Saturday 19 November 2022

পর্ব – ২ ইস্পাতনগরীর সমবায় সমিতি গুলি কোন পথে ?- ঐতিহ্যমণ্ডিত স্টীল পিপলস্ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন শ্রমিক-কর্মচারীরা ।

 


দুর্গাপুর,১৯শে নভেঃ : নিখিল ভারত সমবায় সপ্তাহ ( ১৪-২০শে নভেঃ ) পালনের মাঝেই,ইস্পাতনগরীর সমবায় আন্দোলনের স্নায়ু কেন্দ্র বেনাচিতি হাউসের নিষ্প্রভ চেহারা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । বেনাচিতি হাউসে রাজ্যের সুবিখ্যাত ডিএসপি এমপ্লয়িজ কনজিউমার কোঃ অপারেটিভ ও ডিএসপি এমপ্লয়িজ ক্রেডিট সোসাইটি এবং স্টীল পিপলস্ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক গড়ে উঠেছে । মাত্র ৬১০ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু হওয়া ক্রেডিট সোসাইটি থেকে আজ কয়েক শত কোটি টাকার সঞ্চয়নে পরিনত হয়েছে দুর্গাপুর স্টীল পিপলস্ কো-অপারেটিভ সমবায় ব্যাঙ্ক । ১৯৯৮ সালে গড়ে ওঠে দুর্গাপুর স্টীল পিপলস্ কো-অপারেটিভ সমবায় ব্যাঙ্ক । গত ২০১২ সালে গুণ্ডা দিয়ে ভোট লুঠ করে সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন কে প্রহসনে পরিনত করে পরিচালন সমিতির  ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। সেই কলঙ্কের ইতিহাস দুর্গাপুরবাসীরা জানেন। ২০১৭ সালে সেই ব্যাঙ্কে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। ৪ ও ৫ই সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র তোলার দিন ও ১৫ই অক্টোবর নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয়। কিন্তু ৪ তারিখ সকালে মনোনয়নপত্র তোলা কে ঘিরে তৃণমূলের দুই দল বিবাদে জড়ালে , উৎসবের মরশুমে পুলিশ পাওয়া যাবে না এই অজুহাতে এ.আর.সি.এস-র থেকে তড়িঘড়ি করে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ জারী করা হয় । ২০১৭ সালের  ৯ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর স্টীল পিপলস্ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের তৎকালীন বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়।নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ পূর্তির আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করে নতুন বোর্ড গঠন করার কথা ছিল । কিন্তু এক্ষেত্রে করা হয় নি। মেয়াদ শেষে দুর্গাপুরের গর্বের এই ব্যাঙ্ক সরকার নির্দেশিত  অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের অধীনে চলে যায়। এই অবস্হা এর আগে কখনও এই ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে ঘটে নি ।এখানেই শেষ নয়।গত বছর দুর্গাপুরের মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকারের উপর আবারও আঘাত হানে তৃণমূল। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গাপুরের সুবিখ্যাত স্টীল পিপলস্ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে তৃণমূল নেতা ও ব্যবসায়ী নিখিল নায়েক কে প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত করে দেওয়া হয় । কিন্তু বছর ঘুরতেই তিনি পদত্যাগ করলে,এআরসিএস এর পক্ষ থেকে সরকারি আমলা ত্রিদিব মণ্ডল কে কে প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত করে দেওয়া হয় । তিনি ইতিমধ্যে দায়িত্ব গ্রহন করেছেন । কিন্তু ৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও,গনতান্ত্রিক রীতি মেনে নির্বাচিত বোর্ড গঠনে কোন পদক্ষেপ নিতে রাজি নয় রাজ্য সরকার । এদিকে বোর্ডে থাকাকালীন প্রত্যক্ষ ভাবে,পরে প্রশাসকের মাধ্যমে পরোক্ষ ভাবে তৃণমূলের ক্রমাগত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে ব্যাঙ্কের অর্থনৈতিক স্বাস্হ্য ক্রমশঃ খারাপ হচ্ছে বলে ডিএসপি ক্রেডিট সোসাইটি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সিআইটিইউ )-এর পক্ষ থেকে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে । ২০২১-২২ আর্থিক বর্ষে ব্যাঙ্কের এনপিএ ( অণুৎপাদক সম্পদ ) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৩৫% ( ১৫ কোটি ৯ লক্ষ টাকার কিছু বেশি)। ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষে ব্যাঙ্কের এনপিএ ( অণুৎপাদক সম্পদ ) ছিল ৪% ( ৩ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা) । ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষের তুলনায় ইস্পাত কর্মি-আধিকারিক ব্যাঙ্ক গ্রাহকের সংখ্যা ২০২১-২২ আর্থিক বর্ষে কমেছে। কিন্তু অন্যান্য গ্রাহকদের সংখ্যা এই সময়ে আড়াই হাজার থেকে বেড়ে ছয় হাজার পেরিয়েছে। ক্রেডিট সোসাইটির হলিডে হোম ছিল আট।এখন কমে হয়েছে মাত্র চার । ব্যাঙ্কের কর্মচারী-আধিকারিকদের সংখ্যা এই সময়ে ষাট থেকে হ্রাস পেয়ে হয়েছে উনপঞ্চাশ। অথচ কাজ বেড়েছে বহুগুন। কিন্তু নির্বাচিত বোর্ড না থাকায় নতুন কর্মি নিযুক্তি সহ ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এর মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ডিএসপি ক্রেডিট সোসাইটি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সিআইটিইউ )-এর পক্ষ থেকে রবি বিকাশ গুপ্ত । ব্যাঙ্কের হাল ফেরাতে গনতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অবিলম্বে নির্বাচন করতে হবে বলে তিনি দাবি জানিয়েছেন। সমবায় আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতৃত্ব ও ডিএসপি কোঃ অপারেটিভ সোসাইটি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ( সিআইটিইউ ) এর সম্পাদক সীমান্ত তরফদার অভিযোগ করেছেন যে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় প্রায় ১৫০ সমবায় সংস্হায় নির্বাচন না করে রাজ্য সরকার প্রশাসক বসিয়ে পরিচালনা করছে। সমবায় আন্দোলনের স্বার্থে তিনি অবিলম্বে সমস্ত সমবায় সংস্হায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment