দুর্গাপুর,১২ই নভেম্বর : বামপন্হী গনসংগঠন গুলির পক্ষ থেকে রুটি-রুজি-কারখানা বাঁচানো, গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার
ও দূর্নীতি-মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে বার্তা দিয়ে
নভেম্বর মাস জুড়ে পদযাত্রা আজ ইস্পাতনগরী সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলে হোল । শেষ বিকালে
সন্ত্রাসবিদ্ধ হাজরা পাড়া থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রার শুরু থেকেই রাস্তার পাশে মানুষের ভীড় ও আগ্রহ লক্ষনীয় ছিল।
হাজরা পাড়া থেকে পদযাত্রা প্রথমে শোভাপুর গ্রাম ও পরে বিজরা গ্রামে যায় । পদযাত্রা
যত এগোয় ,তত মানুষ বেশি সংখ্যক মানুষ যোগদান করেন । তৃণমূলের শাসন যে গরীব মানুষের স্বার্থে নয় , সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে দুর্গাপুর । দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের তৃণমূল বোর্ডের ধারাবাহিক বঞ্চনার শিকার হয়েছে দুর্গাপুরের গরীব মানুষ । বিশেষতঃ বস্তি ও সংলগ্ন অঞ্চলে উন্নয়ন শিকে উঠেছে । ছোটখাটো কিছু রাস্তাঘাট ও নীল-সাদা প্রলেপ লাগানো ছাড়া পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন এর জন্য কোন সদিচ্ছা বিদায়ী তৃণমূল বোর্ডের ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে । বামফ্রন্টের সময় গরীব মানুষের জন্য যে ধারাবাহিক উন্নয়নের কাজ চলছিল , তার সাক্ষী আছেন ইস্পাতনগরী সংলগ্ন ২নং ওয়ার্ডের মানুষ । শোভাপুর – বিজড়া-মহুয়াবাগান – হাজরা পাড়া অঞ্চল নিয়ে গঠিত কৃষি প্রধান ২ নং ওয়ার্ড উন্নয়নের স্বাদ পায় বামফ্রন্টের সময় । বামফ্রন্ট পরিচালিত তৎকালীন পৌর বোর্ডের সময়ে এই অঞ্চলের রাস্তাঘাট এর অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয় । পিচ ও ঢালাই এর রাস্তা এখনও সমান ভাবে মজবুত । নল-বাহিত পানীয় জল ও পাকা ড্রেনের
ব্যবস্হা করা হয় । গরীব মানুষের আবাসন প্রকল্প প্রায় দুই শত পাকা বাড়ী তৈরি হয় । বিজড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মনোরম ও তাক লাগানো বিল্ডিং তৈরি হয় যা আজও ওয়ার্ডের মানুষের গর্ব । সেচের জন্য তৈরি হয় বক্সীর বাঁধ ।
তৃণমূলের আমলে নতুন রাস্তা-ঘাট তৈরি বন্ধ । ইস্পাতনগরীর যাতায়াতের পিচ রাস্তা ভেঙ্গে চৌচির । সংস্কারের অভাবে বক্সীর বাঁধ বেহাল । বিধবা-বার্ধক্য ভাতা অনিশ্চিত । বাম সমর্থক হওয়ার জন্য দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও আই-কিউ সিটি প্রকল্পের কাজ থেকে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন । অঞ্চলের মানুষের ক্ষোভ চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছে আই-কিউ সিটি প্রকল্প নিয়ে তৃণমূলের চূড়ান্ত দলবাজীর বিরুদ্ধে ।
বিগত ২০০৭ সালে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে তৎকালিন দুর্গাপুর-১ বিধানসভার বিধায়ক ও পঃ বঙ্গের বিদ্যুৎমন্ত্রী প্রয়াত মৃণাল ব্যানার্জীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় , ১০০ একর জায়গার উপরে তিনশো বেডের হাসপাতাল সহ মেডিক্যাল কলেজ , নার্সিং ট্রেনিং কলেজ ও বিশাল আবাসন প্রকল্প নিয়ে , আই.কিউ সিটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয় । ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন করেন তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন । শুরুতে প্রকল্পের নাম ছিল ‘ নলেজ সিটি ‘ । রাজ্য সরকার অধিগৃহীত ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উপর ন্যস্ত এই জমিতে ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্টের সময় চাষ করার অধিকার পান স্হানীয় গ্রাম ও বস্তিবাসি । এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে তাদের অবস্হার উন্নতি হবে এই বিবেচনা করে স্বেচ্ছায় বিনা ক্ষতিপূরনে তারা জমির অধিকার ত্যাগ করেন । প্রকল্পের নির্মান কাজ শুরু হলে গ্রাম উন্নয়ন কমিটির মাধ্যমে জমিদাতা পরিবারের সদস্যদের নির্ম্মান কাজে শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত করা হয় । পরবর্তীকালে গ্রাম ও বস্তির অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা কাজ পান । প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ ও গ্রাম উন্নয়ন কমিটির পারস্পরিক সহযোগিতায় প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগোতে থাকে । কিন্তু ২০১১ সালে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন ঘটে । মমতা ব্যানার্জী নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার গঠিত হলে সমগ্র দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সাথে সাথে আই.কিউ সিটি প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনে কালো দিন নেমে আসে । তৃণমূলীরা কর্মরত জমিদাতা শ্রমিকদের অধিকাংশ কে কাজ থেকে উচ্ছেদ করে এবং বহিরাগতদের নিয়োগ করে নিজেরা ফুলে-ফেঁপে ওঠে । শুধু তাই নয় , হটাৎ একদিন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী উপস্হিত হয়ে পুরনো ভিত্তিপ্রস্তর সরিয়ে ২০০৭ সাল থেকে চালু হওয়া আই.কিউ সিটি প্রকল্পের পুনরায় ‘ শিলান্যাস ‘ করেন । এই সুযোগে আই.কিউ সিটি প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ দাঁত-নখ বার করে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে । প্রতিবাদ করলে জুটছে কর্তৃপক্ষের গলাধাক্কা ও তৃণমূলী দুষ্কৃতিদের রক্তচক্ষু । অন্যদিকে,বিজরা ও শোভাপুর গ্রামের জনসংখ্যার বড় অংশই কৃষি উপরে নির্ভরশীল । বর্ষায় বৃষ্টিপাত কম হওয়া বেশির ভাগ জমিতে চাষ হয় নি । সংস্কারের অভাবে বক্সির বাঁধ অকেজ । সংস্কারের উদ্যোগ নেই । সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিজরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট ভাতা –ঋন মিলছে না । পদযাত্রা থেকে ওঠা আওয়াজ– চোর তাড়াও,গ্রাম বাঁচাও , আরো জোরে কেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বুঝে নিতে অসুবিধা হচ্ছে না । গ্রামাঞ্চল জেগে উঠছে । তৃণমূল – বিজেপি কোনঠাসা হচ্ছে । পদযাত্রার শেষে জনসভায় বক্তব্য রাখেন সীমান্ত চ্যাটার্জি । পদযাত্রায় সামিল ছিলেন মজহর মিদ্যা,চিন্ময় গোপ,স্বপন সরকার,আল্পনা চৌধুরী,শেলি মন্ডল,বিজয় সাহা,নিমাই ঘোষ,বিশ্বরূপ ব্যানার্জি,সুবীর সেনগুপ্ত প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment