দুর্গাপুর,১১ই এপ্রিল
: পশ্চিম বঙ্গের আকাশে যখন রাজনৈতিক দুর্যোগের ঘনঘটা,জীবন-জীবিকার উপরে নেমে আসছে কেন্দ্র
ও রাজ্য সরকারের শানিত আক্রমন , ঠিক তখন দুর্যোগের মেঘ ভেদ করে আজ সকালে সূর্যের সোনালী
আলো ঠিকরে পড়ল দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল কারখানার মূল প্রবেশ পথে ইস্পাত শ্রমিকদের
বিশাল জমায়েতে । দীপ্ত সূর্যের মত বেলা যত গড়িয়েছে জমায়েত আরও বৃদ্ধি পেয়েছে ,ঝাঁঝ
বেড়েছে । অ্যালয় স্টিলের কেনার জন্য টেন্ডার ( গালভরা নাম এক্সপ্রেসন অফ ইন্টারেষ্ট
) জমা দেওয়ার আজই ছিল শেষ দিন । শ্রমিকদের কঠোর-কঠিন মুখ,চওড়া কাঁধ গুলো জানান দিল
যে মাতৃভূমির সেবায় অসামান্য ভূমিকা পালন করে চলা রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা
সেইল এর নয়নের মনি দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল
কারখানা বিক্রি রুখতে - জান কবুল । না । এই জেদি , জঙ্গি ও ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের
সামনে কোন ক্রেতা শেষ দিনেও ‘আগ্রহ প্রকাশ’
করার সাহস করে নি ।এখন দেখার বিষয় হল কেন্দ্রিয় সরকার অ্যালয় স্টিল কারখানার বিক্রির
চেষ্টা ছেড়ে,অ্যালয় স্টিল কারখানা ও দুর্গাপুর স্টিল কারখানার আধুনিকিকরন ও সম্প্রসারনের
জন্য নতুন বিনিয়োগ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করে কি না ।
বিশেষ ধরনের ইস্পাত
উৎপাদনে বিশ্ব জোড়া খ্যাতি অ্যালয় স্টিল কারখানার । ক্রেতার তালিকায় রয়েছে ভারতের প্রায়
সব ধরনের শিল্প সংস্হা থেকে বিদেশের সার্ণের গবেষনাগার । রেল থেকে শুরু করে ভাবার অ্যাটমিক
রিসার্চ সেন্টার , বফর্স কামানের গোলা তৈরি সহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম মায় সাবমেরিন
তৈরি সব কিছুতেই লাগে প্রায় ৫০০-ধরনের বিশেষ ধরনের ইস্পাত উৎপাদক অ্যালয় স্টিল কারখানার
ইস্পাত । হাতে প্রচুর অর্ডার । লোকসান সামান্য । আধুনিকিকরনের জন্য দরকার মাত্র ১১০৬
কোটি টাকা । সেইল আধুনিকিকরন ও সম্প্রসারনের
জন্য প্রায় ৭২,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও , অ্যালয় স্টিল কারখানার জন্য এক পয়সাও
বিনিয়োগ করে নি । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার জন্য জুটেছে ছিটেফোঁটা । বিনিয়োগ নিয়ে
রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই ।
ইতিমধ্যে কেন্দ্রের
মোদি সরকারের নীতি আয়োগ স্ট্রাটেজিক ডিসইনভেষ্টমেন্টের নামে অ্যালয় স্টিল কারখানার
বিক্রির কথা ঘোষনা করলে ইস্পাত শ্রমিকদের কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি ( সি.আই.টি.ইউ-আই.এন.টি.ইউ.সি-এ.আই. টি.ইউ.সি-বি.এম.এস-টি.ইউ.সি.সি- এ.আই.
ইউ.টি. ইউ.সি ) মিলে “অ্যালয় স্টিল বাঁচাও – দুর্গাপুর ইস্পাত বাঁচাও
–দুর্গাপুর বাঁচাও “ নামে যৌথ মঞ্চ গড়ে তোলে । অ্যালয় স্টিল বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল এবং অ্যালয় স্টিল ও
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের দাবিতে যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে গত দুই বছরে প্রায় ২০০
টি আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করা হয়ছে । আন্দোলনের পাশে এসে অভাবনীয় সমর্থন জুগিয়েছেন
সমাজের সর্ব স্তরের হাজার হাজার মানুষ । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রীড়াবিদরা আন্দোলনের
পাশে এসে সংহতি দৌড়ে অংশ নিয়েছেন । গত বছরের এই ১১ই এপ্রিল তারিখে যৌথ মঞ্চের ডাকে
অ্যালয় স্টিল কারখানা এই দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলে ৯২% শ্রমিক ধর্মঘটে অংশগ্রহন করেন
।
এক বছর পরে আরও এক ১১ই এপ্রিলে উত্তাল শ্রমিক জমায়েত কেন্দ্রের মোদি সরকারের অ্যালয় স্টিল কারখানা বিক্রির চক্রান্তের প্রথম ধাপের উপর যবনিকা টেনে দিল । কিন্তু আত্মতুষ্টির লেশ মাত্র ছিল না নেতৃবৃন্দের গলায় । বরং তারা আহ্বান জানালেন নিরবিচ্ছিন্ন সতর্কতার ও শ্রমিক ঐক্য আরও মজবুত ও প্রসারিত করে অ্যালয় স্টিল কারখানা ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের দাবিতে বিলম্ব না করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহনের । শ্রমিকদের
ব্যারিকেডে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়ালেন যৌথ মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী
ও বিকাশ ঘটক,দুর্গাপুর ( পূর্ব ) এর সি.পি.ই.(এম) বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় সহ অ্যালয় স্টিল
কারখানা ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক নেতৃবৃ্ন্দ । বিশাল জমায়েতের ভীড় উপচে
শিল্পনগরীর ব্যস্ততম রাস্তা সূর্য সেন সরনীর যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় ।
No comments:
Post a Comment