দুর্গাপুর ,৮ই আগষ্ট
: গতকাল সকাল থেকে ইস্পাতনগরী ও সংলগ্ন অঞ্চলে আসন্ন দুর্গাপুর পৌর নির্বাচন উপলক্ষ্যে
বামফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচার চালাতে গেলে এলাকার বিধায়ক ও প্রার্থীদের, পুলিশ-প্রশাসনের
প্রত্যক্ষ মদতে,তৃণমূল দফায় দফায় বাধা দেয়।
গতকাল বেলা প্রায়
তিন টা নাগাদ , তৃণমূলীরা আচমকা হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ ) ও স্টিল ওয়র্কার্স ফেডরেশন
অফ ইন্ডিয়া ( সি.আই.টি.ইউ ) দফ্তর বি.টি.রণদিভে ভবনে ( ১নং বিদ্যাসাগর এভিন্যু ) ভাঙ্গচূর-লুঠপাঠ
চালায়,লাল ঝাণ্ডা খুলে লোপাট করে,বোর্ড খুলে নেয় ও তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেয়।খবর পেয়ে
ঘটনাস্হলে ট্রেড ইউনয়নের সর্বক্ষনের কর্মী এবং ৭নং ওয়ার্ডে সি.পি.আই.(এম) এর প্রার্থী
স্বপন সরকার পৌঁছালে তাকে তৃণমূলীরা মারধোর করে । প্রসংগত, দুর্গাপুর বাঁচাতে , অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচাতে , দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা বাঁচাতে এবং মোদি সরকারে নির্দেশে
রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইলে এর বিশেষ ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট,সালেম ও ভদ্রাবতী স্টিল
প্ল্যান্ট এর বেসরকারীকরনের বিরোধীতা করার জন্য হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ ) ও স্টিল ওয়র্কার্স ফেডরেশন
অফ ইন্ডিয়া ( সি.আই.টি.ইউ ) এর শয়ে শয়ে সদস্য নিজেদের টাকা-পয়সা খরচা করে আজই ট্রেন
যোগে দিল্লি রওনা দিয়েছেন । তারা আগামীকাল দিল্লিতে সংসদ ভবন সহ নীতি আয়োগের দফ্তরে
রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত শিল্পের ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের যৌথ মোর্চা ( বিএমএস ও তৃণমূল বাদে
) পক্ষ থেকে সারা ভারতের ইস্পাত শ্রমিক-কর্মচারিরা বিক্ষোভ প্রদর্শনে যোগ দেবেন । এই অনুপস্হির সুযোগে
তৃণমূল বি.টি.রণদিভে ভবনে কাপুরোষচিত হামলা চালায় ।
এই ঘটনা জানাজানি
হতেই সমস্ত দুর্গাপুর জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে । ইস্পাত শ্রমিকদের মধ্যেও বিরূপ
প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় । বিধানসভায় এই খবর পৌঁছাতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় । সি.পি.আই.(এম)
বিধায়ক রুনু দত্ত বিষয়টি বিধানসভায় উথ্থাপন করলে ,স্পীকার বাধা দেন ।
ইতিমধ্যে ঘটনাস্হলে
বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় সহ অন্যান্য পার্টি নেতৃবৃন্দ ইউনিয়ন দফ্তরে পৌঁছালে , প্রবল জনমতের চাপে পুলিশ-প্রশাসন
নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় এবং ইউনিয়ন অফিস দখল মুক্ত হয় ।
আরও উল্ল্যেখ্য, বি.টি.রণদিভে
ভবনের উল্টোদিকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বাংলো ( ২০নং বিদ্যাসগর এভিন্যু ) তৃণমূলের
অবৈধ ভাবে দখল করে নির্বাচনী দফ্তর বানিয়েছে । অভিযোগ , সেখানে দুর্গাপুর পৌর নির্বাচন
‘পরিচালনা’ করতে আানসোলের মেয়র ও তৃণমূলের নেতা জিতেন তেওয়ারির নেতৃত্বে এক দল কুখ্যাত
কয়লা-মাফিয়া ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গো ঘাঁটি গেড়েছে । এ বিষয়ে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে রাজ্য
প্রশাসন ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ কে জানালেও , এখনও কোন ব্যবস্হা নেওয়া
হয় নি ।
এ দিকে কাল সকালে
১ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ইস্পাতনগরীর সংলগ্ন অঞ্চল ধোবিঘাটে ঐ ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট মনোনিত সি.পি.আই.(এম ) প্রার্থী জয়শ্রী
দে বিশ্বাসের সমর্থনে দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়ের নেতৃত্বে যখন নির্বাচনী প্রচার চলছিল ,তখন তৃণমূলের দুষ্কৃতিরা
বাধা দেয় । বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় তৎক্ষনাৎ
পুলিশ কে জানালে,পুলিশ ঘটনাস্হলে এসে তৃণমূলীদের সাথে সুর মিলিয়ে এলাকারই বিধায়ক সন্তোষ
দেবরায় ও অন্যান্য পার্টি নেতা-কর্মীদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন । বিকালে অন্য একটি
ঘটনায়,১০ নং
ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট মনোনিত সি.পি.আই.(এম
) প্রার্থী কালিশংকর ব্যানার্জী ভাবা রোড সংলগ্ন জে.সি.বোস বস্তি অঞ্চলে প্রচার চালানো
সময় তৃণমূলীরা বাধা দেয় ও এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে । রাতে ৪নং ওয়ার্ডের নাগার্জুন , ভারতী,জয়দেব
প্রভৃতি জায়গায় সি.পি.আই.(এম ) কর্মী-সমর্থকদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তৃণমূলীরা হুমকী দেয়
।
কিন্তু এর মধ্যেই বামফ্রন্টের
নির্বাচনী প্রচার চলছে। কাল সন্ধ্যায় অশোক এভিন্যু এর খোলা মার্কেটে এক নির্বাচনী পথ
সভায় সি.পি.আই.(এম) এর বর্ধমান জেলা ( পশ্চিম ) সাংগঠনিক কমিটির সদস্য নির্মল ভট্টাচার্য এই সব হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন যে জন-বিচ্ছিন্ন
তৃণমূল পুলিশ-প্রশাসনের মদতে দুর্গাপুর নগর নিগমের
নির্বাচনে জেতার সন্ত্রাস করছে । তিনি তৃণমূলের এই জঘন্য ষরযন্ত্র ব্যর্থ করার জন্য
জনগনের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান ।
আজ বিজরা গ্রামে এক
পথসভায় পার্টির বর্ধমান জেলার ( পশ্চিম ) সাংগঠনিক কমিটির সদস্য সন্তোষ দেবরায় বলেন
যে উন্নয়নে সম্পূর্ন ব্যর্থ ও জন-বিচ্ছিন্ন তৃণমূল পরাজয় নিশ্চিত জেনে সন্ত্রাসের রাস্তা
নিয়েছে । প্রকৃত উন্নয়নের স্বার্থে তিনি বামফ্রন্ট কে জয়ী করার জন্য - নিজের ভোট নিজে
দেওয়ার জন্য আবেদন জানান ।
No comments:
Post a Comment