Monday 25 September 2023

আরএফআইডি-বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে কর্তৃপক্ষের একতরফা সার্কুলারের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় সারাদিন ধরে প্রবল শ্রমিক বিক্ষোভ।

 


দুর্গাপুর,২৫শে সেপ্টেঃ : আজ সকাল থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় সিআইটিইউ সহ সাতটি কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ আহ্বানে প্রবল শ্রমিক বিক্ষোভ চলে। সাতটি কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ যৌথভাবে আগামী কালও একই ভাবে যৌথ বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়েছে। আরএফআইডি-বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষের একতরফা সার্কুলার জারী করায় শ্রমিকদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।এই সার্কুলারে ২৫শে সেপ্টেঃ থেকে ইস্পাত শ্রমিকদের আরএফআইডি-বায়োমেট্রিক হাজিরার উদ্দেশ্যে ছবি তোলার ( ফেস রেকোগনিশন) নির্দেশ জারী করা হয়। আরএফআইডি-বায়োমেট্রিক হাজিরার সম্পূর্ন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আছে বেসরকারী সংস্থার হাতে। সাতটি কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ইউনিয়ন গুলির সাথে আলোচনা ছাড়াই কিভাবে এই সার্কুলার কর্তৃপক্ষ জারী করেছে? কর্তৃপক্ষ ইউনিয়ন গুলির সাথে আলোচনা না করে আরএফআইডি-বায়োমেট্রিক হাজিরার সহ বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন গুলির সাথে আলোচনা না করে এগোবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

আজ সকালে সাতটি কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সহ শ্রমিকরা প্রথমে কারখানার মেইন গেটে অর্জুন মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখান। তারপরে মিছিল করে কারখানার ড্রইং অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগে যান। এখানে কারখানার ভেতরে কর্মরত শ্রমিকদের ছবি তোলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার অস্থায়ী দফতর তৈরি হয়েছে।সেখানে মিছিল পৌঁছালে বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। একইভাবে কারখানার প্রশাসনিক ভবনে ( ইস্পাত ভবন),যেখনে কারখানার বাইরে কর্মরত শ্রমিকদের ছবি তোলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার অস্থায়ী দফতর তৈরি হয়েছে,সেখানেও বিক্ষোভ চরমে ওঠে। উভয় জায়গায় বক্তব্য রাখেন সাতটি কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখেন বিশ্বরূপ ব্যানার্জি,সীমান্ত চ্যাটার্জি (সিআইটিইউ),স্নেহাশিস ঘোষ(আইএনটিটিইউসি),রজত দীক্ষিত (আইএনটিইউসি),শম্ভূ প্রামানিক(এআইটিইউসি),সুকান্ত রক্ষিত(এইচএমএস),মানব চ্যাটার্জি(বিএমএস) ও বিশ্বনাথ মন্ডল (এআইইউটিইউসি)।বক্তব্য রেখে নেতৃবৃন্দ বলেন যে যখন আধার থেকে বায়োমেট্রিক তথ্য চুরি করে সাইবার অপরাধীরা প্রায় প্রতিদিন সারা দেশের সাধারন মানুষের টাকা লুঠ করছে অথবা বেআইনী কাজে ব্যবহার করে অপরাধ সংগঠিত করে সাধারন মানুষের ওপর দায় চাপিয়ে আদালতে গিয়ে সাধারন মানুষ নিজেদের নিরপরাধ প্রমান করতে সর্বসান্ত হতে হচ্ছে তখন প্রায় চারশ কোটি টাকা খরচ করে বেসরকারী সংস্হার নিয়ন্ত্রনাধীন শ্রমিকদের “নজরবন্দী” করার জন্য ইলেক্ট্রনিক সারভাইলেন্স ব্যবস্হা চালু করতে চাইছে । এই অবস্থায় দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষের এহেন উদ্যোগে স্বভাবতই শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও আশংকা তৈরি হয়েছে। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা লাগাতার সর্বোচ্চ উৎপাদন ও উৎপানশীলতা বজায় রেখে ধারাবাহিকভাবে মুনাফা করলেও কমছে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা।নতুন করে স্থায়ী শ্রমিকের নিয়োগ প্রায় বন্ধ। এই বিশাল সাফল্যের পরেও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও তদুপরি সেইল-আরআইএনএল এর শ্রমিকরা পুর্নাঙ্গ বেতন-চুক্তি,৩৯ মাসের এরিয়ার সহ বহু ন্যায্য বকেয়া পাননি,ঠিকা শ্রমিকরা এক পয়সা পাননি, ঠিকা শ্রমিকদের বেতন-চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকীকরন-সম্প্রসারনের কাজ অবিলম্বে শুরু করার বদলে কর্তৃপক্ষের এ হেন কাজের ফলে কারখানার স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ কে বিঘ্ন করছে। আদালতের বিভিন্ন রায়ে বায়োমেট্রিক তথ্য জোর করে নেওয়ার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট রায় আছে। অথচ কর্তৃপক্ষ জোর খাটিয়ে শ্রমিকদের বাধ্য করতে চাইছে । কিন্তু সাতটি কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ পরিস্কার বক্তব্য রেখে জানিয়ে দিলেন যে শ্রমিকরা কোন ভাবেই এই জোর-জুলুমের সামনে মাথা নত করবেন না। কর্তৃপক্ষ জোর-জুলুমের কোন রকম চেষ্টা করলে তৎক্ষনাত সাতটি কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ যৌথ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিরোধে নামবেন। আগামীকাল কারখানার ইডি(ওয়ার্কস) এর দফতরেও যৌথ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন সাতটি কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।

 











































No comments:

Post a Comment