৃতিদের শারীরিক আক্রমনের শিকার
হয়েছেন বহু শ্রমিক ও ইউ.সি.ডব্লু.ইউ এর নেতৃবৃন্দ । গুরুতর জখম হয়েছেন অনেকে । উল্টে মমতা ব্যানার্জীর
সরকারে দলভৃত্য পুলিশ অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে ইউনিয়ন নেতৃত্বকে । কিন্তু এত করেও ইউ.সি.ডব্লু.ইউ
কে ধ্বংস করা যায় নি , যাবেও না । উল্টে আপাদমস্তক দূর্নীতিগ্রস্হ তৃণমুলের কংকালসার চেহারা শ্রমিকদের কাছে স্পষ্ট
হয়ে ফুটে উঠেছে । সারদা-সহ বিভিন্ন চিঠফান্ডের কেলেঙ্কারীতে তৃণমূলের সর্বস্তরে নেতৃত্বের
যোগসাজসের কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ছে । তৃণমূলের নেতারা গ্রেফ্তার হয়ছেন , হয়তো
আরও হবেন । লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হয়ছেন । তার মধ্যে অনেক ঠিকা শ্রমিকও
আছেন । শুধু তাই নয় , তৃণমূলের নেতা , ঠিকাদার ও কারখানার আধিকারিকদের একাংশের অশুভ যোগসাজসে বেতন-চুক্তিকে
নসাৎ করে দিয়ে কর্মরত ঠিকা শ্রমিকদের দৈনিক
বেতন ১০০ টাকা- ১২০ টাকা দেওয়া হচ্ছে , যা বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন সর্বোচ্চ হয়ছিল
দৈনিক ৪৫০ টাকা-৫০০ টাকা । তৃণমূলীদের নেতৃত্ব ঠিকাদাররা ঠিকা শ্রমিকদের উপর যে চরম
শোষন চালাচ্ছে । ঠিকা শ্রমিকদের মাসিক বেতন
কবে হবে তা ঠিক না থাকলেও তৃণমূলের নেতাদের বেতন ঠিক সময়ে হয় যায় । অনেক তৃণমূলের নেতা
একসাথে অনেক কোম্পানী থেকে বেতন তুলছে বলে অভিযোগ উঠছে । কারখানায় এই চরম শ্রমিক-বিরোধী
কাজের প্রতিবাদ করে , অনেক তৃণমূল কর্মীকেও কাজ হারাতে হয়ছে । ডিএসপি কারখানার কর্তৃপক্ষও
এই সুযোগে ঠিকা শ্রমিকদের একের পর এক অধিকার
কেড়ে নিচ্ছে কারন দূর্নীতিগ্রস্হ ও শ্রমিকবিরোধী তৃণমূল নেতৃত্ব কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যতঃ
মাথা বিকিয়ে দিয়েছে । তিনি আরও বলেন যে সন্ত্রাসের বাতাবরনের মধ্যেই ইউনিয়ন কাজ চালিয়ে
গেছে এবং বেতন-চুক্তি অনুসারে ঠিকা শ্রমিকদের নায্য দাবী আদায়ের আন্দোলন গড়ে তুলেছে
। শ্রমিকদের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে । হতাশ তৃণমূল নেতৃত্ব মোহমুক্ত ঠিকা শ্রমিকদের মধ্যে
গুজব রটাচ্ছে যে লালঝঝাণ্ডা ইউনিয়ন ফিরে এলে শ্রমিক উচ্ছেদ ঘটবে । কমঃ সুবীর ( লাল্টু
) সেনগুপ্ত দৃঢ়তার সাথেই বলেন যে সিআইটিইউ যে উচ্ছেদ-রাজনীতি বা বদলার-রাজনীতি কখনও
করেনা , তার জলজ্যান্ত প্রমান দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা । ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার
আসার পড়ে কোন শ্রমিক উচ্ছেদ হওয়া তো দুরে থাক বরং ইউ.সি.ডব্লু.ইউ এর আন্দোলনের ফলে
দলমত নির্বিশেষে ঠিকা শ্রমিকরা স্হায়ী শ্রমিক হয়েছেন । তিনি জোড় দিয়ে বলেন যে ইউ.সি.ডব্লু.ইউ
দাবী জানাচ্ছে যে দুর্গাপুর ইস্পাতের কর্তৃপক্ষকে
অবিলম্বে উচ্ছেদ হওয়া ৩৫০০ ঠিকা শ্রমিককে পুনর্বহাল করতে হবে ,কোন কর্মরত ঠিকা শ্রমিককে
উচ্ছেদ ছাড়াই । একই সাথে তিনি , তৃণমূলের নেতৃত্বের প্ররোচনায় পা দিয়ে , হিংসার আশ্রয়
না নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন । কমঃ সেনগুপ্ত একই সাথে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের
শ্রমিক-বিরোধী নীতির তীব্র সমালোচন করেন এবং ঠিকা শ্রমিক ও ইউ.সি.ডব্লু.ইউ এর পক্ষ
থেকে আগামী ২৪শে নভেঃ দেশব্যাপী কয়লা-শিল্পে ধর্মঘটের কে পূর্ন সমর্থন জানানা । দুর্গাপুর
ইস্পাত কারখানার স্হায়ী শ্রমিকদের সংগঠন হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সিআইটিইউ
) এর পক্ষে কমরেড প্রকাশতরু চক্রবর্তী সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং কেন আগামী ২৪শে
নভেঃ দেশব্যাপী কয়লা-শিল্পে ধর্মঘট , সারা ভারতের শ্রমিকশ্রেনীর লড়াইতে পরিনত হয়ছে
তা ব্যাখা করেন । সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবীন শ্রমিক নেতা কমঃ বিভূতি দাস মন্ডল ।
No comments:
Post a Comment