Wednesday 11 April 2018

অ্যালয় স্টিলের বিক্রির চেষ্টা আপাতত ব্যর্থ : নিরবিচ্ছিন্ন সতর্কতা ও সুদুরপ্রসারি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিলেন নেতৃবৃন্দ ।




দুর্গাপুর,১১ই এপ্রিল : পশ্চিম বঙ্গের আকাশে যখন রাজনৈতিক দুর্যোগের ঘনঘটা,জীবন-জীবিকার উপরে নেমে আসছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শানিত আক্রমন , ঠিক তখন দুর্যোগের মেঘ ভেদ করে আজ সকালে সূর্যের সোনালী আলো ঠিকরে পড়ল  দুর্গাপুরের  অ্যালয় স্টিল কারখানার মূল প্রবেশ পথে ইস্পাত শ্রমিকদের বিশাল জমায়েতে । দীপ্ত সূর্যের মত বেলা যত গড়িয়েছে জমায়েত আরও বৃদ্ধি পেয়েছে ,ঝাঁঝ বেড়েছে । অ্যালয় স্টিলের কেনার জন্য টেন্ডার ( গালভরা নাম এক্সপ্রেসন অফ ইন্টারেষ্ট ) জমা দেওয়ার আজই ছিল শেষ দিন । শ্রমিকদের কঠোর-কঠিন মুখ,চওড়া কাঁধ গুলো জানান দিল যে মাতৃভূমির সেবায় অসামান্য ভূমিকা পালন করে চলা রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইল এর নয়নের মনি দুর্গাপুরের  অ্যালয় স্টিল কারখানা বিক্রি রুখতে - জান কবুল । না । এই জেদি , জঙ্গি ও ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের সামনে কোন ক্রেতা শেষ দিনেও  ‘আগ্রহ প্রকাশ’ করার সাহস করে নি ।এখন দেখার বিষয় হল কেন্দ্রিয় সরকার অ্যালয় স্টিল কারখানার বিক্রির চেষ্টা ছেড়ে,অ্যালয় স্টিল কারখানা ও দুর্গাপুর স্টিল কারখানার আধুনিকিকরন ও সম্প্রসারনের জন্য নতুন বিনিয়োগ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করে কি না ।
বিশেষ ধরনের ইস্পাত উৎপাদনে বিশ্ব জোড়া খ্যাতি অ্যালয় স্টিল কারখানার । ক্রেতার তালিকায় রয়েছে ভারতের প্রায় সব ধরনের শিল্প সংস্হা থেকে বিদেশের সার্ণের গবেষনাগার । রেল থেকে শুরু করে ভাবার অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার , বফর্স কামানের গোলা তৈরি সহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম মায় সাবমেরিন তৈরি সব কিছুতেই লাগে প্রায় ৫০০-ধরনের বিশেষ ধরনের ইস্পাত উৎপাদক অ্যালয় স্টিল কারখানার ইস্পাত । হাতে প্রচুর অর্ডার । লোকসান সামান্য । আধুনিকিকরনের জন্য দরকার মাত্র ১১০৬ কোটি টাকা । সেইল  আধুনিকিকরন ও সম্প্রসারনের জন্য প্রায় ৭২,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও , অ্যালয় স্টিল কারখানার জন্য এক পয়সাও বিনিয়োগ করে নি । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার জন্য জুটেছে ছিটেফোঁটা । বিনিয়োগ নিয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই ।
ইতিমধ্যে কেন্দ্রের মোদি সরকারের নীতি আয়োগ স্ট্রাটেজিক ডিসইনভেষ্টমেন্টের নামে অ্যালয় স্টিল কারখানার বিক্রির কথা ঘোষনা করলে ইস্পাত শ্রমিকদের কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি ( সি.আই.টি.ইউ-আই.এন.টি.ইউ.সি-এ.আই. টি.ইউ.সি-বি.এম.এস-টি.ইউ.সি.সি- এ.আই. ইউ.টি. ইউ.সি ) মিলে “অ্যালয় স্টিল বাঁচাও – দুর্গাপুর ইস্পাত বাঁচাও –দুর্গাপুর বাঁচাও “ নামে যৌথ মঞ্চ গড়ে তোলে । অ্যালয় স্টিল বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল এবং অ্যালয় স্টিল ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের  দাবিতে যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে গত দুই বছরে প্রায় ২০০ টি আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করা হয়ছে । আন্দোলনের পাশে এসে অভাবনীয় সমর্থন জুগিয়েছেন সমাজের সর্ব স্তরের হাজার হাজার মানুষ । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রীড়াবিদরা আন্দোলনের পাশে এসে সংহতি দৌড়ে অংশ নিয়েছেন । গত বছরের এই ১১ই এপ্রিল তারিখে যৌথ মঞ্চের ডাকে অ্যালয় স্টিল কারখানা এই দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলে ৯২% শ্রমিক ধর্মঘটে অংশগ্রহন করেন ।
এক বছর পরে আরও এক ১১ই এপ্রিলে উত্তাল শ্রমিক জমায়েত কেন্দ্রের মোদি সরকারের অ্যালয় স্টিল কারখানা বিক্রির চক্রান্তের প্রথম ধাপের উপর যবনিকা টেনে দিল কিন্তু আত্মতুষ্টির লেশ মাত্র ছিল না নেতৃবৃন্দের গলায় বরং তারা আহ্বান জানালেন নিরবিচ্ছিন্ন সতর্কতার শ্রমিক ঐক্য আরও মজবুত প্রসারিত করে অ্যালয় স্টিল কারখানা ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের  দাবিতে বিলম্ব না করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহনের । শ্রমিকদের ব্যারিকেডে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়ালেন যৌথ মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী ও বিকাশ ঘটক,দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর সি.পি.ই.(এম) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় সহ অ্যালয় স্টিল কারখানা ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক নেতৃবৃ্ন্দ । বিশাল জমায়েতের ভীড় উপচে শিল্পনগরীর ব্যস্ততম রাস্তা সূর্য সেন সরনীর যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় ।








No comments:

Post a Comment