দুর্গাপুর,৭ই এপ্রিল
: গত প্রায় দু বছর ধরে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতির অন্যতম শিরোনামে রয়েছে দুর্গাপুরের ইস্পাত
শ্রমিকদের – অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট বাঁচাও, দুর্গাপুরের ইস্পাত বাঁচাও, রক্ষা করো শিল্পনগরী দুর্গাপুর
শীর্ষক যৌথ শ্রমিক আন্দোলন । কেন্দ্রিয় রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত উৎপাদক সংস্হা সেইলের অন্তর্ভুক্ত
দুর্গাপুর মিশ্র ইস্পাত ( অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ) বেসরকারিকরন রুখতে ও দুই কারখানার
আধুনিকিকরন-সম্প্রসারনের দাবিতে দুর্গাপুর মিশ্র ইস্পাত ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার
শ্রমিকরা অক্লান্ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন । গড়ে তুলেছেন কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন ( সি.আই.টি.ইউ-আই.এন.টি.ইউ.সি.-এ.আই.টি.ইউ.সি-বি.এম.এস-টি.ইউ.সি.সি-এ.আই.ইউ.টি.ইউ.সি)
গুলির যৌথমঞ্চ । তাদের লড়াই এর পাশে দাঁড়িয়েছে দুর্গাপুরের অন্যান্য কারখানার শ্রমিক
সহ সব অংশের মানুষ ।
এই যৌথ মঞ্চের অন্যতম
সংগঠক ও হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লিয়জ ইউনিয়নের অর্গানাইজিং সেক্রেটারী সীমান্ত চ্যাটার্জী
।
দুর্গাপুর ইস্পাত
কারখানার লোকো বিভাগে লোকো-চালকের পদে ঠিকাদারদের লোক নিয়োগের বিরোধীতা করে হিন্দুস্হান
স্টিল এমপ্লিয়জ ইউনিয়নের ( সি.আই.টি.ইউ) পক্ষ থেকে তীব্র শ্রমিক বিক্ষোভ সংগঠিত ও এর
তীব্র বিরোধিতা করে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার
নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে সীমান্ত চ্যাটার্জী কে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ
গত ৪ঠা এপ্রিল অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করে ও ঐ দিনই সাসপেনশনের বিধি অনুসারে
তাকে কারখানা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয় । পরের দিন ( ৫ই এপ্রিল ) তা কে মেজর চার্জসিট
ধরানো হয় ।
প্রসঙ্গতঃ, দুর্গাপুর
ইস্পাত কারখানার ‘লাইফ-লাইন’ নামে পরিচিত সমস্ত কারখানায় মাকড়শা জালের মত বিছিয়ে ২৫০
কিমি রেললাইনে উৎপাদন ও মাল-পরিবহনের জন যে লোকো-ট্রেনের ব্যবহার করা হয় তা চালান কারখানার
দক্ষ স্হায়ী শ্রমিকরা । সামান্যতম ত্রুটির থেকে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা । তাই বিধিবদ্ধ
কাজের নিয়ম ও নিরাপত্তা বিধি অনুসারে লোকো-অপারেটর কাজ কখনই অদক্ষ ঠিকা শ্রমিকদের দিয়ে
করানো যায় না বলে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লিয়জ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ।
কেন্দ্রিয় সরকারের বেসরকারিকরনের ‘ স্পৃহা’-য় উৎসাহিত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ
দিগবিদিগ জ্ঞান শূন্য হয়ে এহেন লোকো-অপারেটর কাজ আউটসোর্সিং করে অদক্ষ ঠিকা শ্রমিকদের দিয়ে করানোর প্রয়াসের বিরুদ্ধে
হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লিয়জ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই তীব্র বিরোধীতা করে আসছে
। বিরোধীতা করার জন্য ঠিকাদার সংস্হার পোষা গুন্ডাদের আক্রমনে ইউনিয়নের সহ সম্পাদক
দীপ চ্যাটার্জী ২০১৬ সালে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন ।
খুব সম্প্রতি দুর্গাপুর
ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ গোপনে কয়েক জন অদক্ষ
ঠিকা শ্রমিকদের লোকো-অপারেটর এর কাজে প্রশিক্ষন দেয় ও সার্টিফিকেট দেয় । যদিও এই ধরনের
কাজে সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের আদৌ আছে কিনা সেই নিয়েই প্রশ্ন আছে । এই
খবর চাউর হতেই হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লিয়জ ইউনিয়নের ( সি.আই.টি.ইউ) পক্ষ থেকে তীব্র
শ্রমিক বিক্ষোভ সংগঠিত ও এর তীব্র বিরোধিতা করে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ
কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার নেতৃত্ব দেন সীমান্ত চ্যাটার্জী ।
এদিকে সাসপেনসনের
খবর বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পরতেই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার দল-মত নির্বিশেষ প্রায় সমস্ত
শ্রমিক ক্ষোভে ফেটে পড়েন,আন্দোলন-বিক্ষোভ-প্রদর্শন-মিছিল শুরু হয়ে যায় । হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লিয়জ ইউনিয়নের ( সি.আই.টি.ইউ) এর পক্ষে
রথীন রায় ( সভাপতি ) ও বিশ্বরূপ ব্যানার্জী ( ওবি-কনভেনর ) শ্রমিকদের জঙ্গী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান । অন্যান্য
ট্রেড ইউনিয়ন গুলিও যৌথ অথবা একক আন্দোলনের কর্মসূচি নেয় । পরিস্হিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে
ওঠে । উৎপাদনে প্রভাব পরার আশংকা তৈরি হয় । এই অবস্হায় দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ
পিছু হটতে বাধ্য হয় । শ্রমিক নেতা সীমান্ত চ্যাটার্জীর সাসপেনশন তুলে নিতে বাধ্য হয়
। আজ তিনি কাজে যোগ দেন । আন্দোলনের এই জয়ের জন্য ও আগামী দিনে শ্রমিক ঐক্য আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে আজ শ্রমিক নেতা সীমান্ত চ্যাটার্জীর কর্মস্হল র’হ্যান্ডলিং
বিভাগে ( আর.এম.এইচ.পি) দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কেন্দ্রিয় মিছিল ও শ্রমিক সমাবেশ
হয় । সমাবেশে হিন্দুস্হান স্টিল এমপ্লিয়জ ইউনিয়নের ( সি.আই.টি.ইউ) এর ওবি-কনভেনর বিশ্বরূপ
ব্যানার্জী দুর্গাপুর মিশ্র ইস্পাত ( অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট ) বেসরকারিকরন রুখতে, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও দুর্গাপুর মিশ্র ইস্পাত ( অ্যালয়
স্টিল প্ল্যান্ট ) আধুনিকিকরন-সম্প্রসারন এবং আউটসোর্সিং বন্ধের দাবিতে আন্দোলন আরও
তীব্র করার ডাক দিয়েছেন ।
No comments:
Post a Comment