দুর্গাপুর ,৪ঠা আগষ্ট
: দুর্গাপুর বদলে গেছে ! অন্ততঃ বাইরে থেকে একঝলক দেখলে সেই রকম মনে হওয়া অস্বাভাবিক
কিছুই নয় । সারা শহর জুড়ে আক্ষরিক অর্থে প্রতিটি ইঞ্চিতে তৃণমূলের পতাকা / নেত্রীর মুখ-শোভিত ফেষ্টুন কিংবা বিশাল বিশাল কাট আউট/তোড়ন
। দুর্গাপুর যেন হয়ে উঠেছে ‘ দি গ্রেট ডিক্টেটর’ সিনেমার অ্যাডেনয়েড হাইংকেল শাসিত
গা-ছম ছম করা টোমানিয়া ! নির্বাচন এলে দুর্গাপুর সরগরম হয়ে ওঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের
প্রচারে । আলোচনা চলে পাড়ায়-বাজারে-কারখানায় । ২০১১ সালের পরে আস্তে আস্তে ছবিটা পাল্টাতে
শুরু করে । প্রকাশ্যে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা,তর্ক-বিতর্ক ক্রমশঃ ‘নিষিদ্ধ’ হতে শুরু করে ।
২০১৬ এর বিধান সভা
নির্বাচনে দুর্গাপুরের দুটি আসনেই তৃণমূল পর্যদুস্ত হওয়ার পরে শাসকদল তৃণমূল কে পরাজয়ের
আতংক তাড়া করে ফিরছে । ১৯৬০-৭০ দশকের ‘লাল দুর্গাপুর ‘ যেমন তৎকলীন শাসকবর্গের মনে
ভয় ধরিয়েছিল ,২০১৭ সালের দুর্গাপুর আজ মোদি-মমতার কাছে তেমনই হয়ে উঠছে । কারখানা বাঁচাও
, দুর্গাপুর বাঁচাও আন্দোলনের, অভূতপূর্ব জোয়ার তৃণমূলের মধ্যে পরাজয়ের আতংক আরও বাড়িয়ে
দিয়েছে । গোদের উপর বিষফোঁড়া বিগত পাঁচ বছরে নিষ্কর্মা ও দূর্ণীতিগ্রস্হ তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর নগর নিগমের কার্যকলাপ
সরাসরি শাসকদল কে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে । বিদায়ী মেয়র কে টিকিট না দিয়ে আত্মপক্ষ
সমর্থনের চেষ্টা মাঠে মারা গেছে বুঝতে পেরে তৃণমূলের ভরসা এখন ‘জিতু ভাই’ ! কে এই ‘জিতু ভাই’ ? আসানসোলের
মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারী বর্তমান ঠিকানা এখন দুর্গাপুর । তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়ন
পত্র জমা দেওয়ার দিনে তাকে ঘিরে প্রকাশ্যে কয়লা-মাফিয়াদের ভীড় বুঝিয়ে দিয়েছে কেন ‘জিতু
ভাই’ এর এত কদর ! তার সাথে জুটেছেন অগ্নিগর্ভ
দার্জিলিং থেকে সদ্য হাত পুড়িয়ে আসা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস । দুর্গাপুরের তৃণমূলের
নেতাদের ‘দায়িত্ব বোধ ‘ সম্পর্কে সম্ভবতঃ সন্দিহান তৃণমূল নেতৃত্ব তাই কোন রকম ঝুঁকি
নিতে চাইছেন । তাই দুর্গাপুরে ঘাঁটি গেড়ে পরে আছেন আরেক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও আসানসোলের
প্রাক্তন মেয়র তাপস ব্যানার্জী । কান পাতলে শোনা যাচ্ছে বীরভূমের ‘গুড়-বাতাসা’ দুর্গাপুরে
আসার সম্ভাবনা প্রবল । এ তো গেল নেতা-আমদানি । দুর্গাপুরে তৃণমূলের
সমর্থকের ভাঁড়ারে যে টান পড়েছে ,সেটা টের পেয়ে সমর্থক –আমদানী করার কথাও কানাঘুষো শোনা
যাচ্ছে । অতএব ভরসা ‘জিতু ভাই’ । অভিযোগ উঠছে যে ভোটের দিন আসার আগেই আসানসোল-উখরা-রানীগঞ্জ-লাউদোহা-পান্ডবেশ্বর
মায় বিহার-ঝাড়খন্ড থেকে তৃণমূলের অতিথি-সমর্থকরা দুর্গাপুরে ১৩ই আগষ্ট পৌর নির্বাচনের
দিন ‘ভোট করাতে ‘ দুর্গাপুরে আসতে শুরু করেছে এবং যোগ্য সংগত দেওয়ার জন্য নির্বাচন
কমিশন ও পুলিশ-প্রশাসন ‘তৈরি’ ।
পাড়ায় পাড়ায় বাম কর্মীদের প্রতি শাসানী , প্রার্থীদের হুমকি-বোমা ও পিস্তল নিয়ে হামলার সাথে সাথে চলছে ‘পরামর্শ দান ‘ – ভোটের দিনে আমরা থাকব না , বাইরের লোক আসবে , সাবধান , .. ।
পাড়ায় পাড়ায় বাম কর্মীদের প্রতি শাসানী , প্রার্থীদের হুমকি-বোমা ও পিস্তল নিয়ে হামলার সাথে সাথে চলছে ‘পরামর্শ দান ‘ – ভোটের দিনে আমরা থাকব না , বাইরের লোক আসবে , সাবধান , .. ।
কিন্তু এত করেও বামফ্রন্টের
প্রচার বন্ধ করা যাচ্ছে না । বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রচারের উপর জোড় দেওয়া হচ্ছে । প্রচারে
ছোট ছোট দল বার হলেও পড়ে তা ক্রমশঃ মিছিলের আকার ধারন করছে ।
ইস্পাতনগরীর প্রায়
মাঝ বরাবর ৭ নং ওয়ার্ড । এখানে বামফ্রন্ট মনোনীত সি.পি.আই.(এম) এর তরুন প্রার্থী স্বপন
সরকার । বর্তমানে সি.আই.টি.ইউ এর সর্বক্ষনের কর্মী স্বপন সরকার দুর্গাপুরের ছাত্র-যুব
আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ । বিদায়ী তৃণমূলের কাউন্সিলর নিজের ওয়ার্ড ছেড়ে অন্যত্র
প্রার্থী হয়েছেন । ওয়ার্ড জুড়ে অনুন্নয়ন ও প্রবল দলবাজীর অভিযোগ চাপা দেওয়ার জন্য ক্লাব
ক্লাবে ২ লক্ষ টাকার টোপ চলছে বলে অভিযোগ । বামফ্রন্ট মনোনীত সি.পি.আই.(এম) এর তরুন
প্রার্থী স্বপন সরকার জানিয়েছেন বামফ্রন্টের
নির্বাচনী ইস্তাহার কার্যকরী করার সাথে সাথে এলাকার ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা-ড্রেনের মেরামতি
, বস্তি উন্নয়ন , প্রাপ্য বিধবা-বার্ধক্য ভাতার দ্রুত সংস্হান কে অগ্রাধীকার দিতে চান
। স্বপন সরকারের সমর্থনে প্রচারে প্রতিদিন বেশী করে মানুষ যুক্ত হচ্ছেন । সন্ত্রাসের
বিরুদ্ধে দুর্গাপুর রুখে দাঁড়াচ্ছে ।
No comments:
Post a Comment